অল্প বয়সে ‘জটিল’ জীবন, আত্মহত্যায় বেশি ঝুঁকছে স্কুল শিক্ষার্থীরা

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

নবম শ্রেণির ছাত্র জাহিদুল ইসলাম শাকিব। বয়স ১৫ পেরিয়ে সবেমাত্র ১৬ বছর। পড়াশোনায় মনোযোগ কম। বেশি আগ্রহ বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরিতে, যা পছন্দ করতেন না বাবা-মা। তাদের ইচ্ছা, ছেলে পড়ালেখা করে ভালো কিছু করবে। পড়াশোনার জন্য প্রায়ই ছেলেকে বকাঝকা করতেন বাবা-মা। গত ২৮ মে মায়ের বকা খেয়ে অভিমানে আত্মহননের পথ বেছে নেয় সে। নিজ কক্ষে সিলিংফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস নেয় শাকিব।

শুধু বনশ্রী ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী শাকিব নয়, তার মতো অনেক কিশোর-তরুণ ‘তুচ্ছ’ কারণে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন। সম্প্রতি এমন ঘটনা বাড়ছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৩৬১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে ২৯৫ জনই স্কুল-মাদরাসা ও কলেজের শিক্ষার্থী, অর্থাৎ বয়সে কিশোর-তরুণ।

আঁচলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৫৩২ শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যু হয় আত্মহত্যায়। গত বছরের একই সময়ে (জানুয়ারি-আগস্ট) ৩৬৪ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। চলতি বছরের আট মাসে প্রায় একই সংখ্যক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা উঠে আসে প্রতিবেদনে। আঁচলের গবেষক দল বলছে, কারণ বিবেচনায় তারা দেখেছেন, অভিমান, প্রেমঘটিত, পারিবারিক বিবাদ, যৌন হয়রানি এবং পড়াশোনার চাপ ও ব্যর্থতার কারণে অকাল মৃত্যুর পথে পা বাড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

# মৃত্যু নয়, ভাঙতে ভাঙাতে হবে মান-অভিমান
# আত্মহত্যা বেশি ঢাকায়, সহায়ক পরিবেশ সংকট
# হটলাইন চালু জরুরি, রাখতে হবে দক্ষ বিশেষজ্ঞ
# অকাল মৃত্যু রুখতে বড় ভূমিকা গণমাধ্যমের

তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের ১০ তারিখের মধ্যে সারাদেশে আরও অন্তত ১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই রয়েছেন চারজন। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীও প্রেমঘটিত দ্বন্দ্বে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

সবশেষ ৮ অক্টোবর দিনগত রাতে পুরান ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায় ভাড়া বাসার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা যান মীর জাওয়াদ। তিনি উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র ছিলেন। পরিবার ও সহপাঠীরা জানান, জাওয়াদ কিছুদিন ধরে হতাশায় ভুগছিলেন। মানসিক অবসাদে ঘরবন্দি হয়ে থাকতেন তিনি। এমন বাস্তবতায় সামনে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস’ পালিত হলো। তবে দিবসকেন্দ্রিক ভাবনা ছেড়ে বছরজুড়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘটনা নানা কারণে ঘটতে পারে। কেন আত্মহত্যা করলেন তা নিয়ে মাতামাতির চেয়ে ঠেকানো গেলো না কেন, সেটা নিয়ে আমাদের বেশি ভাবতে হবে। অভিমান, প্রেমে ব্যর্থ, পড়াশোনার চাপে আত্মহত্যা করেছেন বলেই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহিষ্ণুতা কেন কমছে, অল্পতে কেন আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন তা চিহ্নিত করে জোরালোভাবে কাজ করতে হবে।

আত্মহত্যায় ঝুঁকছে স্কুলশিক্ষার্থীরা

আঁচল ফাউন্ডেশন গত ৯ সেপ্টেম্বর তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। সেখানে দেখা গেছে, স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা বেশি আত্মহত্যায় ঝুঁকছে, যা ভয়াবহ বার্তা দেয় বলে মনে করছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।

ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশই ছিল স্কুলগামী। সংখ্যার হিসাবে ১৬৯ জন। তাদের মধ্যে ছাত্রী ১১২ জন এবং ছাত্র ৫৭ জন। দাখিল পর্যায়ের মাদরাসা শিক্ষার্থী ৩০ জন। তারাও স্কুল পর্যায়ের। অকাল মৃত্যুর পথে পা বাড়ানোদের মধ্যে কলেজগামী শিক্ষার্থী ৯৬ জন, যা শতাংশের হিসাবে ২৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৬৬ জন।

স্কুল শিক্ষার্থীদের আত্মহননের হার ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, ‘স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাঁচা মন। অথচ সমাজ-সংস্কৃতি দ্রুত পাল্টে গেছে এবং যাচ্ছে। হাতে হাতে মোবাইল ফোন। তাতে তারা সবই দেখছে। সব ধরনের কনটেন্ট যে তারা দেখছে, এটা তাদের বয়স ও মানসিক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো সম্ভব নয়। এগুলো তার অল্প বয়সের জীবনকে জটিল করে তুলছে। মানসিক চাপ ও সমস্যা বাড়ছে। তখন অনেকে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘স্কুল-মেন্টাল হেলথ কার্যক্রম সক্রিয়ভাবে চালু করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকদেরও প্রত্যেকের উচিত নিজের ও পরিবারের শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগী হওয়া। সবচেয়ে বড় ভূমিকাটা হলো শিক্ষকদের। তাদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে, মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে। শিক্ষকের মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হলে তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি যত্নবান বা শিক্ষার্থীর মানসিক সমস্যা নিয়ে কাজ করতে বা ভাবতে পারবেন না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্কুল-মেন্টাল হেলথ কার্যক্রম শুরু করেছি। শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষকদের নিয়েও কাজ করছি। ২০২৪ সালের শুরুতে মেন্টাল হেলথ নিয়ে জোরালো কাজ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নেতৃত্বে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে কাজ করা হবে। আশা করি- এ পদক্ষেপে স্কুলের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার কমাবে।’

মৃত্যু নয়, ভাঙতে ভাঙাতে হবে অভিমান

শিক্ষার্থীদের আত্মহননের প্রাথমিক কারণ হিসেবে উঠে আসছে অভিমান। মান-অভিমান করে চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ১১৪ জন শিক্ষার্থী অকাল মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৭ জন ছাত্র এবং ৫৭ জন ছাত্রী। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আত্মহত্যা করা মোট শিক্ষার্থীর ৩১ দশমিক ৬০ শতাংশই অভিমানে আত্মহত্যা করেছেন। ঠুনকো কারণে মন খারাপ করে সম্ভাবনাময় কিশোর-তরুণদের মৃত্যু ঠেকাতে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মননে গেঁথে দেওয়ার কাজ করতে হবে বলে মনে করেন মনোচিকিৎসকরা।

ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘অভিমানে মরবো কেন? কেউ অভিমান করবে, কেউ তা ভাঙাবে। অথবা নিজে অভিমান করলেও তা ভাঙতে হবে। এই যে অভিমান ভাঙানো বা নিজেই ভাঙার চেষ্টা, এটা করার জন্য সহিষ্ণুতা প্রয়োজন। ছোট থেকেই যদি আমরা সন্তানদের মননে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গেঁথে দিতে পারি, তাহলে এটা রুখে দেওয়া সম্ভব।’

আঁচল ফাউন্ডেশনের রিচার্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর ফারজানা আক্তার লাবনী বলেন, ‘আমিসহ আমাদের রিসার্চ টিম অনেকগুলো ঘটনাস্থলে গিয়ে কথা বলেছি, খোঁজ নিয়েছি। বিষয়গুলোতে আমরা অবাক হয়েছি। মনে হয়েছে, একটু ইতিবাচক মানসিকতা, আগ্রহ ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেই একজন ষষ্ঠ বা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীর প্রাণ ঝরতো না। অনেক বাবা-মা, অভিভাবকও আফসোস করেন। কিন্তু সচেতনতার অভাবে হয়তো সন্তানকে আগে সেভাবে দেখভাল করতে পারেননি। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতার খুব প্রয়োজন বলে আমরা অনুভব করেছি।’

আত্মহত্যা বেশি ঢাকায়, নেই বেড়ে ওঠার সহায়ক পরিবেশ

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটছে ঢাকায়। আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী— চলতি বছরের প্রথম আট মাসে আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৩০ শতাংশ ঢাকায়। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ (১৪.১০ শতাংশ), খুলনা বিভাগ (১৩ শতাংশ), রাজশাহী (১১.৯০ শতাংশ), ময়মনসিংহ (১০ শতাংশ), রংপুর (৮.৯০ শতাংশ), বরিশাল (৮.৩০ শতাংশ) ও সিলেট বিভাগে ২.৫ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞ ও মনোরোগবিদরা মনে করেন, ঢাকা শহরে ঘনবসতি বেশি, শিশুদের বেড়ে ওঠার সহায়ক পরিবেশ নেই। উল্টো তাদের মনে সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা প্রতিদিন চলতে-ফিরতে প্রত্যক্ষ করতে হয়, যা মানসিক সমস্যার উদ্রেক ঘটায়।

ডা. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকায় ঘনবসতি বেশি। উচ্চবিত্ত যেমন আছে, নিম্নবিত্তও আছেন। সব শ্রেণির পরিবারে আত্মহত্যার ঘটনা দেখা যায়। আবার অনেকে ঢাকায় আসেন ক্যারিয়ার গড়তে। বাবা-মা পরিবার ছেড়ে আসেন গ্রামে। এখানে এসে একাকিত্ব বোধ করেন। খাপ খাইয়ে নিতে পারেন না। মনের কথা, নিজের অজ্ঞতা বা মেধাও প্রস্ফুটিত করতে না পেরে অজানা গন্তব্যে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। তখন তিনি আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটান।’

হটলাইন জরুরি, রাখতে হবে দক্ষ বিশেষজ্ঞ

মানসিক সমস্যা এখন বড় ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সচেতনতা অনেকটা বাড়লেও সংকোচ এখনো কাটেনি। শিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিতরাও নিজের মানসিক সমস্যার কথা বলতে সংকোচে থাকেন। সরাসরি চিকিৎসকের চোখে চোখ রেখে নিজের সমস্যা বলতে বিব্রতবোধ করেন অনেকে। লজ্জা, ভয়, আত্মসম্মানও মাথায় রাখেন তারা।

শিক্ষার্থীসহ সব বয়সীদের মানসিক পীড়া থেকে মুক্তি দিতে চিকিৎসা প্রয়োজন। সরাসরি চিকিৎসায় যেহেতু অনেকের আপত্তি, সেজন্য হটলাইন চালুর কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। যেখানে কল করে নিজের পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রেখে সমস্যা বলতে পারবেন রোগী। চিকিৎসকের সুপরামর্শে বাঁচবে তরুণ তাজা প্রাণ। এক্ষেত্রে তড়িঘড়ি বা অদক্ষদের দায়িত্ব দেওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে।

মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘হটলাইন খুব প্রয়োজন। দ্রুত এবং সহজলভ্য হটলাইন থাকতে হবে। কিন্তু হটলাইনে যারা পরামর্শ দেবেন, তারা যদি দক্ষ না হন, তাহলে হটলাইন উল্টো আত্মঘাতী হয়ে দাঁড়াবে। হটলাইনে ওপারে যারা রোগীর সঙ্গে কথা বলবেন, তাদের প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও পেশাগত বিষয়ে জ্ঞান থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

অকাল মৃত্যু রুখতে বড় ভূমিকা গণমাধ্যমের

গণমাধ্যমে আত্মহত্যার খবর প্রচারে দায়িত্বশীলতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কাটতি বাড়াতে গিয়ে যাতে আত্মহত্যায় উৎসাহ দেওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা না হয় সেদিকে নজর রাখা জরুরি।

মনোরোগবিদ ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘অভিমানে প্রাণ গেলো, পরকীয়ার বলি হলেন গৃহবধূ, ত্রিমুখী প্রেমের বলি স্কুলছাত্রী—এ ধরনের শিরোনাম পরিহার করা খুব জরুরি। হাতেগোনা দু-একটি গণমাধ্যম ছাড়া এটা কেউ মানে না। সব গণমাধ্যমের উচিত খুব সাধারণ এবং নিরুৎসাহিত হয়—এমন ভঙ্গিতে আত্মহননের মতো সামাজিক ব্যাধির খবর প্রকাশ করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনেও বলা আছে, কোনো ধরনের আলঙ্কারিক শব্দ বা ভাষা ব্যবহার করে আত্মহত্যার খবর জানানো যবে না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডা. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গণমাধ্যমে কী লেখা যাবে, কী লেখা যাবে না—সেটা নিয়ে আমরা লিফলেট তৈরি করেছি। আত্মহত্যাকে কোনোভাবেই প্রভোক (উৎসাহিত) করা যাবে না। সেটা ঠেকানোর চেষ্টা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করছে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে বড় ভূমিকা রাখতে হবে।’

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে যা করছে সরকার

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে দেশে সরকারিভাবে খুব বেশি কাজ হয় না। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোও বেশি সময় পার করে মৃত্যুর হিসাব কষেই। ফলে অনেকটা অগোচরে রয়ে যাচ্ছে অকাল মৃত্যু ঠেকাতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের কাজটা। সম্প্রতি সরকারিভাবে বিভিন্ন কাজ হচ্ছে এবং নতুন নতুন পদক্ষেপের কথা জানালেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শহীদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘দেখুন, মেন্টাল হেলথ নিয়ে যে আইন ছিল, সেটা ১৯১২ সালের। ১০০ বছরের বেশি সময় আগের। সেই আইনকে যুগোপযোগী করে ২০১৮ সালে ন্যাশনাল মেন্টাল-হেলথ অ্যাক্ট করা হয়। সেটা অনুমোদনও হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মেন্টাল-হেলথ অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি নিয়ে ডেডিকেটেড অপারেশন প্ল্যান করছি আমরা। সেখানে সুইসাইড প্রতিরোধ করার জন্য বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া থাকবে।’

ডা. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা প্রি-ম্যাচিউর ডেথ বা অকাল মৃত্যু ঠেকাবো। এটা এখন যা আছে, তার এক-তৃতীয়াংশ কমানোর চেষ্টা করবো। দেশের সব উপজেলা পর্যায়ে দুজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং দুজন সাইকিয়াট্রিক নার্স দেওয়ার চেষ্টাও করা হবে। তবে যে দেশে বছরে ১০-১৪ হাজার সুইসাইডের ঘটনা ঘটে; অর্থাৎ প্রতিদিন ৩০-৪০ জনের মতো মারা যায়, সেখানে এটা কতটুকু সফল করতে পারবো তা সময়ই বলে দেবে।’