সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
সবার জন্য নিরাপদ ডিম ও মুরগির মাংসের জোগান নিশ্চিত করতে যৌথভাবে কাজ করছে সরকার ও পোলট্রি শিল্প। পোলট্রি বিজ্ঞান সম্পর্কে খামারিদের জ্ঞান ও প্রশিক্ষণের অভাব এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে খামার না করার কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার হচ্ছে।
তবে এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘পোলট্রি ফর হেলদি লিভিং’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। বৈঠকে জানানো হয় আগামী ৫-৯ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক পোলট্রি শো ও সেমিনার।
ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ওয়াপসা-বিবি) শাখার সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের (ডিএলএস) মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ লাইভস্টক রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (বিএলআরআই) মহাপরিচালক ড. নাথুরাম সরকার। বক্তব্য রাখেন ওয়াপসা-বিবির সহ-সভাপতি ইয়াসমীন রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক মো. মাহাবুব হাসান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও ওষুধের দোকানে গেলেই অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যাচ্ছে তেল লবণের মতো। এটি বন্ধ করতে হবে। ড্রাগ অথরিটিকে এ ব্যাপারে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, প্লাস্টিকের ডিম নিয়ে যা হচ্ছে তা প্রচারণা ছাড়া আর কিছুই নয় বলেও মন্তব্য করেন ডা. ভৌমিক। তিনি আরও বলেন, এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে সরকার, বেসরকারি উদ্যোক্তা ও খামারিদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. নাথুরাম সরকার বলেন, তথ্য বিভ্রাটের কারণে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এতে সাধারণ মানুষ ডিম ও মুরগির মাংস খাওয়া কমিয়ে দিতে পারে। তাই সংবাদ পরিবেশনের আগে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন অহেতুক আতঙ্কের কারণ না হয়।
সভাপতির বক্তব্যে শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, নিরাপদ পোলট্রি উৎপাদনে এখন অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ২০২৪ সালের মধ্যে শতভাগ অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদন করবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, শুধু ভাত খেয়ে উন্নত জাতি গঠন করা সম্ভব নয়। পুষ্টির চাহিদা পূরণে ডিমের কোনো বিকল্প নেই। সরকারের সহযোগিতা পেলে ২০২১ সালের মধ্যে পোলট্রি ফিড নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না এবং ২০২৪ সালের মধ্যে পোলট্রি পণ্য রফতানি শুরু করা সম্ভব হবে।
ইয়াসমীন রহমান বলেন, দারিদ্র্য, অপুষ্টি, মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমাতে, গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করতে এবং বেকার যুবকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হলে পোলট্র্রির কোনো বিকল্প নেই। সেমিনার ও শো সম্পর্কে মাহাবুব হাসান জানান, আগামী ৫-৬ মার্চ ঢাকার লা মেরিডিয়ান হোটেলে ‘আন্তর্জাতিক পোলট্রি সেমিনার’ এবং ৭, ৮ ও ৯ মার্চ বসুন্ধরা কনভেনশন সিটিতে ‘১১তম আন্তর্জাতিক পোলট্রি শো’ অনুষ্ঠিত হবে। সেমিনারে মোট ৯৯টি সায়েন্টিফিক পেপার উপস্থাপন করা হবে। পোলট্রির পুষ্টি ও ব্যবস্থাপনা এবং পোলট্রি ব্রিডিং ও জেনেটিকস বিষয়ে এমন ১৩ জন বিজ্ঞানী ও গবেষক এবার বাংলাদেশে আসছেন যাদের ইউরোপ-আমেরিকার অনেক বড় বড় পোলট্রি শোতেও পাওয়া যায় না। বিশ্বের ২২টি দেশের প্রায় ২৩০টি কোম্পানি এবারের পোলট্রি শো’তে অংশ নিচ্ছে।
ওয়াপসা-বিবি’র সহ-সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ভোক্তাসাধারণের সঙ্গে পোলট্রির সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে এ বছর ‘ পোলট্রি কুকিং কনটেস্ট’, ‘ডিম সেলফি কনটেস্ট’ ও চিকেন সেলফি কনটেস্ট’-এর আয়োজন করা হয়েছে- অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদনকে বেগবান করতে ‘পোলট্রি ফার্মারস এনলাইটেনমেন্ট প্রকল্প’ এবং যুব সমাজকে পোলট্রি ব্যবসায় আগ্রহী করতে ‘ইয়ুথ এন্টারপ্রেনিয়রশিপ প্রজেক্ট’ এর উদ্বোধন করা হবে ৭ মার্চ। সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে ফ্রি শাটল বাস। পোলট্রি শো সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। গোলটেবিল বৈঠক শেষে প্রেস ক্লাবের সামনে রিকশাচালকদের মাঝে ডিম ও মুরগির মাংসের স্লোগান সংবলিত টি-শার্ট বিতরণ করা হয়।
