সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফর সামনে রেখে বাংলাদেশি গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করেছে চীনা সংবাদ মাধ্যমের কর্তাব্যক্তিরা।
বাংলাদেশি সম্পাদকরা তথ্যের অবাধ প্রবাহের পাশাপাশি এদেশের সাংবাদিকদের কমিউনিস্ট রাষ্ট্র চীনের গণমাধ্যম জগত দেখার সুযোগ প্রত্যাশা করেছেন, যাতে উভয়পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া আরও ভালো হয়।
প্রেসিডেন্ট শি’র ‘ঐতিহাসিক’ সফর সামনে রেখে দুই দেশের গণমাধ্যমের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে মঙ্গলবার ঢাকায় চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়া আয়োজিত এক সংলাপে উভয় দেশের নির্বাচিত কয়েকজন সম্পাদক ও প্রকাশক এক হন।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার বিভাগের ভাইস-মিনিস্টার তুয়ো ঝেন বলেন, “দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে গণমাধ্যম ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।”
চীনের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিন দশকের মধ্যে ১৪ অক্টোবর ঢাকা আসছেন শি জিনপিং। এর আগে ১৯৮৬ সালের মার্চে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লি শিয়াননিয়ান।
রুদ্ধদ্বার এই সংলাপের শুরুতে তুয়ো বলেন, দুই দেশের সম্পর্কে কী ঘটছে সে সম্পর্কে উভয় দেশের গণমাধ্যম একসঙ্গে জনগণকে জানাবে বলে তারা প্রত্যাশা করছেন।
“আমরা আশা করছি, ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগ ও বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোর নিয়ে গণমাধ্যম ইতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করবে,” দোভাষীর সাহায্যে বলেন তিনি।
চীন ও ইউরেশিয়ার মধ্যে আঞ্চলিক ও আন্তঃমহাদেশীয় যোগাযোগ এগিয়ে নেওয়া ‘ওয়ান-বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগ চীনের অর্থনৈতিক কূটনীতির কেন্দ্রে রয়েছে। অন্যদিকে বিসিআইএম হলো বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডোর।
চায়না ইন্টারনেট ইনফরমেশন সেন্টারের প্রধান সম্পাদক ওয়াং শিয়াওহুই তার দেশের গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্টের সফরের মূল লক্ষ্য হবে দুই দেশের জনগণের যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়ন।
চীনের স্টেট কাউন্সিল ইনফরমেশন অফিসের ব্যুরো অব গ্লোবাল কমিউনিকেশন অ্যাফেয়ার্সের উপ মহাপরিচালক ঝাও জিয়াগু, চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সান ইংসেং, চায়না ডেইলির উপ প্রধান সম্পাদক গাও আনমিং, চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনালের ভাইস প্রেসিডেন্ট হু বাংসেং, সিনহুয়া বার্তা সংস্থার উপ পরিচালক ইয়ান তাও এবং স্টেট কাউন্সিল ইনফরমেশন সেন্টারের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ মহাপরিচালক চেন ডাওয়েই চীনের পক্ষে বক্তব্য দেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক এএইচএম মোয়াজ্জেম হোসেন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এএম হারুন-অর-রশিদ, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক একেএম নেসার উদ্দিন ভূইয়া, আরটিভির সিইও রহমান সৈয়দ আশিক এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট তাসিক আহমেদ বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেন।
চীনের প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করে দুই দেশের গণমাধ্যমকর্মীদের পরস্পরকে জানার ‘আরও সুযোগ’ তৈরির প্রস্তাব করেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক।
তিনি বলেন, “পশ্চিমে একটি সাধারণ ধারণা তৈরি হয়েছে যে, এশিয়ায় যাই হোক না কেন তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, প্রশ্ন রয়েছে গুণগত মান নিয়ে। জীবনের সব ক্ষেত্রে আমাদের কী করা উচিৎ, তা নিয়ে তারা আমাদের ‘লেকচার’ দেবে। এটা এভাবে আর চলতে পারে না।
“মানব সভ্যতার ইতিহাস যদি আমরা দেখি, তাহলে দেখব, আমরা তাদের চেয়ে কত এগিয়ে। বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান আমাদের থেকে খুব একটা দূরে নয়। তারা যখন গুহায় থাকত, তখন আমাদের আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল!”
“আসুন এই বিষয়গুলোকে মাথায় নিই, আসুন একসঙ্গে কাজ করি,” চীনের গণমাধ্যমের কর্তাব্যক্তিদের উদ্দেশে বলেন তৌফিক খালিদী।
প্রেসিডেন্ট শি’র সফর দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন।
তিনি বলেন, সংবাদ বিনিময় এবং আরও তথ্য প্রবাহের মাধ্যমে দুই দেশের গণমাধ্যমের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা আরও বিস্তৃত হতে পারে।
“তথ্যের অবাধ প্রবাহ আক্রমণ, পক্ষপাত, যে কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি ও ভুল ধারণা থেকে বিরত রাখে।”
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “ওয়ান-বেল্ট, ওয়ান রোড উদ্যোগ নিয়ে আমাদের ধারণা পর্যাপ্ত নয় এবং প্রায়ই পশ্চিমা গণমাধ্যম যা বলে এবং এ নিয়ে যে প্রতিবেদন করে তার দ্বারা আমরা প্রভাবিত হই। বিসিআইএম করিডোরের ক্ষেত্রেও বিষয়টা একই রকম।”
বাসস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নিয়ে আরও তথ্য প্রকাশে ‘উদগ্রীব’ তারা।
“আঞ্চলিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত দুই বছর কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত সাউথ-চায়না এক্সপোর খবর ব্যাপকভাবে প্রকাশ করেছে বাসস।”
প্রেসিডেন্ট শি’র সফর দুই দেশের সম্পর্ক ‘নতুন উচ্চতায়’ নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গত সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের ঘোষণা দিয়ে চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কং হুয়ানইউ বলেন, এই সফর হবে ‘ঐতিহাসিক’, উভয় পক্ষে চুক্তি হবে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে।
সফরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন শি জিনপিং।
সূচি অনুযায়ী বেলা ১১টা ৪০মিনিটে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন প্রেসিডেন্ট শি। রাষ্ট্রপতি হামিদ তাকে স্বাগত জানাবেন। প্রথম দিনেই সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠক করবেন তিনি।
পরদিন সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন চীনা প্রেসিডেন্ট।
সূত্র: বিডি নিউজ