আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন কমিশন দাবি

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে  স্বাধীন ‘পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ (পিসিআইসি) গঠন করতে সরকারকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

আইন ও স্বরাষ্ট্র সচিব এবং পুলিশ মহাপরিদর্শককে এ আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ৫৩ জন আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির আজ বৃহস্পতিবার এ নোটিশ পাঠিয়েছেন। নোটিশ পাওয়ার চার  সপ্তাহের মধ্যে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে নোটিশে বলা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের তথ্য নিয়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারি  থেকে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন গণম্যাধ্যমে প্রকাশিত ৫০০টি ঘটনা তুলে ধরে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

নোটিশের সঙ্গে ওই ঘটনাগুলোর ৯০৮ পৃষ্ঠা সম্বলিত একটি নথি সংযুক্ত আকারে দেওয়া হয়েছে। এতে পুলিশ বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য ও ইতিহাস, পুলিশের গৌরবময় অর্জন ও পুলিশ সদস্যদের শৃঙ্খলা বিধানের আইনি কাঠামো তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যমান আইনি কাঠামোর দুর্বলতা এবং পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন তদন্ত কমিশনের অভাবের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত পুলিশ অধ্যাদেশ-২০০৭ এর ৭১ দফায় ‘পুলিশ কমপ্লেইন্ট কমিশন’ গঠনের বিধান ছিল। কিন্তু সরকার আজ পর্যন্ত তা কার্যকর করেনি।

নোটিশের বিষয়ে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ওই ৫০০টি ঘটনা পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য বিচারবহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে মৃত্যু, হেফাজতে নির্যাতন, গুম, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, খুন, মারধর, হুমকি ও হয়রানি, ধর্ষণ, ইভটিজিং ও নারী নির্যাতন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও লুটপাট, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, জমি দখল ও সম্পত্তি বিনষ্টকরণ, মাদক ব্যবসা ও উদ্ধারকৃত মাদক আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারী আটক ও আটক বাণিজ্য, অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া ও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া, মামলা নিতে গড়িমসি ও মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ, মিথ্যা ও পাল্টা মামলা দিয়ে হয়রানি, তদন্তে গাফিলতি, হয়রানি ও ঘুষ গ্রহণ, সাংবাদিক নির্যাতন, কর্তব্যে অবহেলা, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিনষ্টকরণ ও আসামীদের নাম বাদ দেওয়া এবং নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতিতে দুর্নীতিসহ মোট ১৮ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া নোটিশে প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

শিশির মনির বলেন, নোটিশে দাবি বলা হয়েছে, বর্তমান আইনি কাঠামোতে পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তভার পুলিশের ওপরই ন্যস্ত। ফলে বিচারের প্রাথমিক ধাপ ‘তদন্ত’ সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয় না।

শিশির মনির আরো বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইনে পুলিশ কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ তদন্ত করতে আলাদা কর্তৃপক্ষ বা কমিশন গঠনের জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ডেনমার্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই স্বাধীন ও স্বতন্ত্র তদন্ত কমিশন কার্যকর আছে। ভারতের ২৭টি অঙ্গরাজ্যে ‘পুলিশ কমপ্লেইন্ট অথরিটি’ রয়েছে।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ