সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
এ ছাড়া চাঁদপুর ও নোয়াখালীতে চর্মরোগ, পেটের পীড়া, সর্দি ও জ্বরে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বন্যার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে এই তথ্য জানানো হয়।
চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কালের কণ্ঠ’র নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
কুমিল্লা : গতকাল কুমিল্লা সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, বন্যার প্রভাবে ডায়রিয়া, রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (আরটিআই), চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, সাপে কাটাসহ মানুষ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী আসছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে।
বুড়িচং উপজেলায় দুই হাজার ১৩৩ জন পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় ১৩ জন, চৌদ্দগ্রামে ২১৩ জন, দেবীদ্বারে সাতজন, নাঙ্গলকোটে এক হাজার ২৮০ জন, চান্দিনায় ১৫ জন, লাকসামে ১৫৬ জন, মেঘনায় ৩৫ জন, তিতাসে ৪৪৪ জন, বরুড়ায় ১১ জন, আদর্শ সদরে ২৯ জন, ব্রাহ্মণপাড়ায় ১১১ জন এবং লালমাই উপজেলায় ২৪৮ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে।
এদিকে গত তিন দিনে জেলায় মোট ২৭২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে।
জেলা সিভিল সার্জন নাসিমা আক্তার বলেন, ‘পানিবাহিত রোগে আক্রান্তদের কালক্ষেপণ না করে হাসপাতালে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি। জেলায় মোট ২০৮টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। কোনো ওষুধেরই অপ্রতুলতা নেই।’
চাঁদপুর : চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানের জলাবদ্ধতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। তবে এতে গ্রাম্য সড়ক, নিচু এলাকার অসংখ্য বসতবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের ভেতর এখনো অনেক এলাকায় এবং জেলার শাহরাস্তি উপজেলায় জলাবদ্ধতা রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ছয় হাজার ২৫২টি পরিবারকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। তবে পানি কমতে শুরু করায় চর্মরোগ, পেটের পীড়া, সর্দি ও জ্বরে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে।
নোয়াখালী : গত দুই দিন বৃষ্টি হয়নি। রোদের তীব্রতা ছিল ব্যাপক, তার পরও নোয়াখালীতে পানি কমছে খুবই কম। অনেক এলাকায় চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আছে রান্না করা খাবারের সংকট। জেলার বন্যাকবলিত কয়েকটি ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ এলাকার ঘরবাড়ি এখনো কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমর সমান পানির নিচে।
ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশনব্যবস্থা। টয়লেট, বাথরুমগুলোও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ছে বন্যার পানিতে।
সদর উপজেলার অম্বদিয়া ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং সেপটিক ট্যাংকের ময়লা-আবর্জনা পানিতে ছড়িয়ে পড়ায় ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা পানিবাহিত রোগে ভুগছে এলাকার লোকজন। এখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা তেমন একটা আসেন না।
একই অবস্থা সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের নলদিয়া গ্রামে। ওই গ্রামের পরিবহন শ্রমিক নুর হোসেন জানান, তাঁর পরিবার ঘরের মধ্যে মাচা করে আছে। একদিকে সুপেয় পানি ও খাবারের অভাব, অন্যদিকে কয়েক দিনের আটকে থাকা পানিতে চলাফেরা করলেই চুলকানি শুরু হয়।
দেবীদ্বার (কুমিল্লা) : পানিবন্দি বিধবা ঝরনা বেগমের ঘরে খাবার নেই সাত দিন ধরে। কাছাকাছি কোনো আশ্রয়কেন্দ্রও নেই। নৌকার অভাবে দূরের আশ্রয়কেন্দ্রে পানি ভেঙে যেতেও পারছেন না। রাতে চোর-ডাকাতের হাতে সর্বস্ব হারানোর ভয়ও তাড়া করছে। অসংখ্য সংগঠন, এনজিও ও সরকারি সহায়তা এলেও দুর্গম এলাকায় কেউ সাহায্য নিয়ে আসে না।
কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে নিজের এই দুর্দশার কথা জানান ৪ নম্বর সুবিল ইউনিয়নের উত্তর রাঘবপুর গ্রামের ঝরনা বেগম। তিনি স্বামীর মৃত্যুর পর রাঘবপুর গ্রামে পিত্রালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
দক্ষিণ রাঘবপুর গ্রামেও একই অবস্থা। এই গ্রামের মতিন মিয়ার ছেলে রাজমিস্ত্রি ফারুক মিয়া জানান, পরিবারের সদস্যরা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়ে আসা খাবারের ওপর জীবন বেঁচে আছে। সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহযোগিতাই পাননি তাঁরা।
পানিবন্দি দুর্গম এলাকা হওয়ায় খাদ্যসামগ্রী না পাওয়া সুবিল ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ রাঘবপুর গ্রামের অন্তত ৫০০ পরিবার এমন পরিস্থিতিতে আছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে দুর্গতদের মধ্যে সরকারি চাল বিতরণ করছি। এ ছাড়া কোথাও কারো সমস্য শোনামাত্র প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের ব্যবস্থা করছি। সরকারি চাল এবং বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার দেওয়া ত্রাণসামগ্রী বেশির ভাগ জায়গায় আমি নিজেই উপস্থিত থেকে বিতরণ করছি।’
সূত্র: কালের কণ্ঠ