অন্যের কথা শোনার ক্ষেত্রে ইসলামের চার শিষ্টাচার

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

ইসলামের সব বিধি-বিধান আদবের মোড়কে মোড়ানো। প্রতিটি জিনিসের আছে শিষ্টাচার। এসব শিষ্টাচার বা আদব মেনে চলার মধ্যে সবার জন্যই কল্যাণ। আমরা প্রতিনিয়ত মানুষের সঙ্গে কথা বলি ও শুনি। এই কথা বলার যেমন আদব রয়েছে, তেমনি শোনারও আদব রয়েছে। শ্রবণ দক্ষতা অর্জন করার জিনিস। এর মধ্যেও আলোচকের হক আছে। কিন্তু আমাদের এসব কল্পনায়ও আসে না। নিম্নে আমরা সেসবের কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করব।

এক. আদর্শ শ্রোতা হওয়া। শোনার সর্বপ্রথম হক হচ্ছে চুপ থাকা এবং আলোচনাকারীর কথা মন দিয়ে শোনা। এর মাধ্যমে যিনি আলোচনা করছেন, তাঁর সম্মানের বহিঃপ্রকাশ হয়। এ জন্য উলামায়ে কেরাম বলেন, ইলমের প্রথম পাঠ হচ্ছে, মনোযোগ লাগিয়ে শোনা। আপনার সঙ্গে যিনি কথা বলছেন, আপনি হন তাঁর মনোযোগী শ্রোতা। আপনার সঙ্গী কথা বলছেন আর আপনি একবার এদিক-সেদিক তাকাচ্ছেন, কিংবা মোবাইল স্ক্রল করছেন। এটা কখনো আদর্শ শ্রোতার বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। এ জন্য আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে কোরআন মনোযোগ লাগিয়ে শোনার কথা বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন কোরআন পড়া হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ থাকো, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত হয়।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২০৪)

পবিত্র কোরআনের বড় আদব হলো তিলাওয়াতের সময় কান লাগিয়ে নিশ্চুপ থাকা এবং এর হুকুম-আহকামের ওপর আমল করার চেষ্টা করা।

যারা মনোযোগী শ্রোতা, তাদের প্রশংসা কোরআনে কারিমে এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা কথা শোনে মনোযোগ দিয়ে, অতঃপর তার মধ্যে যা কিছু উত্তম তার অনুসরণ করে, তারাই এমন লোক, যাদেরকে আল্লাহ হেদায়াত দান করেছেন এবং তারাই বোধশক্তিসম্পন্ন।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ১৮)

তাই অন্যের কথার সময় নিশ্চুপ থাকাই শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। কোনো মন্তব্য থাকলে তার জন্য তাড়াহুড়া না করে অপেক্ষা করা। কথা পূর্ণ করার পর মন্তব্য করা। এর মাধ্যমে পরস্পর ভালোবাসা, ঘনিষ্ঠতা ও অন্তরঙ্গতা গড়ে উঠবে।

দুই. হাস্যোজ্জ্বল থাকা : কথা শোনার সময় হাস্যোজ্জ্বল থাকা শোনার আদব। আবু জার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে নবী (সা.) আমাকে বললেন, ‘তুমি পুণ্যের কোনো কাজকে তুচ্ছ মনে কোরো না। যদিও তুমি তোমার (মুসলিম) ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করতে পারো।’ (অর্থাৎ হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও পুণ্যের কাজ)। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬২৬)

তিন. গোপন কথা প্রকাশ না করা : পারস্পরিক কথোপকথনের সময় কোনো গোপন কথা থাকলে তা কারো কাছে প্রকাশ না করা। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবী (সা.)-এর কাছে একটি বিষয় গোপনে বলেছিলেন। আমি তাঁর পরেও কাউকে তা জানাইনি। এটা সম্পর্কে উম্মু সুলায়ম (রা.) আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। কিন্তু আমি তাঁকেও বলিনি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২৮৯)

আরেক বর্ণনায় এসেছে, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি কোনো কথা বলার পর মুখ ঘুরালে (কেউ শুনেছে কি না তা দেখলে) তা আমানতস্বরূপ। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৬৮)

চার. পরনিন্দা না শোনা : পরনিন্দা গিবত-শিকায়াত না শোনা। যেভাবে আল্লাহ তাআলা কারো গিবত করা হারাম করেছেন, তেমনি অপরের গিবত, দোষ-ত্রুটি শোনাও হারাম করেছেন। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার কোনো ভাইয়ের মান-সম্মানের ওপর আঘাত প্রতিরোধ করে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাআলা তার মুখমণ্ডল হতে জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধ করবেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৩১)

সূত্র: কালের কণ্ঠ