অবৈধ লেনদেন: পশ্চিমঞ্চল রেলওয়ের প্রধান হিসাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন ভাবে বিপুল পরিমাণ টাকার অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে পশ্চিমঞ্চল রেলওয়ের প্রধান হিসাব কর্মকর্তা জামশেদ মিনহাজ রহমানের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে রেলওয়ে সদর দপ্তর থেকে একটি তিন সদস্যের দল এরই মধ্যে রাজশাহীতে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছে।

রাজশাহীতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তার দপ্তর। গত সোমবার থেকে তদন্ত দলটি তাঁদের কাজ শুরু করেন। এ দলের দলের আহ্বায়ক হলেন রেলওয়ে সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অর্থ) আনিসুর রহমান। তিনি গতকাল কালের কণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিট করেছেন। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সদর দপ্তরে অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তা হিসেবে গত বছরের পৈব্রয়ারি মাসে যোগদান করেন জামশেদ মিনহাজ রহমান। এর পর থেকে তিনি পশ্চিম রেলওয়ের অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব কর্মকর্তাকে পাশ কাটিয়ে অধিকাংশ ফাইলপত্র নিজের কাছে নিয়ে নেন। তিনি নিজের মতো করে বিল ছাড়করণসহ এককভাবে নানা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে থাকেন। দিনের বেলা অফিস না করে তিনি গভীর রাত পর্যন্ত অফিস করতে থাকেন। সেই সঙ্গে নিয়মের ব্যতয় ঘটিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ না করেই কয়েক কোটি টাকার বিল তিনি পাশ করে দেন। এর বাইরে অন্যান্য উন্নয়নকাজের বিপরীতে আরও কোটি কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সবমিলিয়ে গত এক বছরেই তিনি কোটি কোটি টাকার অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন।

এছাড়াও ওই কর্মকর্তা অধিনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইচ্ছে মতো বদলি বাণিজ্যেও মেতে ওঠেন। এ পর্যন্ত জামশেদ মিনহাজ রহমান অন্তত ১০ জনকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বা লালমনিরহাট বিভাগে বদলি করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী রেলওয়ের এই দুটি বিভাগের উন্নয়নকাজের বিল পাশ হওয়ার কথা সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকেই। কিন্তু সেটিও না করে গত এক বছরে ওই কর্মকর্তা নিজের ক্ষমতার অপব্যহার করে অন্তত শত কোটি টাকার বিল পাশ করে দিয়েছেন।

এর বাইরে তিনি এ পর্যন্ত অনেকটা গোপনে অস্থায়ী ভিত্তিতে ১৬ জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ সরকারি নির্দেশে রেলওয়েতে সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।

সূত্র মতে, জামশেদ মিনহাজ রহমান সরকারি অনুমতি বা ছুটি না নিয়েই কানাডায় চলে যান পরিবারসহ। ফলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী শৃঙ্খলা আইনে তার চাকরি চলে যায়। প্রায় ১০ বছর পর দেশে ফিরে চাকরি ফেরত পেতে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। শেষে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে রাজশাহীতে পশ্চিম রেলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তা হিসাবে পদায়ন করা হয়।

এর বাইরে একাউন্টস টিটিদের নিকট থেকে মাসিক মাসোহারা আাদায়, বিভিন্ন দপ্তরের কাজ না করে অবৈধ বিল পাস করা, গভীর রাত পর্যন্ত অফিস করা, রেলের সরকারি গাড়ি আত্মীয়-স্বজনদের জন্য ব্যবহার করেন তিনি। আর তার এসব অপকর্মে সহায়তা করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রকিউরমেন্ট শাখার হিসাবরক্ষক কামাল হোসেন। তাঁর মাধ্যমেই অবৈধ লেনদনও করেন জামশেদ মিনহাজ রহমান। তবে কামাল হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘নিয়মের বাইরে কোনো কিছু করার নাই। উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা যেসব নির্দেশ দেন, কেবল সেবই আমি পালন করি।’

জানতে চাইলে অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা গোলাম রাব্বানী বলেন, দপ্তরের সরকারি বিধি অনুযায়ী সব ফাইল ও সিদ্ধান্ত অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব কর্মকর্তার দপ্তর হয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রধান হিসাব কর্মকর্তা নিচ থেকে নিজের দপ্তরে সব ফাইল তুলে নেন। ফলে দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ড আমি কিছুই জানতে পারি না। মৌখিকভাবে এ নিয়ে কয়েক দফা প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু ফল হয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জামশেদ মিনহাজ রহমান বলেন, আমি তদন্ত দল নিয়ে খুব ব্যস্ত আছি। এসব অভিযোগ নিয়ে এখন কিছুই বলতে পারব না। আমাকে দুই-তিন সময় দেন, তখন কথা বলবো।’

জানতে চাইলে পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মিহির কান্তি গুহ বলেন, ‘ওই কর্মকর্তা হিসাব ক্যাডারের হওয়ায় তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক দপ্তর। এ কারণে এক্ষেত্রে আমার কিছু করণীয় নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে।