বইয়ের কেজি ৭০ টাকা!

জেসমিন আরা ফেরদৌস:

বই মানুষকে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করে। সাধারণত লাইব্রেরিতেই জ্ঞানের ভাণ্ডার এই বই কিনতে পাওয়া যায় এমন ধারনাই সবার কাছে বদ্ধমূল। পাঠক বা শিক্ষার্থীরা জ্ঞানের পিপাসা মিটাতে বই কিনতে তাই প্রতিনিয়ত  লাইব্রেরিতেই ছুটে যান। নতুন নতুন বই কিনতে তাদেরকে মোটা অংকের  টাকা ব্যয় করতে হয়।

কিন্তু সকল মেধাবী এবং জ্ঞানপিপাসুর পক্ষে এই ব্যয় বহন করা অনেকক্ষেত্রে হয়ে পড়ে বেশ কষ্টসাধ্য। আর তাদের কথা মাথায় রেখে এক ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়েছে ‘পুরাতন লাইব্রেরি’র মালিক মো.আফতাব হোসেন মামুন। তার এই লাইব্রেরিতে বই বিক্রি হয় কেজিতে!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারের পশ্চিমে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত এ লাইব্রেরি যেখানে বই বিক্রি হয় ৭০ টাকা কেজি দরে। শুক্রবার (১৯ মার্চ) সারেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ চাকুরিপ্রত্যাশী অনেক শিক্ষার্থী এখানে তাদের প্রয়োজনীয় বই কিনতে ব্যস্ত। বই কেনার পর ডিজিটাল মেশিনে ওজন করে দাম পরিশোধ করছেন তারা।

লাইব্রেরির মালিক আফতাব হোসেন মামুন সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, ‘ আমি রাজশাহী কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস থেকে মাস্টার্স শেষ করে একটা কোচিং-এ শিক্ষকতা শুরু করি। এবং তার পাশাপাশি ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকুরির প্রস্তুতি নিতে থাকি। কিন্তু মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান হওয়ায় চাকুরির জন্য বিভিন্ন ধরনের বই আমি কিনতে পারতাম না। আর তখনই আমি চিন্তা করি যে আমার মত আরো অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা আমার মতো সমস্যার শিকার। আর তাদের কথা মাথায় রেখে ২০১৮ সালের শেষ দিকে আমি এই লাইব্রেরির যাত্রা শুরু করি। প্রথমের দিকে স্বল্প পরিসরে শুরু করলেও এখন আমার লাইব্রেরিতে আছে আড়াই টন বই।’

এই বইগুলো কীভাবে সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ পরিচিত অনেকের বাড়ি থেকেই এসব পুরোনো এবং পরিত্যক্তবই গুলো সংগ্রহ করে থাকি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ফেরিওয়ালা বা কাগজের দোকান থেকেও এই পুরোনো বই গুলা কিনে আনি। এর পাশাপাশি অনেক পুরোনো বইয়ের দোকানে বহুদিন ধরে যেসব বই বিক্রি হয়না সেসব বই কিনে নিয়ে আসা হয় এবং মাঝে মধ্যে ঢাকার নীলক্ষেত থেকেও আমি এইসব বই নিয়ে আসি।’

রাজশাহী বিনোদপুরের এই বাসিন্দা আরো বলেন,’ আমার এখানে প্রথম শ্রেণি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত বিভিন্ন একাডেমিক বই আছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের চাকুরির প্রস্তুতির বই,সাহিত্যধর্মী বইও আছে আমার এখানে। শুরুর দিকে বইয়ের কেজি ৫০ টাকা করে হলেও এখন ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি।’

প্রতিবেদকের এক প্রশ্নে তিনি বলেন,’ প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টায় লাইব্রেরি খোলা হয় এবং বন্ধ করা হয় রাত ৯টায়। আগে আমি একাই বেচা বিক্রি চালালেও এখন আমার সাথে আরো ২ জন সহকর্মী আছে। দৈনিক গড়ে ৫০ জন ক্রেতা আমার লাইব্রেরিতে আসেন।’

বই কিনতে আসা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিয়া ইসরাক মিম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আমি এখানে বই কিনতে আসি। এখানে অল্প টাকায় বেশ ভালো বই পাওয়া যায়। বাইরে অন্য লাইব্রেরি থেকে যেখানে অনেক টাকাদিয়ে এই বইগুলো কিনতে হয় সেখানে কম দামে এই বইগুলো কিনতে পেরে আমার অনেক ভালো লাগছে।’

এএইচ/এস