অজানা রোগে আক্রান্ত নওগাঁর মেহেদী

কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁঃ
নয় বছরের মেহেদী হাসান। এ বয়সে যার লেখাপড়া করা এবং গ্রামের পথে ঘাটে হৈ হুল্লোর আর টো-টো করে বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করে সময় কাটানোর কথা। কিন্তু সে কিনা জন্মের পর থেকে অজানা এক রোগে আক্রান্ত। পারে না হাঁটতে। খেলাধুলা তো অনেক কঠিন ব্যাপার। নিজের হাতে খেতেও পারে না। অজানা রোগ বাসা বেঁধেছে তার সাড়া শরীরে। জন্মের পর থেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কষ্ট ভোগ করছে।
এ রোগের কষ্ট ভোগ করে জীবনকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে, আর জীবনটা বিশিয়ে উঠেছে। এই দীর্ঘ সময় চলে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন চিকিৎসকগণ মেহেদী হাসান কি রোগে আক্রান্ত হয়েছে তার নির্ধারণ করতে পারেননি। এদিকে মেহেদীর বাবা দরিদ্র ভ্যান চালক আবুল কালাম আজাদ ও মা গৃহিনী জাহানারা বেগমের ছোট ছেলে মেহেদীকে কত দিন বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ছেলেকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানসহ সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।
মেহেদীর পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা প্রশাসনের সাথে বারবার যোগাযোগ করে কোন ভাতা ও আর্থিক সহযোগিতা না পেলেও শুধু মাত্র আশ্বাস পেয়েছেন।
পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মেহেদী হাসান ২৮ মে ২০০৭ সালে রাণীনগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের আবুল কালামের ঘরে জন্ম নেয়। জন্মের পর থেকেই মেহেদীর শরীর ধবধবে সাদা। তখন চিকিৎসকের কাছে গেলে ‘রক্ত শূণ্যতা’ বলে চিকিৎসারা জানিয়েছেন।  জন্মের ১২/১৫ দিন পর থেকেই মেহেদীর শরীরে হাত-পায়ে ফাটা ও চর্চারা ( এক ধরনের প্রলেপ) দেখা দেয়। দিন পর মেহেদীর অস্থিরতা বাড়তে থাকে।
এরপর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফেটে যাওয়া শুরু করে। শুরু হয় প্রচন্ড কান্নাকাটি। বিভিন্ন চিকিৎসক ও কবিরাজের কাছে গিয়েছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ তার রোগে সঠিকভাবে চিহ্নি করতে পারেননি। শুধুই টাকা খরচ করেছেন।
মা জাহানারা বেগম বলেন, দিন দিন মেহেদী বড় হতে থাকে। সাথে বাড়তে থাকে তার শরীর ফেটে যাওয়া। সাধ্যের মধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ছেলের চিকিৎসা করানো হয়।
কিন্তু রোগটি অজানাই থেকে যায়। একা খেতে পারে না। কিছু ধরতেও পারে না। কারে সাথে খেলাধুলা করতে এমনকি ঠিক মতো শুয়ে থাকতে পারে না। তার সেবা যতœ নিজেকে করতে হয়। তবে শীতের সময় বেশি সমস্যা হয়। গায়ে জামা কাপড় পরে থাকলে খুবই অসুবিধা হয়। শরীরের বিভিন্ন অংশ ফেটে রক্ত বের হয়ে যায়। এতে জামা-কাপড়গুলো শরীরে লেগে যায়। এতে ব্যাপক কষ্ট হয়।
অন্যদিকে শরীর থেকে তীব্র দুর্গন্ধ বের হয়। তবে গরমে একটু ভালো থাকে। মেহেদী হাসান জানায়, সে অন্য ছেলে-মেয়ের মতো খেলতে, পড়তে, বাঁচতে চায়। কিন্তু শরীরের কারণে সে ঠিক মতো হাঁটতেও পারে না। নিজে খেতেও পারে না। মেহেদীর বাবা আবুল কালাম আজাদ জানান, তার বাড়ীর জায়গা ছাড়া কিছুই নেই।
ভ্যান চালিয়ে সংসারের খরচ চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। সেখানে মেহেদীর চিকিৎসা করতে ঋণ করতে হচ্ছে। আবার কষ্ট করে ভ্যান চালিয়ে যে টাকা পেয়ে থাকেন সেই টাকা দিয়ে সাধ্যের মধ্যে বিভিন্ন ভাবে এ পর্যন্ত চিকিৎসা দিচ্ছেন। কিন্তু টাকার অভাবে ১ বছর থেকে আর চিকিৎসা করানো এবং ভাল কোন ডাক্তার দেখানো সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি রোগটা অজানা হওয়ায় বিভিন্ন ভাবে তাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা সম্ভব হচ্ছে না। ছেলের জন্য খুবই কষ্ট হয়।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে গিয়েছি তার ছেলের নামে প্রতিবন্ধি ভাতা বা চিকিৎসার জন্যে আর্থিক সাহায্যে নেয়ার জন্যে। সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে নগদ সামান্য কিছু টাকা পেলেও ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। শুধু আশ্বাস দিয়েছেন প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড করে দেবেন।
স্থানীয় গোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসান খান জানান, দুই বছর আগে সাবেক চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কাছে সুপারিশ করেছিলাম প্রতিবন্ধি ভাতা দেয়ার জন্যে। কিন্তু কেন দেয়া হয়নি তার জানা নেই।

 

তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারি কোন প্রতিবন্ধি ভাতা দেয়ার নির্দেশনা আসেনি। সরকারি নির্দেশনা এলেই দ্রুত তাদের পরিবারকে সহয়তা দেয়া হবে। মেহেদীর উন্নত চিকিৎসার জন্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানসহ সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
নওগাঁ সিভিল সার্জন ডা. মোহাজার হোসেন বুলবুল জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে দ্রুত উধ্বর্তন কর্তপক্ষের সাথে আলোচনা করে মেহেদীর জন্যে কি করা যায় আলোচনা করা হবে। জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান জানান, তাদের খোঁজ নিয়ে চিকিৎসা বাবদ সরকারি সুযোগ সুবিধাসহ অন্যান্যে সুযোগ-সুবিধা দিতে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন থেকে দেয়া হবে।
জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ মাজেদুর রহমানের বিরুদ্ধে ভুয়া বিল ভাউচারে সরকারী টাকা আত্মসাৎ, দায়িত্ব পালনে অবহেলাসহ নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি ও অপসারন দাবি করেন। মানববন্ধনে এলাকার নানা শ্রেনী পেশার মানুষ অংশগ্রহন করে।
উল্লেখ্য, গত ২ নভেম্বর রাতে সরকারী ওষুধ চুরি করে বিক্রি করার সময় স্থানীয় একটি বেসরকারী ক্লিনিক থেকে স্টোরকিপার রুহুল আমিনকে হাতে নাতে আটক করে র‌্যাব।
স/আ