শনিবার , ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ | ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আইন না মেনে কাঁকড়া শিকার, নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক উৎস

Paris
জানুয়ারি ২৬, ২০১৯ ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সমুদ্রের লবস্টার কিংবা মাছের খামারের গলদা চিংড়ির মতোই সুস্বাদু, রসনা তৃপ্তিকর খাবার হচ্ছে ক্র্যাব ফ্রাই বা কাঁকড়া ভাজা। আছে এতে শরীরের জন্য উপকারী প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদানও। চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোতে গত এক দশকে এই খাবার হয়ে উঠেছে পর্যটকসহ সবার কাছে খুব জনপ্রিয়। তাই বৃহত্তর চট্টগ্রামে প্রতিদিনই বাড়ছে কাঁকড়ার বিপুল চাহিদা।

চকরিয়া, মহেশখালীসহ চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে কাঁকড়া উত্পাদনে গড়ে উঠেছে সীমিতসংখ্যক খামার। এগুলো থেকেই বেশিরভাগ কাঁকড়ার যোগান হয়ে থাকে বৃহত্তর চট্টগ্রামের পর্যটন স্পট ও অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে। তার উপর ভালো দাম মিলে বলে কাঁকড়া রপ্তানিতেও উত্পাদনকারীরা বেশ তত্পর। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পারিবারিক ও ঘরোয়া রান্নায় সুস্বাদু কাঁকড়া ভাজি ও রান্না করা বিভিন্ন পদ পছন্দ করেন এমন সাধারণ মানুষের সংখ্যাও গত এক দশকে বিপুলসংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে হাটবাজারে জনসাধারণের অনেককে মাছ-মাংস, তরিতরকারির পাশাপাশি কাঁকড়া কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন এমন দৃশ্যও আজকাল প্রায়শ চোখে পড়ছে। বাজারে প্রতিদিনই কাঁকড়া মিলবে এমন নয়।

তবে চাহিদা বৃদ্ধির মুখে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলা সদর এমনকি তিন পার্বত্য জেলাতেও প্লাস্টিকের বস্তা ও বাঁশের ঝুড়ি বোঝাই হয়ে ট্রাক ও বাসের পিঠে করে বিপুল পরিমাণ কাঁকড়ার চালান যেতে দেখা যাচ্ছে। কাঁকড়া জীবন্ত থাকে বিধায় যেসব পাইকারি বিক্রেতারা এসব নিয়ে যান, এগুলো দীর্ঘক্ষণ সংরক্ষণে তাদের কোনো ঝামেলা নেই। বাস-ট্রাক থেকে নামানোর পরপরই স্থানীয় খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে কাঁকড়ার চালান কিনে নিতে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। কিন্তু চাহিদা বৃদ্ধির মুখে কাঁঁকড়ার চালানে কাঁকড়া কম আসে বলেই জানালেন বিক্রেতারা। কিন্তু এসব কাঁকড়া খামারের কাঁকড়া নয়। এগুলো ধরে আনা হচ্ছে বাঁশখালী, চকরিয়া, মহেশখালী, টেকনাফসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন সমুদ্র উপকূলীয় সামুদ্রিক চ্যানেল, খাল ও লবণাক্ত পানির মাছের খামার থেকে। এগুলো এক ধরনের সামুদ্রিক প্রজাতির কাঁকড়া বলেই জানালেন সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষকরা। তারা জানালেন, ১৯৯৯ সালে জারি করা পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন অনুসারে এ ধরনের কাঁকড়া ও অন্যান্য প্রাণী শিকার নিষিদ্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকাগুলোতে।

চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালির মোড়, পাথরঘাটা, হাজারি গলি, সদরঘাট, ফিরিঙ্গীবাজার, কালুরঘাট, পতেঙ্গা, কাট্টলি, ফইল্যাতলিসহ বিভিন্ন স্থানে সমুদ্র উপকূল থেকে শিকার করে আনা সামুদ্রিক কালো কাঁকড়া বিক্রি হতে দেখা যায়।

নগরীর হাজারি গলিতে আলাপ হচ্ছিলো কাঁকড়া বিক্রেতা টিপু বড়ুয়া ও আদিব বড়ুয়ার সাথে। তারা আকার-আকৃতিভেদে ছোট কাঁকড়া প্রতি কেজি ২৫০ টাকা এবং অপেক্ষাকৃত বড় কাঁকড়া প্রতি কেজি ৩৮০ টাকা দরে বিক্রি করছিলেন। তারা দুইজনই খুচরা বিক্রেতা। কাছেই বসে থাকতে দেখা গেলো মহেশখালি থেকে কাঁকড়া নিয়ে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী রঞ্জন দাসকে। রঞ্জন সপ্তাহে দুই তিনবার কাঁকড়ার চালান নিয়ে চট্টগ্রাম আসে বলে জানালো। একই এলাকায় আরো জনা বিশেক কাঁকড়া শিকারি ও পাইকারি ব্যবসায়ী কাঁকড়ার চালান নিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন স্থানে যায় বলে রঞ্জন দাস জানালেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সাইন্সেস এন্ড ফিশারিজ এর ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোঃ রাশেদ উন নবী  বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সামুদ্রিক কাঁকড়ার চাহিদা অনেক বেড়েছে। তবে আইন অনুসারে সামুদ্রিক কাঁকড়ার শিকার ও বিক্রি আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উপকূলীয় এলাকায় কিছু কিছু কাঁকড়া উত্পাদনের খামার গড়ে উঠেছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (টেকনিক্যাল) বদরুল হুদা বলেন, ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূলীয় কিছু এলাকায় কাঁকড়াসহ সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণী শিকারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে- টেকনাফ পেনিনসুলা, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও সেন্টমার্টিন। এসব এলাকাকে সে সময় ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়।

সর্বশেষ - জাতীয়