অজ্ঞাত এক ব্যক্তি বাসায় এসে গ্রেনেড বানিয়েছে’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রাজধানীর আশকোনা এলাকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আত্মসমর্পণের পর গ্রেফতার হওয়া দুই নারী জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তাদের বাসায় গিয়ে গ্রেনেড বানিয়েছে। প্রায় ১৫-২০ দিন আগে মাইনুল ওরফে মুসার সঙ্গে শেষবারের মতো ওই ব্যক্তি বাসায় এসেছিল।

তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য মুসা বলতে পারবে। ওই ব্যক্তি মুসার সঙ্গে বাসায় থাকতো। মুসা তার কাছে গ্রেনেড তৈরির প্রশিক্ষণও নিচ্ছিল। আজ মঙ্গলবার রিমান্ডের প্রথম দিনে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের এক কর্মকর্তা এসব তথ্য জানান।

ওই কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে মুসার স্ত্রী তৃষামনি জানিয়েছে, পুলিশ অভিযান শুরু করলে সে স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তার কাছে একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট ছিলো। থ্রিমা অ্যাপসের মাধ্যমে স্বামীর সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। মুসা তাকে আত্মঘাতী হওয়ার নির্দেশ দেয়। দুই দফা বার্তা আদান-প্রদান শেষে মুসার নির্দেশেই সে মোবাইলটি নষ্ট করে ফেলে। গ্রেফতার হওয়া অপর নারী জঙ্গি জেবুন্নাহার ইসলাম শীলা জানিয়েছে, সে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো না। তৃষার মাধ্যমে মুসার কাছ থেকে আত্মঘাতী হওয়ার নির্দেশ পেলেও শেষ পর্যন্ত তা না করে সে আত্মসমর্পণ করে।

গ্রেফতার হওয়া দুই নারী জঙ্গি জানায়, তাদের বাসায় থাকা তানভীর কাদেরীর ছেলে আফিফ কাদেরী ওরফে আদরের কাছেও একটি মোবাইল সেট ছিলো। ওই সেটের মাধ্যমে তার সঙ্গেও মুসার যোগাযোগ হয়। পুলিশি অভিযানের সময় তারা পৃথক রুমে অবস্থান করলেও পর্দার দু’পাশ থেকে তাদের মধ্যে কথা হয়।

সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেন, দুই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে আমরা অস্ত্রের উৎস, বিস্ফোরক ও গ্রেনেডের উৎস এবং পরিকল্পনা জানার চেষ্টা করছি। তিনি আরও বলেন, নারী জঙ্গিদের সাধারণত কম তথ্য জানানো হয়। একারণে আমরা মুসাকে গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। তাকে গ্রেফতার করতে পারলে অনেক তথ্য জানা যাবে।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে পরদিন বিকাল পর্যন্ত রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন পূর্ব আশকোনার ৫০ নম্বর বাসায় প্রায় ১৬ ঘণ্টা অভিযান চালায় সিটিটিসি’র স্পেশ্যাল অ্যাকশন গ্রুপ। রাতভর বাড়িটিকে ঘেরাও করে রাখা হয়। সকাল ১০টার দিকে জেবুন্নাহার শীলা ও তৃষামনি নামে দুই নারী জঙ্গি তাদের শিশুসন্তানসহ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

রবিবার রাতে দক্ষিণখান থানায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পক্ষে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলার প্রধান দুই আসামী হলো জেবুন্নাহার শীলা ও তৃষামনি। সোমবার তাদের আদালতে সোপর্দ করে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

আশকোনার অভিযানের সময় সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয় সারিকা ওরফে তাহিরা নামে এক নারী জঙ্গি। পরবর্তীতে পুলিশের গোলাগুলিতে আফিফ কাদেরী আদর নিহত হয়। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, আদরের কক্ষ থেকে তারা একটি বই উদ্ধার করেছেন, যেটার ভেতরের পাতা কেটে ক্ষুদ্র অস্ত্র রাখার মতো জায়গা তৈরি করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের ধারণা, এই বইয়ের মাধ্যমে জঙ্গিরা আগ্নেয়াস্ত্রগুলি বহন করেছে।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন