সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
নববর্ষের প্রথম প্রহরে ভারতের বেঙ্গালুরুতে নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন সমাজবাদী দলের বিধায়ক আবু আজমি। এই শ্লীলতাহানির জন্য তিনি তরুণীদের ‘ছোট পোশাককে’ দায়ী করেছেন। আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে আবু আজমি এই মন্তব্য করেন।
আজমির বিবৃতির বরাত দিয়ে আজ ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নববর্ষের রাতে বেঙ্গালুরুতে শ্লীলতাহানির ঘটনায় নারীদের ছোট পোশাক দায়ী। মেয়েরা এখন নগ্ন ফ্যাশনে মত্ত। তাই এমনটা ঘটতে বাধ্য। তাঁরা ছোট ছোট পোশাক পরছেন। মেয়েদের অবশ্যই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাইরে যাওয়া উচিত।’ বিবৃতিতে মেয়েদের ভারতীয় সংস্কৃতি অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়ে আবু আজমি বলেন, ‘আমার বোন বা মেয়েদের রাতে পরিবারের সদস্য ছাড়া বাইরে যাওয়া আমিও মোটেও বরদাশত করি না।’
আবু আজমি আরও বলেন, ‘ছোট পোশাক পরে মধ্যরাতে পার্টি করাটা পশ্চিমা সংস্কৃতি। এটা আমাদের সংস্কৃতি নয়। আমি বলছি, যা ঘটেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। সন্দেহ নেই যে নিরাপত্তাব্যবস্থা ঠিক ছিল না। কিন্তু তারপরও নারী ও তাঁদের পরিবারের আগে থেকেই নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত। আর এটা ঘর থেকেই নিতে হয়। আমাদের নারীদের নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে নিজেদের অবশ্যই চিন্তা করতে হবে।’
এনডিটিভি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ওই বিবৃতিতে আবু আজমি আরও বলেছেন, যদি নারীরা বাবা বা স্বামীর সঙ্গ না পান, তাহলে তাঁরা বাইরে অন্য মানুষের সঙ্গ প্রত্যাশা করবেন। তাঁদের কাছ থেকে নারীদের সম্মান প্রত্যাশা করাটা ভুল। কারণ, কোথাও যদি চিনি ছিটানো থাকে, তাহলে সেখানে পিঁপড়া আসবেই। কেউ পেট্রল হয়ে আগুনের দিকে এগোলে সেখানে আগুন জ্বলবেই।’
শুধু আবু আজমিই নন, তাঁর আগে এই ঘটনা নিয়ে কিছুটা একই ধরনের মন্তব্য করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বর। তিনি বলেছেন, মেয়েরা এভাবে পশ্চিমা সংস্কৃতি হুবহু নকল করার কারণেই এমন শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। এটা কারও মানসিক কারণে ঘটেনি। ঘটেছে মেয়েদের ছোট পোশাক পরার কারণেই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন অনেকেই। ন্যাশনাল কমিশন ফর ওমেনের প্রধান ললিতা কুমারামঙ্গলাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ক্ষমা চেয়ে তাঁর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। শুধু তা–ই নয়, নারীদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বর ও আবু আজমির বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে এই কমিশন। কমিশনে তাঁদের ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে পুলিশ কেন নীরব ভূমিকা পালন করেছে, তা–ও জানতে চেয়েছে কমিশন।
এর আগেও নারীদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করায় বেশ তোপের মুখে পড়েছিলেন আবু আজমি। এমন মন্তব্যে তাঁর ছেলে ফারহান আজমি ও পুত্রবধূ অভিনেত্রী আয়শা টাকিয়া এতে বিব্রত হয়ে টুইট করেছিলেন।
৩১ ডিসেম্বর নববর্ষের রাতে বেঙ্গালুরুর এমজি রোডে হাজারো মানুষের সমাগম হয়। সেখানে অসংখ্য তরুণী ও নারীদের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সাহায্যের জন্য চিৎকার করেও কারও সাড়া পাননি নারীরা। আরও অভিযোগ, ঘটনাস্থলে থাকা প্রায় দেড় হাজার পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করেছে।
সূত্র : প্রথম আলো