সৌদির প্রথম নারী এ্যাম্বুলেন্স চালক সারাহ

সৌদি আরবে প্রথম নারী এ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে নাম লিখলেন সারাহ খালাফ ‍আল এনিজি। করোনাকালে রাজধানী রিয়াদের কিং ফাহাদ মেডিকেল সিটিতে রোগীদের সেবা দিয়ে সবার নজর কাড়েন সারাহ খালাফ।

জীবন সুরক্ষায় সব রোগীদের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসার প্রেরণা শৈশব থেকে লালন করেন সারাহ। মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরে আনন্দিত সারাহ। তিনি বলেন, ‘ঘুমানের আগে বালিশে নিজের মাথা রাখলে খুবই আনন্দ অনুভব করি। কারণ আল্লাহর পর আমিও একজন মানুষের জীবন রক্ষায় ভূমিকা পালন করছি।’

শৈশবে মানুষের শুশ্রুষার কথা স্মৃতিচারণ করে সারাহ বলেন, ‘কিশোর বয়স থেকে সব সময় আমার সঙ্গে ব্যান্ডেজ থাকত। আশপাশের কেউ আহত হলে তারা আমাকে সহযোগিতার জন্য ডেকে নিত। সত্যিকার অর্থে তা আমার খুবই সুখকর। বিশেষত আমার এ পরিকল্পনায় বাবা আমাকে ঘরের চিকিৎসক বলে অবিহিত করে।’

প্রায় ৮ বছর আগে জর্দানের আম্মানে গাড়ি চালানো শিখেন সারাহ। শিক্ষাবৃত্তিতে জর্দানের ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজিতে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন তিনি। ওই সময়ই জর্দানের ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তা দিয়েই নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যান।

কিন্তু সাম্প্রতিকালে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমোদন পাওয়া একটি দেশে এ্যাম্বুলেন্স চালানোর সুযোগ পাওয়া মোটেও সহজ নয়। বরং নানামুখী চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয় সারাহকে। তিনি বলেন, ‘এটি মোটেও সহজ বিষয় নয়। বিষয়টি খুবই কঠিন। মানসিকভাবে তা খুবই চাপ তৈরি করে এবং তরিৎ সিদ্ধান্তগ্রহণের উপযোগী করে তুলে।’

প্রথম নারী এ্যাম্বুলেন্স চালক হওয়ার অনুভূতি নিয়ে সারাহ বলেন, ‘সৌদি আরবের প্রথম নারী চালক হওয়ার অনুভূতি বর্ণনাতীত। আমার কাজ আমার আত্মায় প্রশান্তি আনে। মানুষের জীবন রক্ষায় ও আহতদের সেবা দিতে আমাকে আরো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা যোগায়।’

এ্যাম্বুলেন্স চালানোর সম্পর্কে সারাহ বলেন, ‘চালানোর বিষয়ে আমি অনেক দক্ষতা অর্জন করি এবং এ্যাম্বুলেন্স চালাতে আমার আত্মবিশ্বাসও অনেক বেশি। প্রতিদিন সকাল সাতটায় ঘুম থেকে ওঠে গাড়িতে তেল ভরি। চালানোর আগে এ্যাম্বুলেন্সটি একবার চেক করে নিই।’

করোনাকালে রিয়াদের কিং খালেদ এয়ারপোর্ট থেকে ‘আল দিরিয়াহ’ হাসাপাতালে কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য নিয়ে যান। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘করোনার কঠিন সময়ে আমরাই রোগীর সঙ্গে প্রথমে মিলিত হই। বিষয়টি আমাদের জন্য বেশ কঠিন। তখন আমি পেছন ফেরে তাকিয়ে দেখতাম। নিজের পরিবার, সন্তান ও মায়ের কথা স্মরণ হত। সামনে কি ঘটতে চলছে, তার কিছুই আমার জানা নেই। কিন্তু আল্লাহর প্রতি আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে করোনাকালেও আমি রোগীদের সেবা দিয়ে গিয়েছি এবং তা করতে পেরে খুবই সুখানুভূতি অনুভব করি।’

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৪ জুন সৌদি আরবের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমোদন দেওয়া হয়। ইতিপূর্বে নারীদের জন্য তা নিষিদ্ধ ছিল।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ