“বন্ধ শিক্ষালয় এবং এখন আমাদের করণীয়”

মোঃ কায়ছার আলী

Renowned মনোবিজ্ঞানী এরিখবার্ন বলেছেন” মানুষের জন্ম হয় তিনবার। প্রথমত Cellular Birth (মাতৃগর্ভে) দ্বিতীয়ত Physical Birth (শারিরীক ভাবে) তৃতীয়ত Social Birth (সামাজিক ভাবে)। সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ হল Social Birth যা শুধুমাত্র শিশুদের নয়, সকল শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্জিত হয়। সকলের মা, বাবা, মাতৃভাষা, মাতৃভূমি, ধর্মীয় গ্রন্থ, মহামানবগণ এবং নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাান তাদের কাছে প্রিয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে লিখতে গেলে প্রথমেই মনে পড়ে যায় বিশ্বের প্রথম বিদ্যালয় চীনের ছেংদু শিশি বিদ্যালয়ের কথা। চীনের সিচুয়ান প্রদেশে আনুমানিক ১৪৩-১৪১ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে একসময়ে এই বিদ্যালয়ের সূচনা হয়।

মূলত তৎকালীন সময়ে ঐ বিদ্যালয়ের নাম ছিল ওয়েন ওয়েং শিশি। চীনা ভাষায় শিশি শব্দের অর্থ হল ‘স্টোন চেম্বার’। চীনারা বিশ্বাস করে, পাথরের প্রাণ আছে। যেহেতু প্রাণ বিশিষ্ট পাথর দীর্ঘদিন কোনরূপ পরিবর্তন না করেই অপরিবর্তিত অবস্থায় বর্তমান থাকে, তাই জ্ঞানীরও সেই একই অবস্থায় থাকা উচিত। সে দার্শনিক ভাবচিন্তা করেই ঐ বিদ্যালয়টির নাম রাখা হয়েছিল শিশি বিদ্যালয়। ঐ বিদ্যালয়সহ যাঁরা পৃথিবীতে বিদ্যালয় তৈরী করেছেন অথচ আজ বেঁচে নেই তাঁদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও সালাম।

William Wordsworth Gi “Tintern Abbey” কবিতার একটি অংশ বিশেষ হচ্ছে “Life of Things”বস্তুরও জীবন আছে। মৃত স্বামী, বাবা মা প্রিয় মানুষের ঘর, জামাকাপড় বা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিতে বা কোন ফেলে আসা অতীতের চিহ্নে আমরা স্মৃতি খুঁজে পাই। বলেই ফেলি এটা অমুকের ঘর, তাঁর চশমা, বসার চেয়ার, গহনা অলংকার ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন নিকষ কালো আঁধারে ছেয়ে গেছে আকাশ। কবে কাটবে এ আঁধার সঠিকভাবে তা কেউ জানে না।

এই তো সেদিন ব্যবস্থাপনা কমিটির সম্মানিত সদস্যগণ, সহকর্মী অগ্রজ অনুজ, জ্ঞানপিপাসুরা সবাই মিলেমিশে একাকার হতাম। বালিকাদের প্রভাতী শাখা, বালকদের দিবা শাখা এবং উভয়ের জন্য সহশিক্ষা কলেজ শাখা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রিয় ছাত্র/ছাত্রীদের পদচারণায় গমগম করত। আনন্দ বিনোদন এর সাথে জ্ঞান অর্জনের কেন্দ্রবিন্দু (এ জনপদে) আমাদের স্কুল এন্ড কলেজ সমগ্র দেশের মত গোটা বিশ্বের শিক্ষালয়ের মত খাঁ খাঁ মানে ভয়াবহ শুন্যতা বিরাজ করছে। হলে হতে পারে এ নীরব কান্না আমরা কেউ শুনতে পারছি না। মানুষের দেখার ক্ষমতা অসীম কিন্তু শোনার ক্ষমতা সসীম। ২০ থেকে ২০,০০০ Hz আমরা শুনতে পাই।

আজ সেখানে পিনপতন নীরবতা। শহর এবং গ্রামের উভয় পরিবেশের সংমিশ্রণে আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রায় সবাই সাইকোলোজিক্যাল প্যানডেমিকে ভুগতে শুরু করেছে। তাদের মনোজগতের বৈকল্য কাটাতে অভিভাবকেরা রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। সহপাঠী বন্ধু/ বান্ধবীদের সাথে মনের ভাব বিনিময় শেয়ার করতে পারছে না। খেলায় হারজিত নেই। ছাদে উঠে দিঘীর জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ সূর্যের আলোয় ঢেউয়ের প্রতিফলিত হওয়ার দৃশ্য আর চোখে পড়ে না।

শিক্ষক, শিক্ষিকাদের আদর, স্নেহ, মায়াভরা শাসন, ধন্যবাদ জ্ঞাপন, আনন্দের সাথে M M C এ পাঠগ্রহণে অংশ নিতে না পারার বেদনা বা দীর্ঘকাল অনুপস্থিতি তাদেরকে হতাশা বা বিরক্তিতে ফেলেছে। আজ শুনতে পাচ্ছি তারা অল্পতে ক্ষেপে বা রেগে যাচ্ছে এবং অভিভাবকদের সাথে একটু অস্বাভাবিক আচরণ করছে। প্রায় ঘরে ঘরে আজ এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।

শিশুরা আজ শারীরিক ভাবে স্থুলতা বা মুটিয়ে যাচ্ছে। তাদের একঘেয়েমি কাটাতে লুডু, ক্যারাম, দাবা, কার্টুন (শিশুদের), ঘুড়ি উড়ানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। গণমাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষামুলক অনুষ্ঠান ছবি আঁকা, বিতর্ক প্রতিযোগীতা দেখানো, কুইজ বা সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা (মোবাইলে অংশগ্রহণ) ম্যাজিক জাদু প্রদর্শন, বিভিন্ন হাতের কাজের প্রশিক্ষণের সাথে বয়স বিবেচনা করে ডিজিটাল বিনোদনের আয়োজন করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। শিশু কিশোর/কিশোরী মেন্টাল উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের মুল্যবান পরামর্শ নিয়ে আরও কিভাবে তাদের ব্যস্ত রাখা যায় সরকারের প্রতি এ বিষয়ে অতি জরুরী ভিত্তিতে ভেবে চিন্তে কাজের সময় না ফুরানোর উদাক্ত আহবান জানাচ্ছি।

লেখকঃ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
০১৭১৭-৯৭৭৬৩৪, kaisardinajpur@yahoo.com