অনুমতি না নিয়েই হঠাৎ দেশের আকাশসীমায় সিঙ্গাপুরের বিমান, উত্তেজনা

সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর এসকিউ-৩২৬। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১৩ ঘণ্টা আকাশে উড়ে ফ্লাইটটি জার্মানির ফ্র্যাংকফ্রুটের বিমানবন্দরে পৌঁছায়। প্রতিযাত্রায় এটি বঙ্গোপসাগরের ভারত সীমানা দিয়ে পার হলেও গত মঙ্গলবার (১৯ মে) হুট করেই ঢুকে পড়ে বাংলাদেশের আকাশসীমায়। দেশের সীমানাধীন অংশে ঢুকে বঙ্গোপসাগর হয়ে দুবলার চর, সুন্দরবন হয়ে প্রায় ৩০ মিনিট উড়ে ফ্লাইটটি। পরে কলকাতার আকাশের দিকে চলে যায়।

বাংলাদেশের আকাশসীমায় হঠাৎ এভাবে ‘অনুপ্রবেশের’ বিষয়ে ঢাকার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) রুমের পক্ষ থেকে জেরা করা হয় এসকিউ-৩২৬ ফ্লাইটের প্লাইটটিকে। একের পর এক প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনোটিরই সদুত্তর দিতে পারেননি। আকাশসীমায় অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে ফ্লাইটের পাইলট তারও কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

নিয়মবহির্ভূতভাবে দেশের আকাশসীমায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটির হঠাৎ ঢুকে পড়ার ঘটনাটি তদন্ত করছে বিমানবন্দর ও এটিসি কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এই ফ্লাইট প্রতিবার চাঙ্গি বিমানবন্দর থেকে উড়াল দিয়ে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর হয়ে বঙ্গোপসাগর (ভারত অংশ) দিয়ে কলকাতা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, কাজাখস্থান, রাশিয়া, বেলারুশ ও পোল্যান্ডের আকাশসীমানা অতিক্রম করে ফ্র্যাংকফ্রুট যায়।

তবে মঙ্গলবার ফ্লাইটটি তার গতি পরিবর্তন করে মিয়ানমার হয়ে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশের আকাশে ঢুকে পড়ে। ৩০ মিনিট উড়ে ১টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশের আকাশসীমা ত্যাগ করে ভারতের কলকাতার আকাশসীমায় ঢুকে যায় এসকিউ-৩২৬। মোট ৩০ মিনিট দুবলার চর, সুন্দরবন হয়ে বাংলাদেশের আকাশসীমা পার হয় ফ্লাইটটি।

সাধারণত কোনো দেশের আকাশসীমা ব্যবহার করতে হলে বা সেদেশে প্লেন অবতরণ করানোর প্রয়োজন হলে স্থানীয় এয়ার ডিফেন্স ক্লিয়ারেন্সের (এডিসি) প্রয়োজন হয়। এডিসি নম্বর হচ্ছে একটি সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নম্বর।

এসকিউ-৩২৬ ফ্লাইট যখন বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল তখন ঢাকার এটিসি থেকে বারবার এটির পাইলটের কাছে এডিসি নম্বর জানতে চাওয়া হচ্ছিল। তবে পাইলট সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছিলেন না। একসময় তাকে উদ্দেশ্য করে উত্তপ্ত বাক্যও উচ্চারণ করে ঢাকার এটিসি।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের আকাশসীমা নির্ধারণের বিষয়ে একটি সার্কুলারে বেবিচক নির্দেশনা দেয় যে, কোনো এয়ারক্রাফট যদি বাংলাদেশের এডিসি জোনে ঢুকতে চায় তাহলে তাকে আগে থেকেই এডিসি নম্বর নিতে হবে।

এসকিউ-৩২৬ ফ্লাইটের পাইলটের সঙ্গে এটিসির বাক্যবিনিময়
বাংলাদেশের আকাশসীমায় ঢুকে পড়তেই ফ্লাইটটির পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে এটিসি। প্রথমেই বাংলাদেশের এটিসি কলকাতা এয়ারপোর্টকে জানায় যে সিঙ্গাপুরের এই ফ্লাইটটি তাদের হ্যান্ডওভার করা হচ্ছে (খানিকক্ষণ বাদে)। এরপর বাংলাদেশের আকাশসীমা ছাড়ার শেষ মুহূর্তে ফ্লাইটের পাইলটকে জেরা করে এটিসি।

এটিসি রুম : ঢাকার এফআইআরে (ফ্লাইট ইনফরমেশন রিজিওন) ঢোকার আগে একটি কল দিয়ে বিষয়টি জানানো উচিত ছিল আপনার।
ফ্লাইট এসকিউ৩২৬ : (জবাব অস্পষ্ট)
এটিসি রুম : আপনি যে ঢাকার এফআইআরে ঢুকেছেন, আপনার এয়ার ডিফেন্স ক্লিয়ারেন্স (এডিসি) নম্বরটি জানতে চাচ্ছি।
ফ্লাইট এসকিউ৩২৬ : (পাইলট তখন কলকাতার এডিসি নম্বর দেন)
এটিসি রুম : আমি বাংলাদেশের এডিসি নম্বর দেয়ার অনুরোধ করছি।
ফ্লাইট এসকিউ৩২৬ : (বক্তব্য অস্পষ্ট)
এটিসি রুম : আপনি এখন ঢাকার রিজিয়নে আছেন। আপনি বাংলাদেশ ক্রস করছেন কোনো এডিসি নম্বর ছাড়া। আপনার কাছে কি ঢাকার আকাশসীমা ব্যবহারের কোনো (ওভারফ্লায়িং) অনুমতি রয়েছে?
ফ্লাইট এসকিউ৩২৬ : কলকাতা বলতে পারবে (বক্তব্য অস্পষ্ট, কোনো উপযুক্ত উত্তর দিতে পারেননি)।
এটিসি রুম : আমি আবারও বলছি আপনি ঢাকার আকাশসীমায় আছেন। আপনার কাছে কি ঢাকার আকাশসীমায় প্রবেশের কোনো অনুমতি নম্বর আছে?
ফ্লাইট এসকিউ৩২৬ : দেখছি।
এটিসি রুম : আপনি কীভাবে অনুমতি ছাড়া অন্য একটি দেশের ওপর দিয়ে এখনো স্ট্যান্ডবাই আছেন?
ফ্লাইট এসকিউ৩২৬ : (উত্তর দেননি)
এটিসি রুম : কলকাতার কিছু করার নেই। আপনি আপনার এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করুন, তারা কোনো অনুমতি নিয়েছে কি-না?
ফ্লাইট এসকিউ৩২৬ : (উত্তর দেননি)

এটিসি রুম : আপনার ভাগ্য বেশ ভালো যে আমাদের ফাইটার আপনাকে ধাওয়া করেনি।
ফ্লাইট এসকিউ৩২৬ : (পাইলট তখন আবারও এটিসিকে কলকাতার এডিসি নম্বর বলছিলেন)
এটিসি রুম : এটা কলকাতা নয়, ঢাকার রুট। আপনাকে ঢাকার রুট ব্যবহারের জন্য অনুমতি নিতে হবে।
ফ্লাইট এসকিউ৩২৬ : (উত্তর দেননি)
এটিসি রুম : দয়া করে এমন কিছু শেখাতে আসবেন না যাতে বোঝা যায় যে আপনি ফ্লাই করার নিয়ম জানেন না। কিছুক্ষণ আগে থাই এয়ারওয়েজসহ অন্যান্য প্লেন এই রুট দিয়ে গেছে। তারা অনুমতি নিয়ে গেছে। আপনি অনুমতি না নিয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ফ্লাই করতে পারেন না। যদি আপনি এ বিষয়টি না জানেন তাহলে অনুগ্রহ করে পরেরবার থেকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে আর ফ্লাই করবেন না এবং আপনার প্রতিষ্ঠানকে বলবেন বাংলাদেশের অনুমতি নিতে। গুডবাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ উল-আহসান  বলেন, ‘কথোপকথন শুনে মনে হলো পাইলটের কাছে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি ছিল না। পাইলটের ফল্ট থাকতে পারে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান বলেন, ‘এয়ারলাইন্স সম্ভবত অনুমতি নিয়েছিল, তবে এটিসির কাছে হয়তো সেই তথ্যটি ছিল না। এটিসি যখন পাইলটের কাছে এডিসি নম্বর জানতে চায় পাইলট বলেছে, ‘চেক করে জানাচ্ছি।’ চেক করতে করতে সে বাংলাদেশের আকাশসীমা পার হয়ে গেছে।’ সূত্র: জাগো নিউজ