ফুলতলার চটপটি ও অদম্য সেলিনার গল্প

ইয়াকুব আলী:
ফুলতলার ১০ টাকার চটপটি। রাজশাহীর বিভিন্ন আনাচে কানাচে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। পদ্মা নদীর পাড়ে হওয়ায় বিনোদন প্রেমী মানুষদের ঢল নামে ফুলতলা এলাকায়। সেখানেই নিজের ক্ষুদ্র একটি ব্যবসায় পরিচালনা করেন সেলিনা বেগম। পদ্মা পাড়ে বেড়াতে এসে সেলিনার হাতের চটপটি খায়না এমন মানুষ খুব কমই আছে। আর এই চটপটি বিক্রি করেই সংসারের হাল ধরেছেন সেলিনা বেগম। অসাধারণ এই চটপটি আর বিনোদনের পেছনে যে সেলিনার গল্পটা কিছুটা ব্যাতিক্রম।

রাজশাহী মহানগরীর বাজে কাজলা এলাকার বাসিন্দা সেলিনা বেগম। ২০০৫ সালের প্রথম দিকে ভাপা পিঠা দিয়ে ফুলতলা এলাকায় ব্যবসা শুরু করেন সেলিনা। এক কেজি চাউলের আটা দিয়ে তৈরি ভাপাপিঠা তৈরী করতেন প্রতি পিচ মাত্র ২-৩ টাকায়। এতে যা লাভ হতো তার অর্ধেক দিয়ে সংসার চালাতেন তিনি। আর কিছু সঞ্চিত টাকা দিয়ে পুনরায় চাউল কিনে জীবন যাপন করেন।

শীত মৌসুম চলে গেলে শুষ্ক মৌসুমে শুরু করেন বাদাম বিক্রি। ধীরে ধীরে জীবনের গতিপথ পাল্টাতে থাকে সেলিনার। ২০০৭ সালের দিকে চটপটি বিক্রি শুরু করেন। বাজে কাজলার ফুলতলায় পদ্মা পাড়ে পলিথিনের ছাউনি নিচে ভাপাপিঠা,বাদাম,ও চটপটি নিয়ে বসতেন। পশ্চিমাকাশে সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে মানুষের ভিড় বড়িতে থাকে। ব্যস্ততা বাড়ে সেলিনার। তার হাতের বানানো চপটপটি খেয়ে সকলেই সুনাম করেন। আর তা ছড়াতে বেশি সময় লাগেনি।


স্কুল পড়–য়া ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণীপেশার মানুষ এসে পরখ করেন সেলিনার চটপটি। শহরের কোলাহল শব্দ, আর সারাদিনের ক্লান্তি যেন পদ্মার মুক্ত বাতাস আর একচামচ চটপটি মানুষকে প্রাণোবন্ত করে তোলেন।

সেখানে বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ব্যবসা চলে। বাড়ি ফিরতে ১১টা হয়ে যায়। সকাল হলেই চটপটির উপকরণ হিসেবে আলু নিমকি,শশা, ছোলা, তেতুঁলের টক এগুলো কেনার জন্য সাহেব বাজার যান। সেলিনা বেগমকে এ কাজের জন্য সহয়োগিতা করেন, স্বামী ও ছেলে।

সেলিনা বেগম সিল্কসিটিনিউজ বলেন, স্বামী রিকশা চালাতো। কিন্ত বয়সের ভারে এখন আর সে রিকশা চালাতে পারেনা। বড় দুই ছেলে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। এখন এক ছেলে আই এ পড়ছে আরেক ছেলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ছে। এখন এভাবেই নিজেদের সংসার টানতে হয় আমাদের। শুরুতে অনেক খারাপ লাগছিল একাকী এখানে এসে বাদাম আর ভাপাপিঠা বিক্রি করতে। তবে এখন ভাল লোকসমাগম হওয়ায় ভাল লাগে।

সেলিনা জানান, প্রথম দিকে প্রতিবাটি চটপটি ৩-৫ টাকা করেছিলাম। বর্তমানে সকল পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া প্রতিবাটি ১০ টাকায় বিক্রি করছি। প্রতিদিন ৪-৫ হাজার টাকার চটপটি বিক্রি হয়,সকল কিছু বাদে ৩০-৩৫ হাজার টাকা থেকে যায়। এ দিয়েই তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে । পলিথিনের ছাউনি থেকে হয়েছে টিনের ছাউনি,মাথা গোঁজার মত ঠাই হয়েছে।


সেলিনা বেগমের এই চটপটি খেতে নগরীর বিভিন্ন জায়গার মানুষ পাড়ি জমান ফুলতলায়। ভাল লাগার পর তা জানিয়ে দনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নগরীল কাশিয়াডাঙ্গা থেকে চটপটি খেতে এসেছিলেন সুমন আলী। তিনি বলেন, এখানকার চটপটির কথা আমার বন্ধু ফেসবুক পোস্ট দেখে ছিলাম। তখন থেকে ইচ্ছে ছিল ফুলতলার চটপটি খাবো। খেয়ে অনেক ভালো লাগছে।

নগরীর উপশহর এলাকার আয়েশা আক্তার বলেন, বর্তমান সময়ে ১০ টাকা বাটি চটপটি ভাবায় যাইনা। পদ্মার মুক্তবাতাস আর চটপটির টকঝাল যেন আনন্দে পরিণত হয়েছে।

ছোট দুই ছেলের জীবন যেন সুন্দর হয় সে লক্ষ্যে কাজ করে যেতে চান সেলিনা। পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতির পেছনে তার চেষ্টা থাকবে অব্যাহত। ছোট দোকানটিকে ভ্রমন পিপাসুদের বসার সু-ব্যাবস্থা করবেন বলে আশা রাখেন সেলিনা।