অভাব পাত্তা পায়নি নূরের সাফল্যের কাছে

শাহিনুল ইসলাম আশিক
বাড়িতে মাত্র দুটি ঘর। তাও আবার কোন মতে টিনের ছাপড়া দেয়া। একটু বৃষ্টি হলেই পড়ে পানি।  বারান্দার বেশির ভাগ টিনে ফুটো। সেখানেও পানি পড়ে। কোন মতে থাকতে হয়। নেই পড়াশোনা করার টেবিল-চেয়ার। পড়তে হয়েছে মাটিতে বা বিছানায় বসে। বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা নেই বলল্লেই চলে। শিক্ষা জীবনের এসএসসি জিপিএ-৫ বাতি আলোতেই। মাত্র কিছুদিন আগে নেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ।

 

বর্ণনা করা হচ্ছিল, নগরীর মেহেরচন্ডি এলাকার নূর হোসেনের কথা। বাবা আখের আলীর দুই ছেলে আর একমেয়ে মিলে ৫ জনের অভাবের সংসার। আখের আলী অটোরিকশা চালান। আর মা নাসিমা বেগম রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ঝাড়–দারের কাজ করেন। কোন মতে চলে তাদের সংসার। এ অভাবের সংসারে থেকেই নূর হোসেন অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় থেকে এবার মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।

 

এতো গেলো নূর হোসেন ও তার পরিবারের কথা। পাসের আনন্দ যে এতো মধুর হয় তা না দেখলে বোঝা অসম্ভব। শুনেছি আগের দিনে কেউ পরীক্ষায় পাস কলে তাকে বাড়িতে দেখতে আসতো মানুষ। ঠিক তেমনটিই হচ্ছে নূর হোসেনের বাড়িতে। নূর হোসেন জিপিএ-৫ পাওয়ায় প্রতিবেশিরা ডেকে নিয়ে খাওয়াচ্ছেন ও দিচ্ছেন ছোটখাট পুরস্কার।

 

অভাব থাকলেও সাফ্যলের ঝুড়ি নূর হোসেনের ভরা। তার ঝুড়িতে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ আছে। এখানেই শেষ নয়, এবার স্বপ্ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া। বাংলা বা ইংরেজি বিষয় নিয়ে। শিক্ষাজীবন শেষে শিক্ষকতা বা লেখক হবার ইচ্ছে আছে নূর হোসেনের।

 

মা নাসিমা বেগম বলেন, আমার এই কুঁড়ে ঘরে প্রদীপ আমার ছেলে। অভাবের সংসারে তেমন কিছুই দিতে পারি নি ছেলেকে। অনেক দিন খেয়ে না খেয়ে কলেজে গেছে। বেশির ভাগ সময় কলেজে হেঁটে গেছে। গাড়ি ভাড়া দেয়ার ইচ্ছে থাকলেও দেয়া সম্ভব হয় নি। কারণ যে গাড়ি ভাড়া দেব সে টাকা দিয়ে সংসারে খাবার কেনা হবে। ছেলেটা অনেক কষ্ট করেছে।

 

বাবা আখের আলী বলেন, অভাবের কারণে ছেলেকে তেমন কিছুই দিতে পারি নি। তার নিজের ইচ্ছা পড়াশোনা করেছে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাবা হয়ে কিছু দিতে না পারলেও ছেলে হয়ে আমাদের দিয়েছে সম্মান। আমি গর্বিত আমার ছেলে সর্বোচ্চ ভালো রেজাল্ট করার জন্য।

 

অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, নূর হোসেন মেধাবী। তাকে আমাদের শিক্ষকরা সব সময় পড়াশোনার বিষয়ে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। নূর হোসেনের পাশে কেউ দাঁড়ালে হয় তো আরো অনেক উন্নতি করতে পারবে।

 

স/আ