অপারেশন ক্লিনহার্টের দায়মুক্তি অবৈধ ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

চারদলীয় জোট সরকারের আমলে পরিচালিত অপারেশন ক্লিনহার্টের দায়মুক্তি অধ্যাদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। সোমবার (২ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৫২ পৃষ্ঠার এই রায় প্রকাশিত হয়। ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এ রায় ঘোষণা করা হয়। মূল রায়টি লিখেছেন রায় প্রদানকারী বেঞ্চের সিনিয়র বিচারক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী।

 
প্রকাশিত রায়ে বলা হয়েছে, আইনগত প্রতিকার পাওয়ার অধিকার সংবিধান সব নাগরিককে দিয়েছে। এই অভিযানের সময় যৌথবাহিনীর কোনও সদস্যের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা প্রতিকার চেয়ে ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলা করতে পারবেন। নিজস্ব অভিমত দিয়ে রায়ে একমত পোষণ করেছেন বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল।

 
রায়ে আরওও বলা হয়, যৌথবাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আইনের উর্ধ্বে নয়। ইতোমধ্যে হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন যে, কেউ আইনের উর্ধ্বে নন বরং সবাই আইনের অধীন। যৌথবাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা এ ধরনের কোনও নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রাখেন।

 
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, জনগণের নিরাপত্তা বিধান, সন্ত্রাস দমন এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের লক্ষ্যে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য পরিচালিত অভিযানকে ‘ক্লিনহার্ট অপারেশন’ নামে অভিহিত করা হয়। ২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে ২০০৩ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের সময় নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতনের শিকার হয় কয়েকশ মানুষ।

 

এই সময়ের মধ্যে পরিচালিত অভিযানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনও সদস্য বা ব্যক্তি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা যৌথ অভিযানে কৃত যাবতীয় কার্যাদির জন্য তাদের দায়মুক্ত করার লক্ষ্যে দায়মুক্তি আইন প্রণয়নও করা হয়। পরে দায়মুক্তির এই আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালের ১৪ জুন হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না।

 
মামলার রায়ে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফজতে মৃত্যুর ঘটনা হচ্ছে মানবাধিকার লংঘনের সবচেয়ে জঘন্য রূপ। সংবিধান অনুসারে একজন ভয়ঙ্কর অপরাধীরও আদালতের কাছে বিচার চাওয়ার অধিকার আছে। আমরা মনে করি, যৌথবাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারেন না।

 
রায়ে বলা হয়, জাতীয় সংসদকে সতর্ক থাকতে হবে, যেন এ ধরনের সংবিধানের চেতনা-পরিপন্থী আইন আর প্রণীত না হয়ে যায়। ইচ্ছাধীন হত্যাকে দায়মুক্তি দিতে সংসদ কোনও আইন প্রণয়ন করতে পারে না।

 
রায়ে বলা হয়, ‘মামলার নথিপত্র ও পেপার ক্লিপিং থেকে এটা স্পষ্ট যে, যৌথবাহিনীর দায়মুক্তি আইন যে সময়ের জন্য করা হয়েছে, ওই সময় দেশে এমন কোনও ভয়াবহ আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়নি বা দেশে ব্যাপক কোনও নৈরাজ্যও সৃষ্টি হয়নি। কিংবা ওই সময় দেশ গৃহযুদ্ধে বা অন্য কোনও দেশের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়নি।

 

তাই যৌথবাহিনীর দায়মুক্তি আইন ২০০৩-এর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রাণহানির কার্যকে যে দায়মুক্তি প্রদান করা হয়েছে, সেই দায়মুক্তি সংবিধানের ৩১, ৩২, ৪৬, ৪৭(৩) এবং ৪৭(ক)-এর বিধান মোতাবেক অসামঞ্জস্যপূর্ণ। দায়মুক্তি আইনটি সংবিধানের বিধানাবলি সাপেক্ষে প্রণয়ন হয়নি। সুতরাং আইনটি বাতিল ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হলো।’

 

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন