সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের নির্দেশে শুরুটা করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। দলিত ভোট হাতের মুঠোয় নেওয়ার জন্য তারা এবার দলিতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের হাতের রান্না খাচ্ছে। এই লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয়েছে ‘সামাজিক সমরাষ্ট্র ভোজ প্রকল্প’।
বিজেপি চাইছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে দলিতদের সঙ্গে সামাজিক ঐক্য গড়ে তুলতে। তাই এই প্রকল্পকে সঙ্গে নিয়ে এবার বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা যাচ্ছেন দলিত মানুষের ঘরে। কখনো মধ্যাহ্নভোজ, কখনোবা নৈশভোজ সেরে নিচ্ছেন। দলিত ব্যক্তিরাও খুশি হচ্ছেন। এত বড় মাপের নেতারা তাদের ঘরে আসছেন। তাদের পরিবারের হাতের রান্না করা খাবার খাচ্ছেন।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ গত বছর পশ্চিমবঙ্গে এসে দার্জিলিংয়ের নকশালবাড়িতে এক দলিত পরিবারে মধ্যাহ্নভোজ সারেন। গত বছরের ২৫ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন তিনি। এসেই প্রথম দিনে সভা করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার নকশালবাড়িতে। সেদিন দুপুরে আদিবাসী দলিত দিনমজুরের বাড়িতেই আতিথ্য নিয়ে মধ্যাহ্নভোজন করেছিলেন অমিত শাহ এবং তাঁর দলবল। খেয়েছিলেন নিরামিষ খাবার। ভাত, ডাল, সবজি, চাটনি ইত্যাদি। পরিবেশন করেছিলেন ওই দলিত গ্রামবাসী রাজু মাহালির স্ত্রী গীতা মাহালি।
সেই একই পথ ধরে এ বছরের গত ২৬ এপ্রিল উত্তর প্রদেশের বিজেপি দলীয় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও নৈশভোজ খেতে হাজির হয়েছিলেন এক দলিত সম্প্রদায়ের বাড়িতে। উত্তর প্রদেশের আমরোহা জেলার মেহেন্দি গ্রামের দলিত গ্রামবাসী গজেন্দ্র সিংয়ের বাড়িতে যোগী আদিত্যনাথ খান নিরামিষ আহার। ছিল পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া রান্না করা ভাত, ডাল, রুটি ও লাউয়ের তরকারি।
যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে ছিলেন আরও ১৫ জন। তাঁদের মধ্যে স্থানীয় সাংসদ কানওয়ার সিং, রাজ্যের মন্ত্রী চেতন চৌহানসহ বিজেপির নেতারা ছিলেন। তারপর যোগী আদিত্যনাথ স্থানীয় আরএসএস পরিচালিত শিশু মন্দির বিদ্যালয়ে রাতে থাকেন। এখানেও আদিত্যনাথের লক্ষ্য ছিল দলিত ভোটের রাজনীতি।
সেদিন মুখ্যমন্ত্রী যোগী খাবার খাওয়ার আগে পুরো গ্রামটি শ্যাম্পু দিয়ে ধোয়া হয়। নতুন বাসন কেনেন দলিত গ্রামবাসী গজেন্দ্র সিংয়ের স্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে লিটার লিটার মিনারেল ওয়াটার আনা হয়েছিল।
সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার। এই ঘটনার স্থানও উত্তর প্রদেশ। উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী সুরেশ রানা দলীয় কয়েকজন নেতাকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন আলিগড় জেলার লোহাগড়ে। আগেই খবর দেওয়া ছিল, তিনি দলিত গ্রামবাসী রজনীশ কুমারের বাড়িতে নৈশভোজ করবেন। সেভাবে রজনীশের পরিবার মন্ত্রীর জন্য খাবার রেঁধেছিলেন। কিন্তু মন্ত্রী এবং তাঁর দলবল তাঁদের জন্য রান্না করা খাবার না খেয়ে বাজার থেকে এনে অন্য খাবার খান। সেই খাবারে পোলাও, পনির, ডাল মাখানি, গোলাব জাম ইত্যাদি ছিল।
এ ঘটনাটি প্রচারের আলোতে আসার সঙ্গে সঙ্গে নড়েচড়ে বসে বিজেপি। রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য এ নিয়ে কথা বলেন ওই মন্ত্রীর সঙ্গে। মন্ত্রী বলেন, আগে থেকে খাবারের কথা বললেও ওই পরিবার তার ব্যবস্থা করেনি। তাই তাঁকে বাইর থেকে খাবার এনে খেতে হয়।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী বলেছেন, দলিত মানুষের শুদ্ধ করার ক্ষমতা তাঁর নেই। তাই তাদের বাড়িতে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। বলেন, ‘আমি রাম নই, তাই দলিতদের বাড়িতে খেয়ে তাদের শুদ্ধ করার ক্ষমতা আমার নেই। বরং দলিতদের আমার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে এনে খাওয়াতে বেশি পছন্দ করি। দলিতদের বাড়িতে এনে খাওয়ালে আমরা শুদ্ধ হব।’
এই ঘটনাকে বিরোধীরা সুনজরে নিতে পারেনি। বলেছে, এটা বিজেপির দলিতদের ভোট আদায়ের নতুন কৌশল। উত্তর প্রদেশের কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি রাজ বব্বর বলেছেন, ‘আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে, বিজেপি দলিতদের নিয়ে ভোট রাজনীতি শুরু করেছে।’ অন্যদিকে, বিরোধী বহুজন সমাজবাদী পার্টির নেত্রী মায়াবতীও বলেন, নিজের খাবার, এমনকি খাবারের থালাবাসন এনে এতে খেয়ে রাজনীতিতে চমক দিতে চাইছে বিজেপি। কিন্তু মানুষ ধরে ফেলেছে বিজেপির এই কৌশলকে।