‘কেমন করে মানুষ এতটা পশু হয়!’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দিনাজপুরে নির্যাতিত পাঁচ বছরের শিশু পূজাকে সোমবার দুপুরে যখন অপারেশন চিকিৎসকরা জটিল অস্ত্রোপচার করছেন, তখন ওসিসি ওয়ার্ডে ছয় বছরের আরেক নির্যাতিত শিশু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। শিশুটির মায়ের মুখে কোনও কথা নেই, তিনি শুধুই কাঁদছিলেন।মেয়ের এ অবস্থায় বোবা হয়ে গেছেন তিনি। ৪২ বছর বয়সী একজন মানুষ কেমন করে ছয় বছরের শিশুটির সঙ্গে এসব করলো? কেমন করে মানুষ এতটা পশু হয়? ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সার্ভিসের (ওসিসি) ডক্টরসরুম, লিগ্যাল অফিস, নারী পুলিশ কর্মকর্তাদের কক্ষ; সবখানেই কেবল এই আলোচনাই চলছিল।

 

নারী পুলিশ সদস্যদের থেকে জানা গেল, স্থানীয় সাজেদা ফাউন্ডেশন থেকে কয়েক বছর আগে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়েছিলেন নির্যাতিত শিশুটির মা। গত ১৯ নভেম্বর কিস্তির টাকা তুলতে ফাউন্ডেশনের কর্মী তাদের লালবাগের শহীদ নগর এলাকার বাসায় আসেন।এ সময় মা তার সঙ্গে কথা বলে সন্তানকে ঘরে রেখে চলে যান রান্নাঘরে। প্রায় আঘাঘণ্টা পর রান্নার কাজ সেরে বড় এই মেয়েকে গোসল করাতে গেলে তার পুরো শরীরে কামড় ও আঁচড়ের দাগ দেখতে পান। এসব কিভাবে হলো জানতে চাইলে শিশুটি তাকে জানায়, ফরহাদ চাচা এ কাজ করেছে। এরপরই মা-বাবা শিশুটিকে নিয়ে ছোটেন থানায়। সেখান থেকে তাদের ঢাকা মেডিক্যালের ওসিসিতে পাঠানো হয়।

 

ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের মেডিক্যাল অফিসার ডা. তাইয়েবা সুলতানা বলেন, ‘শিশুটির ফরেনসিক পরীক্ষায় যৌন হয়রানির প্রমাণ মিলেছে। সারাশরীরে তার আঁচড় ও কামড়ের দাগ ছিল।’

 

ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে কর্মরত বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সদস্য আশিয়া পারভীন খুশী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিশুটির বাবা বাদী হয়ে গতকাল ২০ নভেম্বর লালবাগ থানায় মামলা যৌন নিপীড়নের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় মামলা দায়ের করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফরহাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’  তিনি আরও বলেন,  ‘আমাদের সমাজে প্রতিদিন এখন এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এজন্য পরিবারকে, বিশেষ করে মাকে খুব বেশি সচেতন হতে হবে। নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে, শহরের বস্তি এলাকাগুলোতে মায়েদের বোকা হয়ে থাকলে চলবে না। তাদের শত কাজের মাঝেও সন্তানদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কন্যা সন্তানের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।’

 

এদিকে, দিনাজপুরে নির্যাতিত পূজার অপারেশনকারী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আশরাফুল হক কাজল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চিকিৎসক জীবনে এক বিভৎসতার মুখোমুখি হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘ঘাতক (সাইফুল) পূজার যোনিদ্বার ক্ষুর জাতীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রশস্ত করে, প্রস্রাবের থলি, প্রস্রাবের নালী কেটে গিয়েছিল। মারাত্মক ইনজুরি ছিল, সেখানে ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিল। অপারেশনটিকে আমরা বলছি,  Reconstractive Operation। প্রায় চার ঘণ্টার অপারেশন আমরা করেছি মেয়েটিকে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। আশা করছি, কোনও ইনফেকশন না হলে তাকে সুস্থ করে তুলতে পারব।’

অধ্যাপক আশরাফুল হক বলেন, ‘বিবেকবোধগুলো হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের। নয়তো এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না সমাজে।’

 

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন