অভিষেক হচ্ছে শুভাশীষেরও

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন! ১৯৬ মিটার উচ্চতার মাউন্ট ভিক্টোরিয়া লুক আউট থেকে পুরো ওয়েলিংটনের ভিউটা পাওয়া যায়। সমুদ্রতীরের ভীতিকর রানওয়ের ঠিক উল্টো কোণে ওয়েস্টপ্যাক স্টেডিয়াম আর এর ঠিক মাঝামাঝি বেসিন রিজার্ভ।

আকাশে উড়ে বেড়ানো মেঘের ফাঁকেও ঠিকই ওভালটা দেখা যায়, চকচকে সবুজের মাঝে হালকা বাদামি ছাঁট। এক দিন আগেও যা আউটফিল্ডের মতোই সবুজ ছিল। তবে কি স্বস্তি ফিরল বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মনে?

রাতে টিম ডিনারে যাওয়ার পথে টপ অর্ডারের দুই কাণ্ডারি তামিম ইকবাল ও মমিনুল হককে একসঙ্গে পেয়েও প্রশ্নটা করা হয়নি। উইকেট, কন্ডিশন নিয়ে তো আর কম কথা হয়নি। তাই শেষবেলায় অহেতুক মনের খচখচানি উসকে দিয়ে লাভ কী? একটা টেস্ট আর দুটি টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা থেকে তামিম ভালোই জানেন সামান্য রং বদলে বেসিন রিজার্ভের উইকেটের মতিগতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সারফেসটা শক্তই আছে, পরম যত্নে লালিত ঘাস ছাঁটার পরও যেটুকু থাকবে তাতে বাউন্স থাকবে আর প্রথম ঘণ্টায় ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষা নেবে সুইং। বিশ্বাস না হলে শুনে নিন হাতের তালুর মতো এ উইকেট চেনা কেন উইলিয়ামসনের পূর্বাভাস, ‘উইকেট আগের মতোই। আশা করি গতি আর বাউন্স থাকবে। সবুজাভ উপরিভাগের কারণে শুরুতে সুইংও করবে। তবে আমি নিশ্চিত দারুণ উইকেট এটা। ’

হঠাৎ হঠাৎ ওয়েলিংটন আকাশের রং বদলানো আর শিস কেটে যাওয়া বাতাসে আজ বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও তা নিয়ে আজ টেস্ট অভিষেক হয়ে যাওয়া তাসকিন আহমেদের বিশেষ হেলদোল নেই। সে তুলনায় ভাবলেশহীন শুভাশীষ রায়। সৌম্য সরকার, নাকি মেহেদী হাসান মিরাজ এবং রুবেল হোসেন, না কামরুল ইসলাম—এ নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট দ্বিধায় থাকলেও ওয়েলিংটনে টেস্ট অভিষেকের ছাড়পত্র পেয়ে গেছেন শুভাশীষ।

উইকেট আর কন্ডিশন পেস বোলিং সহায়ক হলে অফস্পিনার মেহেদী মিরাজকে বসিয়ে সৌম্যকে খেলানোর কথা বাংলাদেশ দলের। যুক্তির টেবিলে সৌম্যর খণ্ডকালীন মিডিয়াম পেস বোলিংকে তোলা হলেও তাঁর ব্যাটিং দক্ষতাই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ওদিকে রুবেলের ফিটনেস টেকসই বলে মনে করে না টিম ম্যানেজমেন্ট। তাই কামরুল ইসলামের দিকেই গত রাতে ঝুঁকে ছিল দল। তবে দুই অভিষিক্তের সঙ্গে কামরুলকে দিয়ে সাজানো পেস আক্রমণ বড্ড আনকোরা হয়ে যায়। শেষেরজনের টেস্ট অভিজ্ঞতা আছে, সেও মাত্র দুই টেস্টের। এ কারণেই রুবেল, না কামরুল—সিদ্ধান্তটা ঝুলে ছিল গত রাতে।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে টেস্ট স্কোয়াডেই ছিলেন না রুবেল হোসেন। তাতে অভিষেক হয়েছিল কামরুল ইসলামের। তবে একে তো মরা উইকেট, উপরন্তু অতি সামান্যই বোলিংয়ের সুযোগ পান এ পেসার। তাতে উপযোগী কন্ডিশনে একটা সুযোগ তিনি দাবি করতেই পারেন। তেমনটা হলে নিশ্চিতভাবেই হৃদয় ভাঙবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের সফলতম বোলার রুবেলের। অবশ্য হৃদয় সশব্দে ভাঙতে পারে মেহেদী মিরাজেরও। আগের টেস্টের ম্যাচসেরাকেই কিনা বসে থাকতে হচ্ছে! ওয়েলিংটনের উইকেট ছাড়া আর কাউকে কি দোষ দিতে পারবেন মেহেদী মিরাজ?

এ টেস্টে সুযোগ না পেলে ধরে নেওয়া যায় ক্রাইস্টচার্চেও ডাগ আউটেই থাকবেন মেহেদী মিরাজ। ওয়েলিংটনের চেয়ে ক্রাইস্টচার্চের উইকেট যে আরো বেশি পেস সহায়ক। এর মানে, পুরো সফরটা প্র্যাকটিস করেই কাটিয়ে দিতে হতে পারে ইংল্যান্ড সিরিজের এ আবিষ্কারকে। এ সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে দলসংশ্লিষ্ট একজনের হতাশা, ‘টেস্টের উইকেট এমন যে হবে, সেটা তো জানাই ছিল। সে ক্ষেত্রে ওয়ানডেতে (মেহেদী) মিরাজকে খেলিয়ে দিলেই হতো। ’

মেহেদী মিরাজের তবু সম্ভাবনা আছে এ সফরে খেলে ফেলার, তাইজুল ইসলামের তা-ও নেই। সাকিব আল হাসানের পাশাপাশি স্পিন বিকল্প হিসেবে যৌক্তিক কারণেই অগ্রাধিকার পেয়েছেন মেহেদী মিরাজ। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম সুস্থ হয়ে ওঠায় ১৩ জনের ‘শর্ট লিস্ট’ থেকে আগেই বাদ পড়েছেন নুরুল হাসান সোহান, সঙ্গী তাইজুল।

ওহ! বলা হয়নি, গতকাল আরেক দফা ভূকম্পনে কেঁপেছে ওয়েলিংটন। বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ডের রাজধানীতে আসার পর এ নিয়ে দুই দফা ভূমিকম্প হলো, মতান্তরে তিনবার। কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, তবে প্রকৃতির প্রতি এতটা যত্নশীল হওয়া সত্ত্বেও নিউজিল্যান্ডে কেন এত ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে? উবার ট্যাক্সিচালক স্টিফেন এ নিয়ে ভীষণ ক্ষুব্ধ, ‘মাটির তলা থেকে তেল, গ্যাস এবং আরো খনিজ তুলে নেওয়ার ফল এসব। যত্তসব!’

ক্রিকেট ছেড়ে সেইলিংয়ে মন সঁপে দেওয়া মধ্যবয়সী ট্যাক্সিচালকের ব্যাখ্যার বৈজ্ঞানিক সত্যাসত্য জানা নেই, জানার চেষ্টাও করিনি। যেমন মমিনুলের জানা নেই কী অপেক্ষা করছে বেসিন রিজার্ভে, জানার চেষ্টাও হয়নি।

সে তো সবার অনেকটা জানা হয়ে যাবে এ প্রতিবেদন হাতে ওঠার আগেই!

 

 

সূত্র : কালের কণ্ঠ