সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রের ৬০তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ। এবার দেশটিতে প্রায় ২৪ কোটি ৪০ লাখ ভোট দেওয়ার যোগ্য নাগরিক রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার কয়েক কোটি ভোটার সশরীরে ভোট দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে আট কোটি ২০ লাখের বেশি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন।
শেষ মুহূর্তের জনমত জরিপে ডেমোর্ক্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলেছে। তাই কমলা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়তে চলেছেন নাকি ট্রাম্প পুনরায় হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব নিতে চলেছেন—এই মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আর জনমত জরিপে দেওয়া আভাসের সঙ্গে ভোটের ফল মিলে গেলে এই প্রশ্নের উত্তর পেতে কিছু সময় অপেক্ষা করা লাগতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে পূর্ব উপকূলের ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যে সবার আগে শুরু হয় ভোটগ্রহণ।
স্থানীয় সময় গতকাল ভোর ৫টা থেকে অঙ্গরাজ্যটির কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এরপর নিউইয়র্ক ও ভার্জিনিয়ায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ। রাত ৭টা থেকে ১১টার মধ্যে দেশটির সব অঙ্গরাজ্যে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার কথা। পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ৬৬ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন, যা ১৯০০ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে অন্তত ২৭০টি পেতে হয়। জনসংখ্যার অনুপাতে দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যে এই ইলেকটোরাল কলেজ ভোট বরাদ্দ থাকে। ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ৪৮টির ক্ষেত্রে নিয়ম হলো—যে প্রার্থী এসব অঙ্গরাজ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটে জয়ী হবেন, সেখানকার সব ইলেকটোরাল কলেজ ভোট তিনিই পাবেন।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এবারের নির্বাচনের ফলাফল পেতে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না। তবে ভিন্নমতও আছে।
অনেকে আবার বলছেন, নির্বাচনে কে জয়ী হচ্ছেন, তা জানতে কয়েক দিনও লাগতে পারে।
২০২০ সালের নির্বাচনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনকে জয়ী ঘোষণা করেছিল ৭ নভেম্বর। কিন্তু নির্বাচন শেষ হয়েছিল এর আগের মঙ্গলবার। ২০১৬ ও ২০১২ সালে অবশ্য ভোটারদের ফলাফল পেতে কম সময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ভোট গণনার পদ্ধতি একেক জায়গায় একেক রকম হওয়ায় ফল ঘোষণায় বিলম্ব হতে পারে। এ ছাড়া সশরীরে দেওয়া ভোট গণনার পর সাধারণত আগাম ভোট ও ডাকযোগে পাঠানো ভোট গণনা করা হয়। এ কারণেও ফল পেতে কিছুটা দেরি হতে পারে। ফলাফল ঘোষণার পর ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলের বাইরে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে শপথ পড়াবেন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি।
এদিকে সশরীরে দেওয়া ভোটের ফল দেখে অনেকেই বিভ্রান্ত হতে পারেন। কারণ কোনো প্রার্থী যদি সশরীরে দেওয়া ভোটের ফলাফলে এগিয়ে থাকে, তাহলে তিনি জয়ী হবেন এমনটা ভাবার সুযোগ নেই। এ কারণে ডাকযোগে পাঠানো ভোট ও অন্যান্য মাধ্যমে পাঠানো ভোট সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দিতে পারে। ২০২০ সালের নির্বাচনে মিশিগানে এমন ঘটনা ঘটেছিল। শুরুর দিকে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প, পরে সার্বিক ভোট গণনার পর জয়ী হন বাইডেন।
এবারের নির্বাচন শুধু বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার লড়াই নয়। ভোটের মধ্য দিয়ে আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেবেন মার্কিন ভোটাররা।
এবার দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য অ্যারিজোনা ও নেভাডাসহ ১০টি অঙ্গরাজ্যের ব্যালটে গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়টি উল্লেখ থাকছে। মার্কিন আইনসভার উচ্চকক্ষ সিনেটের ১০০টি আসনের মধ্যে ৩৪টিতে নির্বাচনের লড়াই চলেছে, যেখানে রিপাবলিকানদের চেয়ে একটি আসন বেশি আছে ডেমোর্ক্যাটদের। অন্যদিকে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ আসনের সব কটির নির্বাচন চলেছে।
এদিকে ফ্লোরিডা, নেব্রাস্কা, নর্থ ডাকোটা ও সাউথ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যে বিনোদন বা চিকিৎসার জন্য গাঁজার ব্যবহারের কথা ব্যালটে উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া কিছু এলাকায় ভোটদান ও নির্বাচন পদ্ধতি ঠিক করা নিয়ে গণভোটের উল্লেখ রয়েছে ব্যালটে।
এদিকে স্থানীয় সময় গত সোমবার মধ্যরাতে শেষবারের মতো প্রচার চালিয়েছেন কমলা ও ট্রাম্প। পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়ায় প্রচারণা চালানোর সময় কমলা বলেন, ‘পরিস্থিতি আমাদের পক্ষে রয়েছে।’ তবে কমলা সতর্ক করে বলেন, ‘এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতে পারে। তাই প্রতিটি ভোট গুরুত্বপূর্ণ।’ এ সময় সংগীতশিল্পী লেডি গাগা ও উপস্থাপিকা অপরাহ উইনফ্রের মতো তারকারা কমলার সঙ্গে মঞ্চে যোগ দেন।
এদিকে সমাপনী বক্তব্যে মিশিগানের র্গ্যান্ড র্যাপিডসে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনাদের ভোট পেলে আমরা দেশের প্রতিটি সমস্যার সমাধান করতে পারব এবং যুক্তরাষ্ট্রকে গৌরবের নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারব।’
ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হলে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত কোনো ব্যক্তি প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন তাৎক্ষণিকভাবে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে ইন্ধন দেবে। বিশেষ করে তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্র ও ন্যাটোর শঙ্কা বাড়বে। এ ছাড়া আমদানি পণ্যে তাঁর উচ্চ করারোপের ঘোষণার কারণে ব্যাবসায়িক অংশীদাররাও শঙ্কায় থাকবেন।
তবে কমলা জিতলে প্রথমবারের মতো নারী ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট পাবে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে শেষ হবে ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, কারণ এরই মধ্যে ২০২৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।
পুরো বিশ্বের উদ্বিগ্ন নজর এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের দিকে। কারণ নির্বাচনের ফলাফল ঠিক করে দেবে মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার ভবিষ্যৎ।
সূত্র: কালের কণ্ঠ