পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর অটো ব্যাটারি দিয়ে বেকারত্ব দুর করলেন জায়দার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপির আর্থিক সহযোগিতায় অটো গাড়ীর ব্যাটারি দিয়ে বেকাররত্ব দুর করলেন জায়দা বেগমের। সোমবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে পাকুড়িয়া ইউনিয়নআওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক সামিউল হাসান নয়ন অটো গাড়ীর ব্যাটারিদাম বাবদ ৩২ হাজার টাকা জায়দা বেগমের হাতে তুলে দেন।

জানা যায়, বাবার খুব আদরের মেয়ে ছিল জায়দা বেগম। তার বয়স যখন ৬ বছর বাবা মীর মসলেম উদ্দিন হটাৎ মারা যায়। এরমধ্যে এক ভাই ও দুই বোনের জন্ম হয়। জায়দা ছিল সবার বড় এবং কালো। বাবার মৃত্যুর কিছুদিন পর ভাইটাও মারা যায়।

জায়দার বাবা মারা যাওয়ার পর মামা নুর মোহাম্মদের কাছে আশ্রয় নেয়। মামাও কিছুদিন পর মারা যায়। বাবার রেখে যাওয়া আট বিঘা জমি ছিল। এই জমি রাক্ষুসে পদ্মা গ্রাস করে নেয়। এমনকি তাদের থাকার জায়গাটুকু পদ্মা গর্ভে চলে যায়। ফলে নিরুপায় হয়ে পড়ে জায়দা। এরমধ্যে খুব কষ্টে দুই বোনকে অন্যাত্রে নিয়ে দেয়। এদিকে জায়দা বেগমের চেহারার কালো বলে কেউ বিয়ে করতে চায়নি।

৩০ বছর বয়সে শাহা জামাল নামের একটি ছেলেকে বিয়ে করেন। তাদের বছর খানেক সংসারের মাঝে পেটে সন্তান আসে। কিন্তু সন্তান জন্মের আগে স্বামী অন্যেত্রে চলে যায়। অভাবি সংসারে ভারতের সীমান্তবর্তী পদ্মার দুর্গম বাংলা বাজার চর ছেড়ে ছেলে জায়দুল হককে পেটে নিয়ে প্রায় ৩০ বছর আগে চলে আসেন উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের জোতকাদিরপুর গ্রামে।

এখানে এসে জন্ম নেয়া পুত্র সন্তান, বৃদ্ধ মা, নানীকে নিয়ে কি করে সংসার চলবে চিন্তায় পড়েন। অবশেষে কোন উপায় না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দু-মুঠো ভাতের জন্য কিস্তিতে কেনা ভ্যান নিয়ে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ছুটে বেড়াতে শুরু করেন। এই গ্রামে ৫ কাঠা জমি কিনে শুরু করেন নতুন জীবন। খেয়ে পরে বেঁচে থাকার তাগিদে কোন পেশাকে ছোট করে দেখেনি জায়দা বেগম। এভাবেই পার করেন জীবনের ৫০টি বছর। জায়দা বেগম আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

এরমধ্যেই হটাৎ করে জায়দা বেগমের অটো গাড়ীর ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি এনজিওর কিস্তির টাকা ও তিন সদসের সংসার চালাতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে এবং বেকার হয়ে পড়ে।৩ ডিসেম্বর উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের গোকুলপুর ঘাটে বাঘা ও চারঘাটের পদ্মা নদীর বামতীরের স্থাপনাসহ নদী ভাঙ্গন হতে রক্ষা প্রকল্পের ড্রেজিং কাজের উদ্বোধন করতে আসেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে তার অটো গাড়ীর ব্যটারির জন্য আবেদন করেন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে পাকুড়িয়া ইউনিয়নআওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক সামিউল হাসান নয়ন অটো গাড়ীর ব্যাটারি বাবদ ৩২ হাজার টাকা জায়দা বেগমের হাতে তুলে দেন।

এ বিষয়ে জায়দা বেগম বলেন, আমার বাবার বড় মেয়ে ছিলাম আমি। আমি কালো বলে বাবার ইচ্ছা ছিল লেখাপাড়া শিখিয়ে সরকারি চাকরি করাবেন। কিন্তু কপালে ছিলনা, তাই হয়নি। আমি এখন রাস্তায় অটো চালায়। এরমধ্যেই হটাৎ অটো গাড়ীর ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এনজিওর কিস্তির টাকা ও সংসার চালাতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ি। বিষয়টি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে অবগত করলে তাৎক্ষনিক ব্যাটারির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

জি/আর