শনিবার , ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২১শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

উত্তরাঞ্চলের সড়কে বনায়নের নামে কোটি টাকা লোপাট

Paris
সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪ ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অপারেশন ডিভিশন (পশ্চিমাঞ্চল) রাজশাহীর নির্বাহী বৃক্ষপালনবিদ দপ্তরের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সড়ক-মহাসড়কে বনায়ন কর্মসূচির নামে অন্তত এক কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০২১-২৩ দুটি অর্থ বছরে বনজ, ফলজ, ঔষধি ও বাহারি জাতের চারা রোপনের নামে এসব টাকা লোপাট করা হয়েছে। তবে বাস্তবে ২৫ ভাগ গাছও রাস্তায় দেখা যায়নি। গাছের চারা রোপনের পর সেগুলো পরিচর্যার জন্য প্রতি কিলোমিটারে একজন করে মালি নিয়োগ দেওয়ার কথা রয়েছে ঠিকাদারের মাধ্যমে। তার জন্য প্রতি মাসে মালি প্রতি ১০ হাজার টাকার করে ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু গাছের চারা পরিচর্যার জন্য রাস্তায় মালির দেখা পাওয়া যায়নি। সওজের অভ্যান্তরিন তদন্ত প্রতিবেদনেও এ দুটি অনিয়মের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে বগুড়া-নওগাঁ-মহাদেবপুর-পত্নিতলা-ধামইরহাট-জয়পুরহাট মহাসড়কের চতুর্থ কিলোমিটার হতে ১৯ কিলোমিটার পর্যন্ত মোট ১৪ কিলোমিটারের ২৮ হাজার গাছের চারা রোপন করার কথা ছিল। কিন্তু সরেজমিন ঘুরে দেখা গেয়ে এই রাস্তায় ২৫ ভাগ গাছও নাই। এই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী বাস চালক আজগর আলী বলেন, আমি প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে দুইবার যাতায়াত করি। একদিন গাছের চারা দেখা-শোনার জন্য কোনো মালি চোখে পড়েনি। বছর দুয়েক একবার শুধু গাছের চারা রোপন করতে দেখেছিলাম। এর পর আর গাছ দেখা-শোনার জন্য কাউকে চোখে পড়েনি। যেসব চারা রোপন করা হয়েছিল, সেগুলো প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে উঠেছে।’

আরেক পথচারি নাদের আলী বলেন, ‘প্রতি কিলোমিটারে দুই হাজার গাছের চারা রোপন করা হয়েছে বলে মনে হয় না। বড় জোর এক হাজার চারা রোপন করা হয়েছে। সেগুলোরও কোনো পরিচর্যা হয়নি। ফলে অধিকাংশ গাছ মারা গেছে। চারা মরে যাওয়ায় কোনো স্থানে একেবারেই ফাঁকা হয়ে আছে এখন।’

একই রাস্তায় আরও ১০ কিলোমিটারে জন্য ২০ হাজার চারা রোপন করা হয়েছে। সেই স্থানেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে উত্তরাঞ্চলের ৮টি সড়ক মহাসড়কের ৮৩ কিলোমিটারে গত ২০২১-২৩ দুটি অর্থ বছরে ৮৩ কিলোমিটারে মোট এক লাখ ৬১ হাজার ৬০০ গাছের চারা রোপন করা হয়।

এদিকে, খোদ সওজ’র বগুড়া ও পাবনা অঞ্চলের বৃক্ষপালন শাখা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দুটি অর্থ বছরে যে পরিমাণ গাছের চারা রোপন করা হয়েছে বাস্তবে সেগুলো নাই। ওই প্রতিবেদনে জীবিত চারার সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৮৯ হাজার ৬২৯টি। গত ২৮ মে ওই প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, ২০২১-২৩ অর্থ বছরে ৮টি সড়ক মহাসড়কের রোপিত বনায়নকাজ সমূহ গত ১১ মে ও ২২ মে সরেজমিন পরিদর্শণ করেন ওই কর্মকর্তা। পরিদর্শন করে তিনি দেখতে পান, যথাযথ পরিচর্যার অভাবে বেশকিছু সংখ্যক চারাগাছ বিনিষ্ট হয়েছে। দরপত্রের শর্তানুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক পাহাদার/মালি সাইটে নিয়োজিত পাওয়া যায়নি। এর আগেও বিষয়টি নিয়ে ওই কর্মকর্তা ঠিকাদারকে জানিয়েছেন। কিন্তু ঠিকাদাররা সেটি কানে তোলেননি।

এদিকে সওজের সওজের অপারেশন ডিভিশন (পশ্চিমাঞ্চল) রাজশাহীর একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতিবেদনে যে গাছের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে, বাস্তবে এই সংখ্যাও নাই। ঠিকাদার এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে কিছুটা রক্ষা করতে ওই প্রতিবেদনটি করা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিন গেলে তারও অর্ধেক গাছও পাওয়া যাবে না। সরেজমিনে সঠিকভাবে গণনা করা হলে ৮৩ কিলোমিটারে এখন জীবত চারার সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি হবে না বলেও দাবি করেছেন একাধিক সূত্র।

সওজ সূত্র মতে, প্রতি এক কিলোমিটারে প্রায় দুই হাজার গাছের চারা রোপন করা হয়েছে ঠিকাদারের মাধ্যমে। গাছের চারা রক্ষণাবেক্ষনের জন্য প্রতি কিলোমিটারের জন্য একজন করে মালি নিয়োগ দেওয়ার কথা ঠিকাদারের। সেটিও দরপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। সেই হিসেবে ঠিকাদাররা ৮৩ কিলোমিটারে ৮৩ জন মালির জন্য প্রতি মাসের বিল উত্তোলন করেছেন ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে। এইভাবে দুই বছরের তাঁরা টাকা উত্তোলন করেছেন ১৯ লাখ ৯২ হাজার টাকা। কিন্তু ঠিকাদাররা ৩০ জন মালিও নিয়োগ দেননি। আবার প্রতিটি গাছের চারা রোপন করা বাবদ গড় বিল দেওয়া হয়েছে ২৬ টাকা ৯১ পয়সা।

সেই হিসেবে ১ লাখ ৬১ হাজার ৬০০ গাছের চারার পেছনে বিল দেওয়া হয়েছে ৪৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এই ৮টি রাস্তার বাইরে খুলনা বিভাগের আওতায় আরও অন্তত অর্ধ কোটি টাকার গাছের চারা রোপন করা হয়েছে একই দপ্তরের আওতায়। সেগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এভাবে দুই অর্থ বছরে গাছের চারা রোপনের নামে অন্তত কোটি টাকা লোপাট হয়েছে এই দপ্তরের মাধ্যমে।

তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সওজের অপারেশন ডিভিশন (পশ্চিমাঞ্চল) রাজশাহীর নির্বাহী বৃক্ষপালনবিদ বিপ্লব কুন্ডু বলেন, ‘আমি এই ধরনের কোনো প্রতিবেদন পেয়েছি বলে জানা নাই। তবে বনায়নের নামে কোনো অনিয়ম হয়নি। দুই বছর মেয়াদি এই কাজে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হবে। সেগুলো ঠিকাদাররা আবার সংশোধন করে দিয়েছেন।’

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর