সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামী। দলটির মধ্যে এ নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, কেন্দ্র থেকে জামায়াতের মজলিসে শুরার একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এ প্রশ্নে মতামত চাওয়া হয়েছে। ওই মতামত পাওয়া গেলে কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে জামায়াত আনুষ্ঠানিকভাবে জাতির কাছে ক্ষমা চাইবে। তবে বিএনপির একাধিক নেতাকে জামায়াতের পক্ষ থেকে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা এরই মধ্যে জানানো হয়েছে।
সুধীসমাজের প্রতিনিধি গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাম্প্রতিককালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও একাধিক সেমিনারে জামায়াতকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ছাড়া বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জামায়াতেরই বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করা উচিত বলে মতামত দিয়েছেন। যদিও এ ঘটনায় জামায়াত বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে দলটি এ প্রশ্নে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে আছে।
এমনকি জোটের নেত্রী খালেদা জিয়াও জামায়াতকে নিয়ে রাজনৈতিকভাবে সংকটের মধ্যে পড়েছেন বলে ২০ দলীয় জোটের মধ্যেই আলোচনা আছে। আর এ কারণেই সাম্প্রতিককালে ডা. জাফরুল্লাহর ওই পরামর্শ দেওয়ার ঘটনারও প্রশংসা করেছেন খালেদা জিয়া। জাফরুল্লাহকে তিনি জানিয়েছেন, জামায়াতের ব্যাপারে তাঁর ওই পরামর্শ ভালো।
জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জামায়াতকে ক্ষমা চাওয়ার যে পরামর্শ আমি দিয়েছিলাম সেটি করলে তারা ভালো করবে। কিন্তু তারা কী করছে সেটি আমার জানা নেই।’
এর আগে ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার একটি প্রস্তাব নিয়ে জামায়াতের ভেতরে আলোচনা হয়েছিল বলে জানা যায়।
ওই সময় ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ও মীর কাসেম আলীসহ কয়েকজন নেতা ওই প্রস্তাব তুলেছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল—ক্ষমতায় থাকার ইতিবাচক এই সময়ে এ প্রশ্নে ক্ষমা চাইলে রাজনৈতিকভাবে জামায়াতের কোনো ক্ষতি হবে না।
কিন্তু তৎকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া নেতাদের বিরোধিতার কারণে ওই প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে জামায়াত অত্যন্ত বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ‘ক্ষমা’ চাইলে তা দলটিকে চাপের মধ্যেই করতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে জামায়াতের একজন নায়েবে আমির ও নির্বাহী পরিষদের এক সদস্যের সঙ্গে আলাপ করলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে তাঁরা বলেন, এ প্রশ্নে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সবাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানানো হবে।