ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাব বাংলাদেশ সমর্থন না করায় কয়েকটি পশ্চিমা দেশ নাখোশ হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও তার কয়েকটি মিত্র দেশ আলাদাভাবে বাংলাদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় তাদের অসন্তুষ্টি জানিয়েছে।
এদিকে ঢাকায় রুশ দূতাবাস অসন্তোষ জানিয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্যে। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে রাজনৈতিক দলগুলোকে মাঠ না ছাড়ার পরামর্শ দিতে গিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির উদাহরণ দিয়েছেন।
এমন প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল রবিবার বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য যুদ্ধ বন্ধ নয়, কাউকে দোষারোপ করা।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার নিন্দা ও হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে গত ২ মার্চ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়নি বাংলাদেশ, ভারত, চীনসহ ৩৫ দেশ। তারা সবাই প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান না নিয়ে ‘অ্যাবস্টেইন’ (পক্ষে-বিপক্ষে কোনোটাই নয়) ভোট দিয়েছে। প্রস্তাবটি শেষ পর্যন্ত ১৪১-৫ ভোটে গৃহীত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিনেট কমিটির শুনানিতে বলেছেন, ভারতের অবস্থান পরিবর্তন করতে তাঁরা ওই দেশটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সারা বিশ্ব যখন একসুরে রাশিয়ার ভূমিকার নিন্দা জানিয়েছে, তখন বাংলাদেশসহ ৩৫টি দেশ কেন নিন্দা প্রস্তাবকে সরাসরি সমর্থন করেনি তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। এরই অংশ হিসেবে পশ্চিমা কিছু দেশ বাংলাদেশের কাছে অবস্থান স্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছে। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা বেশ আগে থেকেই সরকারের কাছে তাঁদের প্রত্যাশা জানিয়ে আসছেন।
রুশ দূতাবাসেরও অসন্তুষ্টি : সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ঢাকায় রুশ দূতাবাস সিইসির বক্তব্যের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে সিইসির ব্যক্তিগত বক্তব্য হিসেবে অভিহিত করেছে।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মাঠ ছেড়ে চলে এলে হবে না। মাঠে থাকবেন। কষ্ট হবে। ইউক্রেনের জেলেনস্কি পালিয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু তিনি পালাননি। তিনি রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সরে এলে হবে না। ’
মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো জানায়, ঢাকায় রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি মন্টিটস্কি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সিইসির বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলেছেন। ইউক্রেন ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়ে রুশ দূতাবাস অবগত। এর মধ্যে হঠাৎ সিইসির মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ওই বক্তব্যে রাশিয়া বিস্মিত।
প্রস্তাবের শব্দগুলো দোষারোপের : জাতিসংঘে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট না দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রস্তাবের শব্দগুলো যদি আপনারা পড়েন সেখানে দেখবেন, সেগুলো যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানের মধ্যে পড়ে না। সেটি কাউকে দোষারোপ-টোষারোপ করার জন্য। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তির দেশ। আমরা শান্তি চাই। কোথাও কোনো জায়গায় যুদ্ধ হোক আমরা তা পছন্দ করি না। আমরা বলেছি, এই দুর্ঘটনা (ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান) যেটি হচ্ছে সে জন্য আমরা অত্যন্ত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সেই সঙ্গে আমরা আশা করব, জাতিসংঘের সনদ সবাই মেনে চলবে। ’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছি, বাংলাদেশ সব সময় আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চায়। এই বিরোধটাও যেন শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হয়। ’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছি, সেখানে (ইউক্রেনে) বিভিন্ন দেশের নাগরিক আছেন। প্রত্যেকের যেন নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। শেষে আমরা বলেছি, জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি আমাদের যথেষ্ট আস্থা আছে। আমরা বলেছি, তাঁর উদ্যোগ নেওয়া উচিত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের। ’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই বক্তব্যগুলো তুলে ধরেছি জাতিসংঘে। আমরা শান্তির সপক্ষে ভোট দিয়েছি। ’
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ