‘এই মেয়ে তোর সঙ্গে যায় না’ এই মন্তব্য নিয়ে গতকাল সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানা এলাকার শ্রমিক লীগ নেতা মো. ইলিয়াস (৪৫)। অফিসে শালিসের একপর্যায়ে ইলিয়াস একপক্ষকে বলেন ‘শালাদের মার’। এরপর একপক্ষের লোকজনের ছুরিকাঘাতে নিহত হন মাসুম (৩০) ও সবুজ (২০)।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত ইলিয়াসকে কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বাকি সাতজনকে থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আটজনসহ মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে পাহাড়তলী থানায় মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন।
থানা পুলিশ ও মহানগর ডিবির কর্মকর্তারা জানান, ইলিয়াস পাহাড়তলী এলাকায় শ্রমিক লীগের নেতা হিসেবে পরিচিত। ওই এলাকার বিভিন্ন কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে কাজ করা শ্রমিক ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের নিয়ে তিনি রাজনীতি করে থাকেন। সোমবারের ঘটনায় জড়িত দু’পক্ষই তার সঙ্গে রাজনীতি করতেন।
ঘটনার বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সোমবার বিকেলে শিহাব নামে একজন তার বান্ধবী নিয়ে স্টেডিয়াম এলাকায় বসে ছিলেন। এ সময় রবিউল নামে একজন এসে শিহাবকে বলেন, ‘এই মেয়ে তোর সঙ্গে যায় না’। বান্ধবীর সামনে এমন কথা বলায় ক্ষিপ্ত হন শিহাব। দুজনের মধ্যে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে মারামারি হয়। এরপর দুজনই তাদের বন্ধুবান্ধবদের খবর দেন।
একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে শালিস বসে পাহাড়তলী থানার বিটাক মোড় এলাকায় নেতা ইলিয়াসের অফিসে। সেখানে বিচারের একপর্যায়ে ইলিয়াস আদেশ দেন ‘শালাদের মার’ বলে। নেতার আদেশ পেয়ে ফয়সাল, বাবু, বিপ্লব, কার্তিকসহ আরও ১০ থেকে ১৫ জন মিলে মাসুম এবং সবুজকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রাম ডিবি বন্দর জোনের উপ-কমিশনার (ডিবি) আলী হোসেন বলেন, মূলত ইলিয়াসের নির্দেশের পর এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তাকে সোমবার রাতেই পালিয়ে যাওয়ার সময় কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাকে পাহাড়তলী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশ পশ্চিম জোনের ডিসি জসীম উদ্দিন বলেন, কথিত শ্রমিক নেতা ইলিয়াসের অফিসে শালিসি বৈঠকের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই আমরা সেখানে গিয়েছি। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি এবং স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সব মিলিয়ে মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তারা হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।