রাবির প্রশাসন ভবন ও ভিসির বাসভবনে ‘এডহক’ নিয়োগপ্রাপ্তদের তালা, পণ্ড এফসি মিটিং

নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সম্প্রতি ‘এডহক’ এ নিয়োগপ্রাপ্তরা তাদের যোগদানের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিজ নিজ দপ্তরে পদায়নের দাবিতে বিশ^বিদ্যালয়টির উপাচার্যের বাসভবন, প্রশাসন ভবন এবং সিনেট ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।শনিবার (১৯ জুন) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নিয়োগপ্রাপ্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এসব দপ্তর তালাবদ্ধ করে রাখে। পরে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্যের নির্দেশে আহ্বান করা পূর্ব নির্ধারিত ফিন্যান্স কমিটির (এফসি) মিটিং পণ্ড করে দেয় নিয়োগপ্রাপ্তরা। পদায়ন করা না হলে নিয়োগপ্রাপ্তরা আগামী ২২ জুন অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পূর্ব নির্ধারিত সিণ্ডিকেট সভাও পণ্ড করে দেবেন বলেও ঘোষণা দেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত ৬ মে বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম. আবদুস সোবহানের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই গত ২ মে ও ৪ মে যথাক্রমে ফিন্যান্স কমিটির সভা ও সিণ্ডিকেট সভা আহ্বান করেছিলেন তিনি। সভা দুটিতে ইউজিসি থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে বেশ কিছু কাজের (ভবন নির্মাণসহ মেরামত কাজ) অনুমোদন হওয়ার কথা ছিল। ওই সময় বর্তমান দুই উপ-উপাচার্য এফসি ও সিণ্ডিকেট করতে অসহযোগিতা করায় এসব কাজ আটকে যায়। সেগুলোই এখন পাস করার জন্য উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা এই এফসি ও সিন্ডিকেটের সভা আহ্বান করেছিলেন। অথচ ওই সময় এফসি মিটিং ও সিণ্ডিকেট মিটিং করতে পারলে স্থগিত হয়ে থাকা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এখন চলমান থাকতো। অন্ততপক্ষে বরাদ্দকৃত টাকা আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ফেরৎ যেত না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শনিবার সকালে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহাকে টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাতকারে শুনলাম- অর্থনৈতিক কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো এফসি মিটিং এ পাস করাতে হবে। নইলে বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত যাবে।’ এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘জুনের ১৯ তারিখে এফফিতে পাস করিয়ে ২২ তারিখে সিণ্ডিকেট করে ৩০ জুনের মধ্যে কীভাবে বরাদ্দকৃত অর্থগুলো খরচ করবে? বিদায়ী উপাচার্যের আহ্বান করা এফসি এবং সিন্ডিকেটে ওই সময় যদি এই দুই উপ-উপাচার্য অসহযোগিতা না করতেন তাহলে তারাই এখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অসমাপ্ত কাজগুলো করতে পারতেন। এটি ‘আল্টিমেটলি’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি হচ্ছে বলে আমি মনে করি।’

তবে সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত আতিকুর রহমান সুমন নামে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসভবনে ফাইন্যান্স কমিটির সভা আহ্বান করেছিলেন সভার সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান আল আরিফ (যা পণ্ড হয়ে গেছে)। এছাড়া আগামী ২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের জরুরি সভা আহ্বান করেছেন রুটিন উপাচার্য অধ্যাপক ড.আনন্দ কুমার সাহা। অন্যান্য এজেন্ডার সাথে এই এফসি ও সিণ্ডিকেটে সম্প্রতি ১৩৮ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারির নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করার একটা চক্রান্ত আমরা লক্ষ্য করেছি। তাই সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া ১৩৮ জন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মী, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানদের চাররিতে যোগদানের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো এফসি ও সিণ্ডিকেট মিটিং আমরা করতে দেব না।’

নিয়োগ পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান সহ-সভাপতি মাহফুজ আল আমিন বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ছাড়াই উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে আমাদের যোগদানে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। যা তিনি দিতে পারেন না। সব সময় তিনি বলেন, আমি তোমাদের পক্ষেই আছি। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি ভিন্ন। নিয়োগ পাওয়ার দেড় মাস অতিবাহিত হলেও অদৃশ্য কারণে তিনি আমাদেরকে পদায়ন করছেন না। আমরা প্রশাসন ভবন, উপাচার্যের বাসভবন এবং সিনেট ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে চাকরিতে আমাদের পদায়ন না করা পর্যন্ত চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দায়িত্ব প্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘শনিবার সকালে বিশ^বিদ্যালয়ের ফিন্যান্স কমিটির মিটিং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই তালা লাগানোর ঘটনাটি ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে তা কয়েক দিন থেকেই আমি শুনছিলাম। সে কারণে প্রক্টর এর মাধ্যমে নগরীর মতিহার থানায় মৌখিক ও লিখিতভাবে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। এছাড়াও রাজশাহীর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা বিষয়টি অবগত রয়েছেন। পরে প্রশাসনের সবার সঙ্গে আলোচনা করে ফিন্যান্স কমিটির সভা স্থগিত করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, সদ্যবিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহান তার মেয়াদকালের শেষ দিন (গত ৬ মে) ১৩৮ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারিকে অস্থায়ীভিত্তিতে (এডহক) ৬ মাসের জন্য নিয়োগ দিয়ে যান। কিন্তু ৮ মে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পেয়েই অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা এই নিয়োগের যোগদানে স্থগিতাদেশ দেন। এখন পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্তরা নিজ নিজ পদে যোগদান করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ৩টি দপ্তরে শনিবার সকাল থেকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে আন্দোলন শুরু করে।