সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে গরহাজিরসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষকেরা। উপাচার্যসহ এ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো দুটি কমিটির মাধ্যমে তদন্তে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এর মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শহীদুর রহমান খানের বিরুদ্ধে পরিবারের সদস্যদের অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়াসহ অন্তত ১৫টি অভিযোগ তদন্ত করছে আরেকটি কমিটি।
১৩টি স্বায়ত্তশাসিত এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে ইউজিসি। এর মধ্যে ১০ জন বর্তমান ও সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ:
ইউজিসির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ও প্রকল্প পরিচালক হারুনর রশীদ খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁর সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রথম ভাইস চ্যান্সেলরের ট্রাস্ট ভবন’ নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে। এ ভবন নির্মাণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় ১৪ শতাংশ জমি কেনা হয় এবং ১ কোটি ৩১ লাখ ৫২ হাজার টাকায় ভবন নির্মাণ করা হয়। তবে উপাচার্যের দাবি ছিল, ভবন নির্মাণে তাঁর ব্যক্তিগত টাকাও ব্যয় করা হয়েছে।
এ নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগমের নেতৃত্বাধীন কমিটি। এতে বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে ইউজিসির তদন্ত কমিটি মনে করে, ট্রাস্ট ভবন নির্মাণে কারও ব্যক্তিগত টাকা ব্যয় হয়নি। কমিটি মনে করে, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে।
কমিটির সুপারিশ হলো অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসনের ক্ষেত্রে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা আরও বেশি সচেষ্ট হবেন। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিতে পারে।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শহীদুর রহমান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিজের ছেলেকে ‘অ্যাডহক’ ভিত্তিতে সেকশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিজের মেয়েকে নিয়োগ দিয়েছেন শিক্ষক হিসেবে। এরপর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত স্ত্রীকে অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টায় নামেন তিনি। যদিও এ নিয়োগ স্থগিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এগুলোসহ ১৫টি অভিযোগ তদন্ত করছে ইউজিসির সদস্য বিশ্বজিৎ চন্দের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি।
অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য শহীদুর রহমান খান সম্প্রতি বলেন, ‘উপাচার্যের ছেলে বা মেয়ে হলে আবেদন করতে পারবে না, নিয়োগ পাবে না, এমন কোনো নিয়ম তো নেই।’
বিশ্বজিৎ চন্দের নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো তদন্ত করছে। এ ছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প প্রস্তাবের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কার্যাদেশ দেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করেছেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরের নেতৃত্বাধীন আরেকটি কমিটি।
তদন্তের মুখে থাকা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম, সম্মানী নেওয়ায় নয়ছয় করাসহ বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ আহসান উল্লাহর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম করার অভিযোগের তদন্ত শুরু হলেও বেশ কিছুদিন ধরে তা ঝুলে আছে। উপাচার্যদের বিরুদ্ধে এত অভিযোগের কারণে ইউজিসির সদস্য এবং কর্মকর্তারাও বিব্রত ও বিরক্ত।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন–অর–রশিদ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অধ্যাপক এম রোস্তম আলী ও সাবেক এক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করছে ইউজিসি। তাঁদের বিরুদ্ধেও প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।
ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল মান্নান বলেন, উপাচার্যদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ শুনলে খুবই কষ্ট লাগে। যাঁদের নৈতিকতা নেই, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে রাখা ও থাকা কোনোভাবেই উচিত নয়। এ জন্য অভিযোগ উঠলে কেবল তদন্তই নয়, তদন্তের ভিত্তিতে অবশ্যই বিচারও করতে হবে।
সূত্র: প্রথম আলো