রবিবার , ২৮ জুলাই ২০২৪ | ২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

দুর্গাপুরে কৃষি জমিতে পুকুর খননে পরিত্যক্ত হচ্ছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি

Paris
জুলাই ২৮, ২০২৪ ৩:২১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর দুর্গাপুরে বোরোর জমিতে একের পর এক পুকুর খননের কারণে পরিত্যাক্ত ও অনাবাদি হয়ে পড়ছে হাজার হাজার একর কৃষি জমি। কখনো জলাবদ্ধতা আবার কখনো সেচের অভাবে এসব জমিতে কোনো ফসল হচ্ছে না। মূলত একটি পুকুর খনন হলে চারদিকের বিপুল পরিমাণ জমি পরিত্যক্ত হচ্ছে। কৃষকদের ভাষ্যমতে, পুকুর খননের কারণে এ উপজেলায় কৃষি জমির পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। আর এভাবে পুকুর খনন চললে কিছু দিনের মধ্যে এ উপজেলায় কৃষি জমি বলে কিছু থাকবে না। দুর্গাপুরে কৃষি জমিতে পুকুর খনন থামাবে কে? এমন প্রশ্ন উপজেলার সাধারণ কৃষকদের।

জানা গেছে, দুর্গাপুর ২নং কিশমত গণকৈড় ইউনিয়নের উজালখলসির বিশাল একটি বিলে প্রায় ৩শ’ বিঘা জমিতে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছত্রছাঁয়ার চলছে পুকুর খনন। এ পুকুর খননের সাথে মন্ত্রী ও এমপিদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমনটি বলছেন খননকারীরা। মূলত এ পুকুর খনন উদ্বোধন করা হয় খাসি জবাই করে উৎসবের সাথে। উদ্বোধনের পর থেকে এ পুকুরে চলছে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি ভেকু মেশিন। পুকুর পড়ে রাখা হয়েছে স্বসস্ত্র ক্যাডার বাহিনী। এই ৩শ’ বিঘা বোরোর জমিতে পুকুর খনন করার কারণে ওই বিলে আর বোরো ধানের জমি থাকছে না। এমন কি অন্য ফসলের যে জমি থাকছে সেগুলো পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ছে।

কৃষকরা বলছেন, পুকুর খননের জন্য অধিকাংশ কৃষকই স্বেচ্ছায় জমি দেননি। ক্যাডার বাহিনী দিয়ে অস্ত্রের দেখিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে জমি নেয়া হয়েছে। কৃষকরা জমি না দিলে পুকুর খননকারীদের ক্যাডাররা নিজেরাই ভেকু মেশিনে আগুন দিয়ে সাধারণ কৃষকদের হয়রানি করছে। হয়রানি থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে কৃষকরা তাদের তিন ফসলি জমি পুকুর খেকোদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। কৃষকরা বলছেন, দুর্গাপুর-পুঠিয়ায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ দারা ঘোষণা দিয়েছিলেন দুর্গাপুর-পুঠিয়ায় কোনো পুকুর খনন করা হবে না। কিন্তু পুকুর খনন চললেও তার কোনো পদক্ষেপ নেই। বরণ তিনি পুকুর খননের মদদ রয়েছেন এমন অভিযোগ কৃষকদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশমত গণকৈড় ইউনিয়নের রাতুগ্রামের একটি বিলে পুকুর খনন করছেন ওই এলাকার মোস্তাফা নামে এক ব্যক্তি। সেখানে প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন চলছে। ৫০ বিঘা পুকুরের কারণে জলাবদ্ধাতা অনাবাদি হচ্ছে আশপাশের প্রায় ৫শ’ বিঘা ফসলি জমি।

দুর্গাপুর আড়ইলের বিলে বেশ কয়েকটি পুকুর খনন করেছেন তাহেরপুর পৌরসভার যুবলীগ নেতা সোহেল রানা। বর্তমান তার আরো দুটি পুকুর খনন চলছে। তিনি মূলত বাগমারার এমপির নাম করে এসব পুকুর খনন করছেন। এই যুবলীগ নেতা এলাকায় কৃষি জমি খেকো হিসাবে সুপরিচিত। তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ দিয়েও কৃষকরা কোনো প্রতিকার পাননি। আড়ইল বিলে পুকুর খনন করায় বর্তমান কৃষির অবশিষ্ঠ কোনো জমি নেই বললেই চলে। যতটুকু আছে তা পরিত্যাক্ত হয়ে পড়েছে।

পুকুর খননকারীরা বলছে, মোটা অংকের টাকা দিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে তারা পুকুর খনন করছেন। জেলা প্রশাসকের পক্ষে পুকুর খনন বন্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা সহকারী ভুমি কমিশনারকে (এ্যাসিল্যান্ড) অভিযান চালানোর নিদের্শ দিলেও নামমাত্র অভিযান চালানো হয়। মূলত অভিযানে যাওয়ার আগেই পুকুর খননকারীদের সাবধান করে দিয়ে তারপর অভিযানে নামে উপজেলা প্রশাসন। আর অভিযানে গিয়ে উপজেলা প্রশাসন নামমাত্র জরিমানা করে চলে আসেন এমন অভিযোগ কৃষকদের।

এব্যাপারে দুর্গাপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন চৌধুরি জানান, আমরা অভিযান চালাই মেশিন জব্দ করি। তারপরও কেনো পুকুর খনন থামছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অভিযান চালানোর কথা চালাচ্ছি। কেনো বন্ধ হলো না সেটা জানি না। তবে পুকুর খননের বিষয়টি আমরা নজরে রাখছি বলেও জানান তিনি।

বিষয়টি জানতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্বীকৃতি প্রামাণিকের সাথে তার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সরকার অসীম কুমার বলেন, আমরা পুকুর খনন বন্ধের পক্ষে। তবে কৃষকরা আমাদের লিখিত অভিযোগ দেন না। কেনো দেন না সেটি জানি না। তারপরও আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা বিষয়টি দেখছি।

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর