প্রচারের অভাবে পর্যটনের বিকাশ হচ্ছে না উত্তরে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর পদ্মায় পানি থাকলে উত্তাল ঢেউ। আর শুষ্ক মৌসুমে বালুরাশি। দুই সময়ের সূর্যাস্তেই এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর সারাবিশ্বের এক ঐতিহ্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্ত্বর, প্যারিস রোড, পুঠিয়া আর নাটোরের রাজবাড়ি, বাবুডাইং, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ, নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, রাজশাহীর আম এবং রেশমকে ঘিরেই উত্তরাঞ্চলে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা।
কিন্তু শুধু প্রচারের অভাবেই উত্তরাঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটছে না। অথচ এ অঞ্চলে পর্যটনের বিকাশ ঘটলে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ইতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। তাই উত্তরের পর্যটন বিকাশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শনিবার রাজশাহীতে ‘কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম’ শীর্ষক এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
রাজশাহীর পবা উপজেলার পাকুড়িয়ায় একটি বেসরকারি সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। সেখানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিডি ইন বাউন্ডের সভাপতি রেজাউল একরাম বলেন, পর্যটন মানেই এখন সিলেট-চট্টগ্রাম। সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাজশাহী বিভাগকে ঘিরেও উত্তরাঞ্চলে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা আছে। সেটি কাজে লাগাতে হবে। কারণ, একজন পর্যটকের জন্য ১০ জন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। কর্মসংস্থানের এই সুযোগ গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, বিদেশীরা এসে ফাইভ স্টার হোটেল খোঁজেন না। তারা গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে বেড়াতে চান। সাধারণ মানুষের ঘরে থাকতে চান। তাদের খাবার খেতে চান। শিশুদের সঙ্গে খেলতে চান। গাছ থেকে ফল পেড়ে খেতে চান। সেই ব্যবস্থা করে দিতে হবে। যোগাযোগনির্ভর পর্যটনের মাধ্যমেই এটি সম্ভব। এ জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে ইউনিয়নে এমন কিছু পরিবার সৃষ্টি করতে হবে, যেখানে পর্যটকরা থাকতে পারবেন। সেই পরিবারের সদস্যরাই পর্যটকদের গাইড হিসেবে কাজ করতে পারবেন।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাফিউজ্জামান বলেন, বিদেশী পর্যটকরা নওগাঁয় যেতে চাইলে ঢাকা থেকে গাইড নিয়ে যেতে হয়। এটা কেন করতে হবে? নওগাঁয় কি শিক্ষিত মানুষ নেই? আছে। তাদের প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। তারা গাইড হিসেবে কাজ করতে পারবেন। এতে পর্যটকদের যেমন খরচ কমবে তেমন স্থানীয়ভাবেই কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
ভ্রমণ সংস্থা ট্রিপজিপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা বলেন, উত্তরাঞ্চলে এমন কিছু রয়েছে যেগুলোকে নিয়ে গবেষণা হয়। গবেষকরা আসেন। কিন্তু পর্যটকরা জানেন না। প্রচারের অভাবেই তারা জানতে পারেন না। তাই প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রচারের পরিধি শুধু দেশে নয়, হতে হবে দেশের বাইরেও। তাহলে পর্যটকরা আসবেন। তখন দেখা যাবে, শুধু গাছ থেকে আম পাড়া দেখতেও পর্যটকরা আসবে। কিন্তু সে জন্য আম পাড়ার একটি উৎসবেরও আয়োজন করতে হবে। যেমনটি নতুন ধান কাটার সময় হয়, নবান্ন উৎসব।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য সামর্থ্যরে মধ্যে যা যা করা সম্ভব তিনি করবেন। পর্যটনের পরিবেশ সৃষ্টিতেও তিনি করবেন। ট্যুরিস্ট বোর্ডের ‘কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম’ প্রকল্প এ অঞ্চলের মানুষের জন্য একটা সুবর্ণ সুযোগ এনেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানের যেমন ব্যবস্থা করতে চান, তেমনি পর্যটকদের প্রকৃতি দেখারও সুযোগ করে দিতে চান।
এর আগে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম। তিনি ‘কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম’ প্রকল্পের নানা দিক তুলে ধরেন। এই প্রকল্পের আওতায় শনিবার থেকে রাজশাহীর পর্যটন সংশ্লিষ্ট ১০০ জন নারী-পুরুষের চার দিনের একটি প্রশিক্ষণ শুরু হলো। এদের মধ্যে কিছু শিক্ষার্থীও আছেন, যারা পর্যটকদের গাইড হিসেবে কাজ করতে চান। পর্যটনের নানা বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তাদের।

স/শা