বাঘায় একদিকে পদ্মা নদীর ড্রেজিং, আরেক দিকে ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি

বাঘা প্রতিনিধি:

রাজশাহীর বাঘায় একদিকে পদ্মা নদীর ড্রেজিং চলছে। আরেক দিকে ভাঙনে বিলিন হচ্ছে শত শত বিঘা ফসলি জমি। আগে স্পার নির্মানের জন্য রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে।

জানা যায়, ৭২২ কোটি টাকা প্রকল্প পদ্মা নদী ভাঙন থেকে রক্ষা জন্য ড্রেজিং এর কাজ চলছে। ড্রেজিং এর তোলা বালু স্তূপ করে রাখায় স্রোত বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এই ভাঙনে আম বাগানসহ ফসলের ক্ষেত নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত ১০ দিনে উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের কামালদিয়াড় এলাকার দেড় কিলোমিটার ফসলি জমিসহ আমবাগান নদী গর্ভে চলে গেছে।

পাকুড়িয়ার পদ্মা নদীর ধারের ইউনুস মালিথা বলেন, বালু স্তূপ করে রাখায় স্রোত বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। বিষয়টি প্রকল্পের ঠিকাদারকে জানিয়েছি।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারী) বিকালে সরেজমিন দেখা যায়, ভাঙনের ভয়ে পাকুড়িয়া বাজারের দক্ষিণে কামালদিয়াড় পদ্মা নদীর ধার থেকে ভ্যানে খেজুর গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। একটি বাগানে তার ৭০টি আমগাছ ও এক বিঘা জমির গম নদীতে ভেঙে গেছে। কোন উপায় না পেয়ে গাছগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছি।

একই গ্রামের সানিউল হক মালিথার ১০০টি আমগাছ ভাঙনের কারণে কেটে নিয়েছেন। ড্রেজিং এর কারনে এই জনপদ শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
পাকুড়িয়া গ্রামের আবদুল খালেকের দেড় বিঘা জমির গম, ৮ কাঠা বেগুনের ক্ষেত, শাহিন উদ্দিনের এক বিঘা পেঁয়াজ ক্ষেত, আমিরুল ইসলামের ১৬ বিঘার উপর ৬০০ আমগাছ পদ্মা গর্ভে চলে গেছে।

এদিকে উপজেলার পাকুড়িয়া ও চকরাজাপুর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা ভাঙনের কবলে পড়েছে। পাকুড়িয়া ও চকরাজাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ সরকার এবং চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডিএম বাবুল মনোয়ার বলেন, ১০ দিনে এক হাজার বিঘা আবাদি জমি নদী গর্ভে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সরোয়ার-ই-জাহান বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আলাইপুর থেকে চকরাজাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনগর পর্যন্ত ১২ দশমিক ১ কিলোমিটার নদী খনন করা হচ্ছে। নদীর তলায় ১২০ মিটার চওড়া করে খনন কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর । চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ রয়েছে । গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে এই খনন কাজ শুরু হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ড্রেজিংয়ের সাময়িক প্রভাবে অনেক কৃষিজমির ক্ষতি হয়েছে। এর সুরক্ষা দেওয়া দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
সাদি এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, পদ্মার তীর রক্ষার্থে খননকাজ করা হচ্ছে। কাজের জন্য পানির প্রবাহ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে আরেক দিকে ভাঙছে। কিন্ত তার আগে যদি একটি স্পার নির্মাণ করে পানির প্রবাহটা বন্ধ করে দিত, তাহেল ভাঙতো না। পানি উন্নয়ন বোর্ড বালু ফেলে স্পার নির্মাণ করে দেয়, তাহলে ভাঙন থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তার আগে যদি এই জনপদ বিলীন হয়ে যায়, তাহলে এই প্রকল্পের কি দরকার ছিল।

পানি উন্নয়ন বোর্ড চাইলে বালু ফেলে এখানে একটি স্পার নির্মাণ করে এই প্রবাহটা বন্ধ করে দিতে পারে। ৮ বছর ধরে কন্টাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে চাষ করা বাগানের আম ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করছি। সেই আমগাছগুলো এখন নদীতে ভেঙে যাচ্ছে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক সফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, রোববার এলাকা পরিদর্শন করে দেখেছি, ড্রেজিং এর কারণে নদী ভাঙছে এটা সঠিক না। নদীর মূল প্রবাহের কারণে নদী ভাঙছে। ড্রেজিং এর স্তুপ করে রাখা বালু দিয়েই স্পার নির্মাণ করা হবে। তবে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যেই স্পার নির্মাণ করা হবে। এতে সময় লাগবে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, বাঘা এলাকায় নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। প্রকল্পটি পানি উন্নয়ন বোর্ড দেখভাল করছেন। বিষয়টি তাদের অবগত করবো।

জি/আর