অভিনেত্রীর পাশাপাশি তিনি দক্ষ নৃত্যশিল্পীও। তার কাজ সিনেমার মতো জনপ্রিয়তা পেয়েছে টেলিভিশনেও। সম্পর্ক এবং জীবনের অন্য সংবেদনশীল পরিসর নিয়ে বরাবরই অকপট কাশ্মীরা শাহ।
মুম্বাইয়ে কাশ্মীরার জন্ম ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর। তার বাবা মরাঠি এবং মা গুজরাটি। তার দাদী অঞ্জনিবাঈ লোলেকার ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীত জগতে উল্লেখযোগ্য নাম।
কাশ্মীরা অবশ্য সেভাবে সঙ্গীতচর্চা করেননি। তার আগ্রহ ছিল অভিনয় এবং নাচে। ১৬ বছর বয়স থেকে তিনি মডেলিং শুরু করেন। কয়েক বছরের মধ্যে বিজ্ঞাপন জগতে তিনি পরিচিত নাম হয়ে ওঠেন।
১৯৯৩ সালে কলেজজীবনে ‘মিস ইউনিভার্স ওয়ার্ল্ড’ খেতাব পান তিনি। সে বছরই দক্ষিণ কোরিয়ায় সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন।
ছবিতে প্রথম সুযোগ পান ১৯৯৬ সালে। নৃত্যশিল্পী হিসেবে তাকে দেখা গিয়েছিল তেলুগু ছবি ‘ইন্টলো ইল্লালু ভান্টিন্টলো প্রিয়ুরালু’-তে।
ক্রমে বলিউডেও আইটেম ডান্সার হিসেবে পরিচিত হন কাশ্মীরা। ‘বাস্তব’, ‘কুরুক্ষেত্র’ এবং ‘মার্ডার’ ছবিতে আইডেম ডান্স করেন তিনি।
নৃত্যশিল্পী থেকে অভিনেত্রী হিসেবেও ইন্ডাস্ট্রিতে ধরা দেন কাশ্মীরা। ‘ইয়েস বস’, ‘প্যায়ার তো হোনা হি থা’, ‘হিন্দুস্তানি কি কাসাম’, ‘দুলহান হাম লে যায়েঙ্গে’, ‘কাহিঁ প্যায়ার না হো যায়ে’, ‘ওয়েক আপ সিড’-সহ বেশ কিছু হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
হিন্দির পাশাপাশি তিনি অভিনয় করেছেন মারাঠি ছবিতেও। ‘জয় জয় মহারাষ্ট্র মাঝা’, ‘শিকারি’ তার করা মারাঠি ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম।
অভিনেত্রী-আইটেম ডান্সার কাশ্মীরা অভিনয় করেছেন টেলিভিশনেও। ‘প্রাইভেট ডিটেক্টিভ: টু প্লাস টু ওয়ান’, ‘হাম নে লি হ্যায় শপথ’, ‘সিয়া কে রাম’ সিরিয়ালে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছিল কাশ্মীরার অভিনয়।
‘বিগ বস’, ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর’, ‘ইস জঙ্গল সে মুঝে বাঁচাও’, ‘দিল জিতেগি দেশি গার্ল’-এর মতো রিয়েলিটি শো-এও কাশ্মীরার অংশগ্রহণ মনে আছে দর্শকদের।
একটি ডেটিং ওয়েবসাইটে ব্র্যাড লিস্টারম্যানের সঙ্গে আলাপ হয় কাশ্মীরার। কিছু দিন ভার্চুয়াল-প্রেমালাপের পরে দু’জনে প্রথম দেখা করেন। প্রথম সাক্ষাতেই তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
লাস ভেগাসে ব্র্যাড এবং কাশ্মীরা বিয়ে করেন। তাদের প্রেমপর্ব নিয়ে একটি ছবিও প্রযোজনা করেন ব্র্যাড। ‘মাই হলিউড ব্রাইড’ নামে সেই ছবির নায়িকা ছিলেন কাশ্মীরাই।
কিন্তু ব্র্যাডের সঙ্গে কাশ্মীরার ৫ বছরের দাম্পত্য ভেঙে যায় ২০০৭ সালে। তাদের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে কৃষ্ণা অভিষেকের অনুপ্রবেশের কারণেই ফাটল ধরেছিল সম্পর্কে।
অভিনেতা গোবিন্দের ভাগিনা অভিষেক শর্মা ওরফে কৃষ্ণা অভিষেকের সঙ্গে কাশ্মীরার আলাপ ২০০৬ সালে, জয়পুরে। ‘আওর পাপ্পু পাস হো গ্যায়া’ ছবির শ্যুটিংয়ে তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। প্রথমে বন্ধুত্ব এবং তার থেকে প্রণয়ে পরিবর্তিত হয় তাদের সম্পর্ক।
সে বছরই ‘বিগ বস’-এ তাদের প্রেমের কথা বলেছিলেন কাশ্মীরা। ২০০৭ সালে ব্র্যাডের সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যায় কাশ্মীরার। সে বছরই ‘নাচ বালিয়ে’-এর সেটে প্রকাশ্যে তাকে প্রোপোজ করেন বয়সে ১২ বছরের ছোট কৃষ্ণা অভিষেক।
কাশ্মীরার সঙ্গে সম্পর্কে থাকার সময়ই বলিউডের আরেক অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্তের সঙ্গে কৃষ্ণা অভিষেকের সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। তা নিয়ে কাশ্মীরা-তনুশ্রী প্রকাশ্যে বিতণ্ডাতেও জড়িয়ে পড়েছিলেন।
বছর পাঁচেক লিভ ইন করার পর ২০১২ সালে বিয়ে করেন কৃষ্ণা অভিষেক এবং কাশ্মীরা। তবে তাদের বিয়ের খবর ২ বছর গোপন রেখেছিলেন এই দম্পতি। ২০১৪ সালে একটি অনুষ্ঠানে কাশ্মীরা সিঁদুর পরে গিয়েছিলেন। তারপরই প্রকাশ্যে আসে তাদের দাম্পত্য।
পরে কাশ্মীরা জানান, লাস ভেগাস থেকে গাড়িতে ১ ঘণ্টার দূরত্বে একটি গির্জায় গিয়ে বিয়ে করেছিলেন তারা। এত তড়িঘড়ি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে ঠিক মতো শপিংও নাকি করে উঠতে পারেননি তারা।
২০১৭ সালে সারোগেসি পদ্ধতিতে যমজ সন্তানের মা হন কাশ্মীরা। ছেলেদের নাম তারা রেখেছেন রায়ান এবং কৃশাঙ্গ। মাতৃত্বের যন্ত্রণাবিদ্ধ অভিজ্ঞতার কথা পরে শেয়ার করেছেন কাশ্মীরা।
অভিনেত্রী জানিয়েছেন, ৩ বছর ধরে আইভিএফ পদ্ধতিতে মা হওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছেন তিনি। ১৪ বার বিফলে গিয়েছে সন্তান ধারণের প্রচেষ্টা। আইভিএফ প্রক্রিয়ায় বারবার ইঞ্জেকশন নেওয়ার প্রভাবও পড়েছিল তার উপর।
ওজন বেড়ে যাওয়া, খিটখিটে হয়ে পড়া-সহ নানা রকম উপসর্গ দেখা দিচ্ছিল তার মধ্যে, জানিয়েছেন কাশ্মীরা। শেষে সালমান খান তাকে পরামর্শ দেন, সারোগেসি পদ্ধতিতে সন্তান লাভের জন্য।
কেন তিনি সারোগেসি বেছে নিয়েছিলেন, সে কথা জানাতেই এক সাক্ষাৎকারে এই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন কাশ্মীরা।
স্বামী কৃষ্ণা অভিষেকের সঙ্গে বেশ কিছু টিভি শো-এ অংশ নিয়েছেন কাশ্মীরা। ‘নাচ বালিয়ে থ্রি’ ছাড়াও তাদের একসঙ্গে দেখা গিয়েছে ‘কাভি কাভি প্যায়ার কাভি কাভি ইয়ার’ এবং ‘লাভ লক আপ’-এ।
কাজের বাইরে অবসরে কাশ্মীরা তার পোষ্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছ্ন্দ করেন। একাধিক বিড়াল এবং কুকুর তার পরিবারের সদস্য।
তিনি কি কোনও দিন কাউকে ঠকিয়েছেন? এক সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নের উত্তরে কাশ্মীরা জানান, তিনি প্রথম স্বামীর সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু বেশি দিনের জন্য নয়। কৃষ্ণা অভিষেকের প্রেমে পড়েছেন, এ কথা বুঝতে পেরেই তিনি সে কথা জানান ব্র্যাডকে। সম্পর্কের মধ্যে লুকোচুরি রাখতে চাননি কাশ্মীরা।
কাশ্মীরার দাবি, প্রথম বিয়েতে ডিভোর্সের জন্য তাকে নিজের বাড়ি এবং গাড়ি ছেড়ে দিতে হয়েছিল। কিন্তু প্রেমের কাছে সেসব তার গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি। ভবিষ্যতেও নিজের প্রেম এবং সম্পর্কের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে চান তিনি।
বিয়ে এবং মা হওয়ার পরেও ক্যারিয়ারকে বিদায় জানাননি কাশ্মীরা। সম্প্রতি তাকে দেখা গিয়েছে পরিচালক ও প্রযোজকের ভূমিকাতেও। ২০১৯ সালে মুক্তি পেয়েছে তার পরিচালিত ও প্রযোজিত প্রথম ছবি ‘মরনে ভী দো ইয়ারোঁ’।
সূত্র: আনন্দবাজার