কপ-২৬ সম্মেলনে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশগুলোর প্রত্যাশা পূরণ হয়নি

কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৬) বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশগুলোর প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তাই ধনী দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে না থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে সুনির্দ্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

আজ সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন পরবর্তী পর্যালোচনা সভায় এই অভিমত ব্যক্ত করেন তারা।

সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি), কোস্ট ফাউন্ডেশন, সিসিডিবি, সিডিপি, ইপসা, মালেয়া ফাউন্ডেশন, এসডিএস এবং ক্যানসা-বাংলাদেশ আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন পিকেএসএফ’র সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহম্মেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিআরডি’র প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা। বক্তৃতা করেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. নুরুল কাদের, বাংলাদেশ পরিবেশ সংবাদিক ফোরামের সভাপতি কামরুল ইসলাম চৌধুরী, ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমান, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, সিডিপি’র নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম, কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক সৈয়দ আমিনুল হক প্রমূখ।

সভায় ড. খলীকুজ্জামান বলেন, আমাদের নীতি নির্ধরকগণ বিভিন্ন আঞ্চলিক সমস্যা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের দূর্গত মানুষের সমস্যা গুলো দেখেন না। ফলে তাদের কথাগুলো হৃদয় থেকে আসে না। তাই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আকাঙ্খাগুলোর বাস্তবায়ন হয় কম। তিনি আরো বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি ও বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এই শতাব্দীর শেষে গিয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা অসম্ভব। কাজেই এখন থেকেই বিশ্বসম্প্রদায়কে কার্বন নির্গমণ কমানোর পাশাপাশি ব্যাপকভাবে অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

মূল প্রবন্ধে শামসুদ্দোহা বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতা ও সমালোচনা থাকলেও ‘কপ-২৬’ এ অনেকগুলো ভালো অর্জনও আছে। এবারের ‘কপ’ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নতুন কিছু আশার আলো নিয়ে এসেছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের একমত হওয়ার বিষয়টিকে নতুন পথচলার সূচনা বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এবারের সম্মেলনে বড় চাওয়া ছিলো কয়লার ব্যবহার বন্ধে একটি ‘ফেইস আউট টাইম ফ্রেইম’ নির্ধারণ। কিন্তু ভারত, চীনসহ কয়েকটি দেশের বাধার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। তিনি ২০৫০ সালের মধ্যে কয়লাসহ সকল জীবাষ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের জোরাল দাবি জানান।

সভায় বক্তারা বলেন, জলবায়ু সম্মেলনকে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ারে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। সম্মেলনে বৈজ্ঞানিক নানান তাগাদা ও সুপারিশকে পাশ কাটিয়ে যাবার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় আর্থিক সাহায্য দেওয়ার পরির্বতে সাহায্যের নামে ঋণ প্রদান ও ব্যবসায়ীক ক্ষেত্র তৈরির পাঁয়তারা চলছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এ বিষয়ে সজাক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান তারা।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ