গোদাগাড়ীতে স্কুলে ঢুকে চার শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করলেন ইউপি সদস্যের ছেলে


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বাঘাইল উচ্চ বিদ্যালয়ে ঢুকে চার শিক্ষকসহ এক যুবককে পিটিয়ে আহত করেছেন সদ্য নির্বাচিত স্থানীয় দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য এমাজ উদ্দিনের ছেলে সিহাব উদ্দিন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে বাদ দেওয়ার দাবি তুলে গত ২১ নভেম্বর দুপুরে ওই স্কুলে ঢুকে প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেনের কক্ষে ঢুকে তাঁকেসহ চার শিক্ষক এবং এক যুবককে মারপিট করেন। এতে তাঁরা পাঁচজন আহত হন। এসময় বঙ্গবন্ধু কর্ণারও ভাঙচুর করা হয়। এ নিয়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, গোদাগাড়ী থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হলেও গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত হামলাকারী ওই ইউপি সদস্যের ছেলোকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।

আহত অপর চারজন হলেন, ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহ ইবনে ওবাইদুল রাশেল, কামাল হোসেন, সরাইয়া খাতুন ও রুনা লাইলা এবং সাবেক শিক্ষার্থী নাসিম উদ্দিন সোহাগ। তাদের মধ্যে সোহাগকে বেদম মারপিট করে মুখের বিভিন্ন অংশ থ্যাঁতলে দেওয়া হয়। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এদিকে গত ২১ নভেম্বর স্কুলে ঢুকে শিক্ষকদের ওপর হামলার ভিডিও গতকাল ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি  সিল্কসিটিনিউজের হাতেও এসে পৌঁছেছে।

এতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক ভাগাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে গিয়ে প্রথমে কথাকাটাকাটি করতে থাকে। একপর্যায়ে তাঁরা শিক্ষকদের মারপিট করতে থাকে। এসময় উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষার্থী চিৎকার দিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে। তার পরেও ওই বখাটেরা শিক্ষকদের মারপিট করতে থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষকরা জানান, ওইদিন দুপুরে ইউপি সদস্য এমাজ উদ্দিনের ছেলে সিহাব উদ্দিন কয়েকজন যুবককে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এসময় তিনি বর্তমান সভাপতি সাইদুর রহমানকে বাদ দিয়ে তাঁকে সভাপতি করার দাবি জানান। প্রতিউত্তরে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘এটি তো একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। চাইলেই তো সভাপতিকে আমি বাদ দিতে পারি না।’ এমন উত্তরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সিহাব উদ্দিন। এর পর তিনি প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত করতে উদ্যত্ত হন। একপর্যায়ে ওই কার্যালয়ে বসে থাকা স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী নাসিম উদ্দিন সোহাগ সিহাবকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সিহাব আরও উত্তেজিত হয়ে নাসিমকে সেখানেই মারপিট শুরু করেন।

এসময় আরও কয়েকজন শিক্ষক সিহাবকে থামাতে গেলে তাঁদেরও মারপিট করা হয়। হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া এমন পরিস্থিতি দেখে কয়েকজ শিক্ষার্থী চিৎকার দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন। কিন্তু তার পরেও সিহাব ও তার লোকজন শিক্ষকদের মারপিট করতে থাকে। একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু কর্ণারও ভাঙচুর করেন।

ওই স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাইদুর রহমান জানান, তিনি সদ্য হয়ে যাওয়া ইউনিয় পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে নির্বাচন করেছেন। হামলাকারী সিহাব উদ্দিনের বাবা সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার পরে প্রতিশোধ নিতে তাঁকে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি থেকে সরিয়ে সিহাব নিজে ওই পদটিতে বসতে চান। কিন্তু সিহাব এলাকায় বখাটে বলে পরিচিত। এ কারণে এলাকাবাসী বা অভিভাবকরা তাঁকে চান না। সাইদুর রহমানকেই সভাপতি হিসেবে রেখেছেন।’

তবে বিষয়টি জানতে চাইলে সিহাব উদ্দিন বলেন, ‘মারপিটের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সেখানে হালকা ধাক্কাধাক্কি হয়েছে মাত্র। এর বাইরে কিছু ঘটেনি।’

প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আমার শিক্ষার্থীদের সামনে আমাদের মারপিট করা হয়েছে। লাঞ্চিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা থানাসহ বিভিন্ন যায়গায় অভিযোগ করেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সিহাবের বিরুদ্ধে।’

জানতে চাইলে গোদাগাড়ী থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এ নিয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করা হচ্চে। তবে ইউএনও মহোদয় ফোন করে মামলাটি রেকর্ড করতে নিষেধ করেছেন। স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। তাই মামলাটি রেবর্ড হয়নি।’

এদিকে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানে আলম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে গোদাগাড়ী থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে স্কুলের পক্ষ থেকে। আমরা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কিন্তু স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ আমাকে জানিয়েছে। তবে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’

স/আর