রবিবার , ২০ অক্টোবর ২০২৪ | ৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

‘সাধারণ শিক্ষার্থী মানেই শিবির’ ছাত্রলীগ কর্মীর সঙ্গে ছাত্রদল নেতার অডিও ফাঁস

Paris
অক্টোবর ২০, ২০২৪ ৭:১২ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রদল নেতা হাসিবুল ইসলাম হাসিব মোবাইল কলে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে বলেছেন, ‘এখন আপনাদের সব থেকে বড় শত্রু সাধারণ শিক্ষার্থী আর সাধারণ শিক্ষার্থী মানেই শিবির।’ সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ কর্মীর সঙ্গে কথোপকথনে রাবি জিয়া সাইবার ফোর্সের সাধারণ সম্পাদক দাবি করা এই ছাত্রদল নেতার দুই মিনিট ৫১ সেকেন্ডের ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডে এমন মন্তব্য শোনা গেছে।

পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় রাবি ছাত্রলীগের ১০১ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে গত ৬ অক্টোবর নগরীর মতিহার থানায় মামলা করেন শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আহসান হাবীব। মামলা থেকে ছাত্রলীগের এক কর্মীর নাম বাদ দেওয়ার বিষয়ে তার সঙ্গে মোবাইলে কথোপকথনের আরেকটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ৫২ সেকেন্ডের ওই কল রেকর্ডও বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে। অডিও ফাঁসের এসব ঘটনায় এরই মধ্যে হাসিবুল ইসলাম হাসিব এবং মোহাম্মদ আহসান হাবীবকে অব্যাহতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। শনিবার (১৯ অক্টোবর) ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের দফতর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবীবকে সাংগঠনিক পদ থেকে এবং ছাত্রনেতা হাসিবুল ইসলাম হাসিবকে প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন।

দুই মিনিটি ৫১ সেকেন্ডের ফাঁস হওয়া কথোপকথনে ছাত্রলীগের কর্মীকে হাসিবুল ইসলাম হাসিব বলেন, ‘শুনেন এখন আপনাদের (ছাত্রলীগ) সব থেকে বড় শত্রু কে জানেন? জবাবে ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, কে ভাই? হাসিব বলেন, কে বড় শত্রু বলেন তো? ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনও আইডিয়া নেই, ভাই। হাসিব বলেন, সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থী। আর এরা হচ্ছে শিবির। সাধারণ শিক্ষার্থী মানেই শিবির। এই শালারা হচ্ছে সব শিবির। এরা খেলছে, যদি আমরা আপনাদের থেকে দূরে সরে আসি, তারা কিন্তু আপনাকে ছাড় দেবে না প্রথমত। আর দ্বিতীয়ত এখনও তো প্রশাসন কর্তৃক কোনও মামলা হয়নি।’

অডিওতে হাসিব আরও বলেন, ‘আমাদের মামলার লিস্ট দেখছেন?’ জবাবে ছাত্রলীগ নেতা বলেন- জি, ভাই দেখলাম। হাসিব বলেন, আমাদের মামলা এখনও এন্ট্রি হয়নি, কাল হবে। আমরা তো একটা মামলা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন আরেকটা মামলা করবে। লিস্ট তো দেখেছেনই। এ লিস্ট অনুযায়ী আরেকটা মামলা হবে। যেটা হল প্রশাসন করবে। আপনার সেশন কত ছিল। কিবরিয়া কমিটির (রাবি ছাত্রলীগের বিগত কমিটি) কোনও পদে ছিলেন? সে কমিটিতে কোনও পদে ছিলাম না বলেন ছাত্রলীগ কর্মী।’

এরপর হাসিব বলেন, ‘আপনি ফোন দিয়েছেন। আপনার সোহরাওয়ার্দী হলে আবার সভাপতি নিয়াজ (হল শাখা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সভাপতি) আছে। নিয়াজ আসলে আমার ডিপার্টমেন্টের ছোট ভাই। সেও ফোন দিচ্ছে। আপনারা তো বোঝেন। আমি নাম বাদ দিতে বললে বলবে আমি দালাল। আমি টাকা খেয়ে এই কাজ করেছি। তো এটা আমি কৌশলে একটু আলোচনা করি। আলোচনা করে কল দেবো। আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। ফোনের ওপাশ থেকে ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জি, ভাই আপনার কথা শুনেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে গ্রুপিংয়ের কথা উল্লেখ করে অডিওতে হাসিব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নেতাকে বলেও লাভ হবে না। আমাদের একটা গ্রুপ আছে। রাজনীতিতে একটা গ্রুপিং আছে। ছাত্রলীগ নেতা বলেন, অবশ্যই, জি ভাই। হাসিব বলেন, আপনি মনে হয় জানেন না। আপনি যদি আবিরকে বলেন, এখন আবির যার সঙ্গে রাজনীতি করে তাকে দিয়েও যদি বলানো হয় লাভ নাই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সর্বোচ্চ নেতা কে? আহ্বায়ক রাহি, ভাই। তিনিও যদি আমাকে মানা করে মামলাটা করো না, তাও লাভ হবে না। ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জি, ভাই। হাসিব বলেন, আমরা এন্টি রাজনীতি করি। সভাপতি-সেক্রেটারির এন্টি রাজনীতি করি ক্যাম্পাসে। ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ভাই বুঝতে পারছি। হাসিব বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা নিই। আমরা যেটা করবো সেটাই। তবে আমি একটু আপনার বিষয়ে কথাবার্তা বলি।’

এ ছাড়া আরেক ছাত্রলীগ কর্মীর সঙ্গে কথোপকথনের ফাঁস হওয়া ৫১ সেকেন্ডের অডিওতে আহসান হাবীবকে বলতে শোনা যায়, ‘আসামি তো অনেকগুলো। তোমার জায়গায় আরেকটা নাম বসিয়ে দেবো। নিজে বাঁচলে বাপের নাম। দলের দিকে দেখে লাভ নাই। তুমি নিজে বাঁচো আগে। একটা মামলা খেয়ে গেলে কেউ দেখবে না। একটা পলিটিক্যাল মামলা ১০-১৫ বছর চলে।’ এ সময় তিনি মোবাইলের অপর পাশে থাকা ছাত্রলীগ কর্মীকে রুনু-কিবরিয়া কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাঠাতে বলেন।

ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে আহসান হাবীব বলেন, ‘রেকর্ডটি এডিট করা। রেকর্ডটির বিপরীত পাশে কোন ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে কথা বলছি, এটা তো কেউ বলছেন না।’

এ ছাড়া হাসিব নিজেকে রাবি শাখা জিয়া সাইবার ফোর্সের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিলেও সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদক জাকারিয়া জাকির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রাবিতে এই সংগঠনটির কমিটি নেই। তবে রাজশাহী বিভাগে সংগঠনটির কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।

ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডের বিষয়ে জানতে হাসিবুল ইসলাম হাসিবের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহি বলেন, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে রাবি ছাত্রদলের দুজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এটা অবশ্যই একটা ভালো উদাহরণ। বড় পদের কিংবা কর্মীদের মধ্যে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে ছাত্রদলে থাকার সুযোগ নেই।’

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

সর্বশেষ - শিক্ষা