অনুপমের গানে মাইকেল মধুসুদন-বিদ্যাসাগরের বিরল বন্ধুত্বের গল্প

ঈশরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মাইকেল মধুসুদন দত্তকে যে পরিমাণ সহায়তা করেছিলেন তা ইতিহাসে বিরল। সামান্য পরিচয় সেই অর্থে বন্ধুত্বও নয়। বাংলা সাহিত্যের রেনেসাঁ’র যুগে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হিন্দু কলেজের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে পুরোদমে লেখালেখি করছিলেন আর বিধবা বিবাহ চালুর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন সেই চেষ্টা সফল হয়। বিদ্যাসাগর চাকরি ছেড়ে দিলেও টাকার অভাব হচ্ছিল না। বাংলা আর সংস্কৃত গ্রন্থ লিখে প্রচুর আয় হচ্ছিল বিদ্যাসাগরের। কেননা সে সময় বাংলায় গ্রন্থই তেমন ছিল না।

একই সময়ে কিটস, বায়রন, শেলি হবার চিন্তায় বিভোর এক হিন্দু জমিদারপুত্র নিজধর্ম ত্যাগ করে ইংরেজি কবিতা লেখা শুরু করলেন। পিতা তাকে ত্যাজ্য করলো। রাগে অভিমানে মাদ্রাজ চলে গেলেন। তিনি মধুসুদন দত্ত। কিন্তু ইংরেজিতে লিখে কোনো লাভ হচ্ছিল না, যদি হিন্দু কলেজের বন্ধুরা তাকে বেশ উৎসাহ দিচ্ছিল প্রথমে। কিন্তু ইংরেজরা তার কাব্য ধারণাকে শিশুতোষ হিসেবে আখ্যা দেন। শুধু মাইকেল উপাধি নিয়েই থাকলেন।

এক সময় ফিরিঙ্গি নারীকে বিয়ে করে সংসার পাতেন মাদ্রাজে। স্ত্রীকে রেখে অনেকদিন পর কলকাতায় এসে তার পুরনো বন্ধুদের খুঁজে পান মাইকেল। বলা যায় পুরনো বন্ধ গৌড়ই তাকে খুঁজে বের করেন।  মদ, বিয়ার নিয়ে দিনভর পড়ে থাকা মাইকেল এই বন্ধুর কারণে বাধ্য হয়ে ‘ছোট জাতের ভাষা’ বাংলায় লেখা শুরু করেন। তারপর ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ লিখে তো হইচই ফেলে দিলেন। কলকাতার সুধী সমাজ এমন একজনকে পেল যাকে পেয়ে যার কাব্যরীতি, অমিত্রাক্ষর ছন্দে বিমোহিত।

কলকাতায় আদালতের কেরাণীগিরি আর লেখালেখিতে টাকা আসছিল ভালোই। কিন্তু জীবনে বড় হতে হবে- তাই ব্যারিস্টারি পড়তে চলে গেলেন লন্ডন। সেখানে গিয়ে প্রচণ্ড অর্থাভাবে পড়লেন। বিদ্যাসাগরের কাছে ধার চেয়ে লিখলেন, টাকা পাঠালেন বিদ্যাসাগর। টাকার কারণে বাধ্য হয়ে পড়া থামিয়ে চলে যান ফ্রান্স। কিন্তু অর্থাভাব পিছু ছাড়ছিল না। এমনকী বাচ্চার দুধ কেনার টাকাও নেই- এমন অবস্থা।

বিদ্যাসাগর টাকা পাঠাচ্ছিলেন। হাত খালি হলেই বিদ্যাসাগর, বিদ্যাসাগর একের পর ডাকযোগে ফ্রান্স লন্ডনে টাকা পাঠাতেই লাগলেন। লন্ডন এসে পড়া শুরু করলেন মাইকেল। টাকা পাঠাচ্ছিলেন বিদ্যাসাগর। একসময় বিদ্যাসাগরের আর্থিক টান দেখা দেয়। তবুও টাকা পাঠানো বন্ধ করেননি।

অথচ কলকাতার সুধী সমাজে বিদ্যাসাগর কেন কাউকেই পাত্তা দিতে রাজি নন, মাইকেল। ধীরে ধীরে পরিচয় হয়েছিল। কিছুটা ভালোও লেগেছিল বিদ্যাসাগরকে মাইকেলের। এই পরিচয়েই বিদ্যাসাগরের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মাইকেল। মাইকেলকে বিমুখ হতে হয়নি। মাইকেলও অবশ্য সেই বন্ধুত্বের নমুনা শেষ পর্যন্ত রেখেছিলেন, নিজের সম্পদ বিক্রি করে বিদ্যাসাগরের বিশাল টাকা ধার শোধ করেছিলেন।

অনুপম তার গানে এসবই তুলে ধরেছেন, দুজনের বন্ধুত্বের কথা উঠে এসেছে বন্ধুত্বের কথা। অনুপমের সঙ্গে গেয়েছেন এই সময়ের কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা অনির্বাণ।

এক ভিডিওবার্তায় অনুপম জানান, লকডাউনের সময় বই পড়তে পড়তে বিদ্যাসাগরের জীবনী হাতে আসে তার। সেটা পড়ার সময়েই এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করার কথা ভাবেন তিনি।

অনুপম বলেন, কথোপকথনের ভিত্তিতে প্রোজেক্টটি তৈরি, কাজেই আমার আরেকটি কণ্ঠের দরকার ছিল। তখনই অনির্বাণের কথা মাথায় আসে এবং ও রাজিও হয়ে যায়। আমি প্রথম ‘উমা’ ছবির প্রচারের সময় অনির্বাণকে আমার ‘আলস্য’ গানটি গুন গুন করতে শুনি। তারপরে ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছিলাম যে, ও গান নিয়ে কতটা সিরিয়াস।’

গত ২৬ সেপ্টেম্বর ছিল ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০০তম জন্মজয়ন্তী। এদিনই গানটি ইউটিউবে রিলিজ করেছে এসভিএফ।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ