ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণার সুন্দরবন থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা। ইয়াস তছনছ করে দিয়েছে সবকিছু। আমফান ঘূর্ণিঝড়ের পর প্রচুর টাকা খরচ করে বাঁধ মেরামত করা হয়েছিল। ভাবা হয়েছিল পরবর্তী কোনও দুর্যোগ এলেও মানুষের জীবন–জীবিকার খুব বড় ক্ষতি হবে না। এই ভাবনা ছিল পশ্চিমবঙ্গ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাই মন্ত্রীদের এবং অফিসারদের একসঙ্গে কাজে নামিয়ে দিয়েছিলেন। তৎকালিন মন্ত্রীরা কাজ করেছেন বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আছড়ে পড়ল ইয়াস। আর দেখা গেল যেসব বাঁধ কোটি কোটি টাকা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল তা নিমেষেই মাটিতে মিশে গিয়েছে। তাহলে কী ভেজাল জিনিস দিয়ে তৈরি হয়েছিল বাঁধ?
কাটমানি বা কমিশন গিয়েছিল মন্ত্রীদের পকেটে? ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেচ দফতরের সচিবকে দু’কথা শুনিয়ে অর্থ দফতরকে তদন্তের নির্দেশ দিতেই এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আর তাতেই জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, তৎকালীন সেচ দফতরের মন্ত্রী ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি বিজেপিতে যোগ দিয়ে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে হেরেছেন। এমনকি বন দফতরের ৫ কোটি ম্যানগ্রোভের চারা রোপনের সিদ্ধান্তের কী হল? তাও জানতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ফলে কাটমানি নিয়ে বিজেপি যে অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করছিল তা কার্যত ঝেড়ে ফেললেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ নাম না করলেও এই কাটমানির দায় এখন চাপছে স্বয়ং রাজীবের ওপর। যিনি এখন বিজেপির ছত্রছায়ায়। আর এই বিষয়ে তদন্ত হলে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া পাবেন না তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক কুশীলবরা।
আবার সেচ দফতরের সচিব নবীন প্রকাশের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিদ্যাধরী বাঁধ এবারও ভেঙেছে। দিঘায় সবটাই ভেঙে গিয়েছে। হয়েছে তো দু’আড়াই বছর! তবে সবটাই কীভাবে ভাঙল? তোমরা নজরদারি করো? প্রতি বছরই বলছো, তিনটে সেতু সম্পূর্ণ হচ্ছে। কংক্রিটের ওই সেতু ভেঙে গেল কী করে? এটা তদন্ত হবে। অর্থ দফতর তদন্ত করবে। আমফানের পর কত টাকা দিয়েছিলে? তাহলে টাকাটা কি পানিতেই চলে যাচ্ছে?’
পূর্ব মেদিনাপুরের এইসব এলাকার দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি ওখানকার বিধায়ক। শুধু তাই নয়, পরিবারের সবাই সংসদ–চেয়ারম্যান সবকিছু। দিঘা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির শীর্ষে ছিলেন শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী। সুতরাং তদন্ত হলে কেউ ছাড় পাবেন না এটা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরই দিঘার পর্যটনকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পর্যটনকে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছনোর লক্ষ্যে উদয়পুর থেকে দিঘা মোহনা পর্যন্ত সৌন্দর্যায়নে জোর দেওয়া হয়। আলোর ব্যবস্থা করা হয়। তৈরি হয় বিশ্ববাংলা পার্ক। গড়ে ওঠে মেরিন এবং সি ড্রাইভও। তবে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’–এর দাপটে প্রায় তছনছ দিঘা। আর তাতেই বেজায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, মাত্র কয়েক বছর আগে তৈরি মেরিন ড্রাইভের অবস্থা কেন এত খারাপ হল? আমি অর্থ দফতরকে বলব। আমফানের পর কোন কোন জায়গা সারানো হয়েছে, তার কত শতাংশ ভাঙল খতিয়ে দেখতে হবে। একদম সেচ দফতরকে টাকা দেবে না। একটা টাস্ক ফোর্স করো। টেন্ডার, যাবতীয় ব্যবস্থা দেখে টাকা দিতে হবে। সরকারের টাকা এত সস্তা নয়। ম্যানগ্রোভ বলল ৫ কোটি পুঁতবে। কোথায় পুঁতবে? গতবার বড় বড় ভাষণ দিল। ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ পোঁতার কাজ ছিল। সুতরাং এইসব মন্তব্য রাজীব–শুভেন্দুকে সামনে রেখেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
সূত্রঃ যুগান্তর