অসহায়দের পাশে নিরবে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় ক্রিকেট দল

চারদিনের ম্যাচে পরাজয় এড়াতে ব্যাট বল নিয়ে সবুজ ঘাসের গালিচা কিংবা বাইশ গজের উইকেটে নয়। এবার করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় নানা শ্রেণী পেশার মানুষদের জীবনযুদ্ধে জয়ী করতে, অনেকটা নিরবেই বুক চিতিয়ে লড়ে যাচ্ছে, রাজশাহী বিভাগীয় ক্রিকেট দল! সাবেক ও বর্তমান বহু অসচ্ছল ক্রিকেটার, কোচ এবং গ্রাউন্ডসম্যানদের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি, কর্মহীন নিম্ন আয়ের সাধারন মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা পৌছে দিতে একজোট হয়ে রাত-বিরেতে নিরন্তন ছুটে চলেছেন তাঁরা।

২৫ শে মার্চ থেকে সারা দেশব্যাপী লকডাউন শুরু হলে, কর্মহীন হতদরিদ্র নানা শ্রেণীপেশার মানুষের কথা ভেবে রাজশাহী বিভাগীয় দলের ক্রিকেটাররা তাঁদের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরী ফান্ডের অর্থ দিয়ে অসহায় সব মানুষের পাশে দাড়ানোর নীতিগত স্বীদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সীদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই এপ্রিল থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে, অনেকটা লোক চক্ষুর অন্তরালেই, প্রায় তিন শতাধিক দরিদ্র পরিবার এর কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেন বিভাগীয় দলের ক্রিকেটাররা।

করোনার প্রভাব দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকলে তাঁরা সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কর্মহীন হয়ে পড়া ক্রিকেট কোচ, অসচ্ছল ক্রিকেটার এবং গ্রাউন্ডসম্যানদের পাশে দাড়ানোর জন্য একটি বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহন করেন। সেই পরিকল্পনারই অংশ হিসাবে কয়েক দফায় বিভিন্ন ক্রিকেট একাডেমির কোচ ও অসচ্ছল ক্রিকেটারদের পাশাপাশি গ্রাউন্ডসম্যান দের মাঝেও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন রাজশাহী বিভাগীয় দলের ক্রিকেটাররা। এখানেই থেমে থাকেনি তাঁদের এই মহতী কর্মযজ্ঞ! ঈদ আনন্দ যেন সকলেই সমান ভাবে ভাগ করে নিতে পারে, সে লক্ষ্যে নানা ধরণের কর্মসূচীও হাতে নিয়েছেন তাঁরা! ইতিমধ্যে প্রায় কয়েকশত পরিবারের মাঝে নগদ অর্থের পাশাপাশি তুলে দেওয়া হয়েছে বিশেষ খাদ্য সামগ্রীও! তবে এসব মহতী সামাজিক কর্মযজ্ঞের পুরোটাই তাঁরা করে যাচ্ছেন অনেকটাই লোক চক্ষুর অন্তরালেই।

কিন্তু কেন সবকিছুই প্রচার প্রচারণার বাইরে থেকে করা হচ্ছে বা তাঁদের এই সামাজিক কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য-ই বা কি? আর কতদিনই বা এই কার্যক্রম চলমান থাকবে, তা নিয়ে কথা বলতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় দলের কোন ক্রিকেটারই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হলেও, নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, “করোনায় হঠাৎই কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় মানুষদের কথা ভেবে আমরা বিভাগীয় দলের ক্রিকেটাররা এক হয়ে তাঁদের পাশে দাড়ানোর সীদ্ধান্ত নিই!

” “নিজেদের বিপদ আপদের কথা ভেবে বিশেষ ফান্ড গঠন করে অনেক অাগে থেকেই প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ হতে প্রাপ্ত নিজেদের ম্যাচ ফির একটা বড় অংশ আমরা প্রায় সবাই জমা করতাম। কয়েক বছরে ধরে তাতে অনেক টাকাও জমা হয়েছিলো! করোনা শুরুর পরপরই এক জরুরী সভায় আমরা সকলেই সেচ্ছায় সেই ফান্ডের সমস্ত অর্থ সমাজের অসচ্ছল ও হতদরিদ্র মানুষদের মাঝে ব্যয় করতে সম্মত হই! আর সে সীদ্ধান্ত অনুযায়ী এপ্রিলের প্রথম দিকেই আমরা কয়েকশত পরিবারের পাশে দাড়ায়!”

“করোনার এ প্রভাব দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলে পরবর্তীতে আমরা ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা ক্রিকেট এ্যাকাডেমির সম্মানিত কোচদের পাশাপাশি অসচ্ছল ক্রিকেটার ও গ্রাউন্ডসম্যাদেন পাশেও দাড়ানোর সীদ্ধান্ত গ্রহণ করি।” নিজেদেরকে লোকচক্ষুর আড়ালে বা প্রচার প্রচারণার বাইরে রাখার কারন জানতে চাইলে তিনি জানান, “এই কাজটি করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব! আর নৈতিক এ দায়িত্ব পালনের বিষয়টি ঢাকঢোল পিটিয়ে বলার কিছু আছে বলে আমরা কখনো মনে করিনি! আমরা কেবল চেয়েছি কিছু মানুষের মুখে হাসি ফুটুক। এইটা তাঁদেরই হক, তাঁদেরই অধিকার।

তাঁদের হক বা অধিকার তাঁরাই বুঝে নিবেন, এতে মানুষকে জানানোর কি আছে?” নিজেদের সঞ্চয়টুকু এভাবে শেষ করে ফেলছেন, কেমন লাগে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান “যে সকল অতি সাধারণ মানুষের দোয়ায় এই পর্যায়ে আসতে পারা, যে কোচদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ ক্রিকেটার হওয়া, যে সব গ্রাউন্ডসম্যানদের প্রচেষ্টায়, যে সকল ক্রিকেটারদের সাপোর্টে ক্রিকেট খেলা, তাঁদের বিপদেই যদি এই অর্থটা কাজে না লাগে, তবে কিইবা মূল্য থাকে এর? তারা তো আমাদের সব কিছু গোপনেই দিয়ে গেছে, তাই আমরাও তাঁদের বিপদে গোপনেই কাজ করে যাচ্ছি। যদি তাঁদের দোয়া ও সহযোগিতায় আবার মাঠে ফিরতে পারি, তবে হয়তো এমন অর্থ আবারও আসবে, আবারও আমাদের শূন্য ফান্ড অর্থে পূর্ণ হয়ে যাবে।”