সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
সংস্কার দ্রুত শেষ করে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করে অনিশ্চয়তা দূর করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, অনিশ্চয়তা ও শূন্যতা নানা ধরনের জটিলতা এবং অপলাপের জন্ম দেয়। তা রোধ করার জন্য নির্বাচনের সুষ্ঠু ও অবাধ পরিস্থিতি তৈরিতে করণীয় নির্ধারণ, তার জন্য সময়সীমা ঠিক করে একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন ঘোষণা করা হলে সবার জন্য কাজ করা সহজ হবে।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের আইএবি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের একশ দিনের কার্যক্রম ও দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ৬ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।সেগুলো হলো- রাষ্ট্রের ওপরে নিয়ন্ত্রণ স্পষ্ট করা, নিয়োগের ক্ষেত্রে দোদুল্যমানতা পরিহার, নতুন উপদেষ্টাসহ সব নিয়োগে সচ্ছতা, সংস্কার কার্যক্রম গতিশীল ও গণসম্পৃক্ত করা, দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা এবং পতিত স্বৈরাচারের বিচার।
চরমোনাই পির প্রত্যাশা করেন, দীর্ঘদিন জনতার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা, জনমতকে ধারণ করা এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে অবিরাম লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা থেকে এ প্রস্তাবনাগুলো অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আমলে নেবেন। অন্যথায় কালো মেঘের আনাগোনা আরও প্রকট হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কার কথাও জানান তিনি।
একশ দিন অতিবাহিত করলেও রাষ্ট্রের ওপর অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণ স্পষ্ট নয় বরং দুর্বলতা স্পষ্ট বলে মনে করেন সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, গত পনেরো বছরে পতিত সরকার জনপ্রশাসনের সব স্তরে যেভাবে দলীয়করণ করেছে, তাতে জনপ্রশাসনের পুরোটাই আওয়ামী দলীয় ক্যাডারে পরিণত হয়েছে। সেই বাস্তবতায় সরকারের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনা করা কঠিন- তা আমরা বুঝতে পারি। তারপরও বলতে বাধ্য হচ্ছি , একশ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও রাষ্ট্রের ওপরে অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণ স্পষ্ট না বরং দুর্বলতা স্পষ্ট। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীনতা, পোশাক খাতে অরাজকতা, পুলিশ বাহিনী সক্রিয় না হওয়া, ট্রাফিক ব্যবস্থা কার্যকর না হওয়াসহ অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে স্থবিরতা জাতির আশাকে ম্লান করে দিচ্ছে।
চরমোনাই পির বলেন, জনপ্রশাসন দীর্ঘদিনের চর্চা ও অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা রীতি ও জ্ঞানে পরিচালিত হয়। কিন্তু এটা এমন কোনো জটিল টেকনোলজি নয় যে, নির্দিষ্ট কিছু প্রশিক্ষিত লোক ছাড়া আর কেউ বুঝবে না বা চালাতে পারবে না। তাই আমরা সরকারকে পরামর্শ দেব, এখনো যারা আপনাদের নেতৃত্ব মেনে নিতে দ্বিধা করছে বা স্বৈরাচারের পদলেহন করছে তাদের ব্যাপারে শক্ত হোন। তাদেরকে ছুড়ে ফেলুন।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘকালীন প্রতিষ্ঠিত স্বৈরাচারী শাসনের উৎখাতের পরে গঠিত সরকারের সার্বিক মূল্যায়নের জন্য একশ দিন যথেষ্ট নয়।কিন্তু একশ দিন একটি মাইলফলক। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাহীন এই সরকারের জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো বিরোধী দল নেই। এই সরকার জনতার, জনতাই এই সরকারের শক্তি ও এই সরকারের দর্পন। স্বৈরাচারী ব্যবস্থার স্থায়ী বিলোপ নিশ্চিত করতে এই সরকারকে সফল হতেই হবে। আর সেজন্য দরকার তাদের কাজের নির্মোহ পর্যালোচনা। যা তাদের ভালো কাজে উৎসাহ দেবে, ত্রুটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে সতর্ক করবে।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আমিনুল ইসলাম, প্রকৌশলী আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম আতিকুর রহমান, প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, মাওলানা এবিএম জাকারিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, মাওলানা খলিলুর রহমান, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, অ্যাডভোকেট বরকত উল্লাহ লতিফ, মাওলানা নুরুল করীম আকরাম প্রমুখ।
সূত্র: যুগান্তর