রাজশাহী নগরীর অবহেলিত ৩০ নং ওয়ার্ড

অবহেলায় মির্জাপুরের ৬৬ হিন্দু পরিবার যেন মডেল সিটির বাইরে

দেখে মনে হচ্ছে গ্রামের কোনো মেঠো পথ। কিন্তু নয়! এটি নগরীর ৩০ নং ওয়ার্ডের মির্জাপুর এলাকার হিন্দু পল্লীতে প্রবেশের একমাত্র কাঁচা রাস্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নিরলস প্রচেষ্টায় উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে মহানগরীর চিত্র। পদ্মাপাড়ের রাজশাহী শহরের ৩০টি ওয়ার্ডে ২ হাজার ৯৩১ কোটি ৬২ লাখ টাকার মেগা দুইটি প্রকল্পের অনেক কাজই শেষ হয়েছে। ফলে উন্নয়নে রাজশাহী নগরী বর্তমানে সারাদেশের মধ্যে মডেল সিটি। কিন্তু স্থানীয়দের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও ‘রাজনৈতিক মাইরপ্যাচে’ মহানগরীর ৩০ নং ওয়ার্ডের মির্জাপুর মধ্যপাড়ায় (৬৬টি হিন্দু পরিবার নিয়ে গঠিত হিন্দু পাড়া) লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। ওয়ার্ডটির সর্বত্রই উন্নয়নমূলক নানা কাজ হলেও এই হিন্দুপাড়ায় যাওয়ার একমাত্র রাস্ত এখনো কাঁচা। আর ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টিতেই ডুবে যায় এই হিন্দু পল্লী। ফলে দীর্ঘদিন থেকেই চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন এই পল্লীর বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে- সিটি কর্পোরেশনের এই ওয়ার্ডটি নগরীর শেষপ্রান্তে হওয়ায় অনেকটা গ্রামের মতই। বছর খানেক আগেও গ্রামের মেঠোপথের মতই ছিল ওয়ার্ডটির অধিকাংশ রাস্তাঘাট। কিন্তু বর্তমানে ১৭২ কোটি ৯৮ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এক প্রকল্পের আওতায় মহানগরীর ওয়ার্ডগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও নতুন করে কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় সকল এলাকায় লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। তবে ওয়ার্ডের মির্জাপুর হাইস্কুল এন্ড কলেজের উত্তর পার্শ্বের হিন্দু পল্লীটি এখনো অবহেলিত। হিন্দু পল্লীর বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্থানীয় কাউন্সিলরের অবহেলা আর পল্লীর কিছু বাসিন্দার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।

হিন্দু পল্লীর বাসিন্দা ও রাজশাহী কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী প্রণব দাস বলেন, ‘আমাদের হিন্দু পল্লীতে ঢোকার একমাত্র কাঁচা রাস্তাটি পাকার অনুমোদন পেয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু যেদিক দিয়ে রাস্তা হওয়ার (নকশা) কথা সেই জমির মালিক স্বাধীন, পরিমল ও তাপোষ সরকার জমি দিতে প্রথমে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো। ফলে রাস্তাটি ওই সময় হয়নি। এখন অমল সরকার নামের একজন জমি না দেয়ায় রাস্তা তৈরীতে জটিলতা হচ্ছে। তবে কাউন্সিলর উদ্যোগ নিলে দ্রুত রাস্তাটি হলে আমাদের ৬৬টি পরিবারের প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের বসবাসের ভোগান্তি দূর হবে।’

বিশ্বজিৎ নামের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘পাকা রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না হওয়ার কারণে একটু বৃষ্টি হলেই বাড়িতে পানি উঠে যায়। সেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাতে হয়। ফলে শহরের মধ্যে থেকেও ঢাকার কোনো বস্তিতে আছি বলে মনে হয়।’

হিন্দু পল্লীর বাসিন্দা সুফল সরকার বলেন, ‘ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ভোটের সময় আসেন। ৪ বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর তিনি। কিন্তু আমাদের কোনো খোঁজ-খবর রাখেন না। বাসস্থান জনগণের মৌলিক চাহিদার অন্যমত। কিন্তু পাকা রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না হওয়ার কারণে বছরের পর বছর ধরে চরম ভোগান্তিতে এই পল্লীর বাসিন্দারা।’

জানতে চাইলে ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শহিদুল ইসলাম পিন্টু বলেন, ‘হিন্দুপাড়ার বাসিন্দারা দুইভাগে বিভক্ত। তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ওইটুকু জায়গার মধ্যে দুটি পুজা মন্ডপ। এক পক্ষ অন্যপক্ষের ভালো চায় না। আমি ৪ বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর। ওয়ার্ডের এমন কোনো রাস্তাঘাট এমন অবহেলিত নেই। আমি প্রায় ১৫ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ওই পল্লীতে বাসিন্দাদের ভোগান্তি লাঘবে পাকা রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে দিতে। কিন্তু একজন রাস্তার জন্য জমি দিলে অন্যজন আবার বাগড়া দিচ্ছে। এই নিয়ে কয়েকজনের সাথে আমার মনমালিন্যও হয়ে গেছে। তানভীর কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই পল্লীতে পাকা রাস্তা ও ড্রেন করার জন্য কাজের অনুমোদনও পেয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সম্ভব হচ্ছে না। আমি লেগে আছি। আশা করছি, হিন্দু পল্লীর দীর্ঘদিনের এই ভোগান্তি দূর হবে।’

এএইচ/এস