ভারত আপনাদের অপেক্ষায়!

সিল্কসিটি ডেস্ক :
ইন্ডিয়া গ্লোবাল উইক-২০২০ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণ।

সর্বস্তরের বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দকে নমস্কার। ভারতের পক্ষ থেকে আপনাদের শুভেচ্ছা। এই অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য ইন্ডিয়া আইএনসি গ্রুপকে ধন্যবাদ। আজকের এই অনুষ্ঠান বিগত কয়েক বছরে ইন্ডিয়া আইএনসির অসাধারণ কাজেরই একটা অংশ। আপনাদের অনুষ্ঠানগুলো বিশ্বব্যাপী মানুষের কাছে ভারতকে তুলে ধরার সুযোগ করে দিয়েছে।

আপনারা ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করতে সহায়তা করেছেন। আমি আনন্দিত যে, এ বছরের অনুষ্ঠানটি আমাদের অন্য অংশীদারদের কাছেও পৌঁছেছে। আবারও অভিনন্দন! আশা করি পরের বছর, আপনারাও সেন্টার কোর্টে থাকার এবং উইম্বলডন উপভোগ করার সুযোগ পাবেন।

বন্ধুগণ, এই সময়ে পুনর্জাগরণের বিষয়ে কথা বলা স্বাভাবিক। বৈশ্বিক পুনর্জাগরণ এবং তার সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততাও স্বাভাবিক। সবাই বিশ্বাস করে বৈশ্বিক পুনর্জাগরণে ভারত অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। আমি এর দু’টি কারণ দেখতে পাই। প্রথমটি হলো ভারতীয় প্রতিভা। বিশ্বব্যাপী আপনারা ভারতের মেধার অবদান দেখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ভারতীয় পেশাদার চিকিৎসক, নার্স, ব্যাংকার, আইনজীবী, বিজ্ঞানী, অধ্যাপক এবং আমাদের পরিশ্রমী কর্মীরা। ভারতীয় প্রযুক্তি শিল্প এবং প্রযুক্তি পেশাদারদেরকে ভুলতে পারে? কয়েক দশক ধরে তারা পথ দেখিয়ে চলেছে। ভারত হলো প্রতিভার পাওয়ার হাউস যেখানে সবাই অবদান রাখতে আগ্রহী এবং শেখার জন্য প্রস্তুত। এখানে যে দ্বিমুখী সমন্বয় রয়েছে তা খুবই উপকারী।

বন্ধুরা, দ্বিতীয় বিষয়টি হলো ভারতের সংস্কার ও পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষমতা। ভারতীয়রা প্রাকৃতিক সংস্কারক! ইতিহাস বলে যে, ভারত সামাজিক বা অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করেছে তার সংস্কার ও পুনরুজ্জীবনের চেতনার মাধ্যমে। এই চেতনা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

বন্ধুগণ, একদিকে ভারত একটি বৈশ্বিক মহামারির বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই করছে। জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি আমরা অর্থনীতির প্রতিও সমানভাবে গুরুত্ব আরোপ করছি। ভারতের পুনর্জাগরণের অর্থ হলো : যত্ন সহকারে পুনর্জাগরণ, সহানুভূতির সঙ্গে পুনর্জাগরণ, পরিবেশ এবং অর্থনীতি উভয়ের জন্যই টেকসই পুনর্জাগরণ। ভারতীয় সংস্কৃতিতে প্রত্যেকে প্রকৃতির উপাসনা করেন। ভারতে বিশ্বাস করা হয় যে, পৃথিবী আমাদের মা এবং আমরা তার সন্তান।

বন্ধুরা, গত ছয় বছরে ভারত মোট আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, রেকর্ড আবাসন ও অবকাঠামো নির্মাণ, ব্যবসা সহজীকরণ, জিএসটিসহ ট্যাক্স সংস্কার ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগ-আয়ুষ্মান ভারত প্রচলনের মাধ্যমে ভারত পরবর্তী পর্যায়ে উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

বন্ধুরা, ভারতীয়দের অসম্ভবকে জয় করার স্পৃহা রয়েছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে ভারতে আমরা ইতিমধ্যে ইতিবাচক সাড়া দেখতে পাচ্ছি। মহামারির এই সময়ে, আমরা আমাদের নাগরিকদের ত্রাণ সরবরাহ করেছি এবং গভীর কাঠামোগত সংস্কার করেছি। আমরা অর্থনীতিকে আরো উৎপাদনশীল, বিনিয়োগবান্ধব এবং প্রতিযোগিতামূলক করে তুলছি।

আমাদের ত্রাণ প্যাকেজটি ছিল আধুনিক যার মাধ্যমে সর্বোচ্চসংখ্যক দরিদ্র মানুষকে সাহায্য পৌঁছানো ছিল আমাদের লক্ষ্য। প্রযুক্তির কারণেই আর প্রতিটি পয়সা সরাসরি উপকারভোগীদের কাছে পৌঁছেছে।

ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে : বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নগদ অর্থ প্রদান, কয়েক কোটি মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য প্রদান এবং অন্যান্য অনেক কিছু। আমরা আনলক করার সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে কর্মসংস্থান দেওয়ার জন্য আমরা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম গণপূর্ত কর্মসূচি চালু করেছি। এটি কেবল গ্রামীণ অর্থনীতিকে পুনরায় জোরদার করবে না, গ্রামীণ অঞ্চলে টেকসই অবকাঠামো তৈরিতে সহায়তা করবে।

বন্ধুরা, ভারত বিশ্বের অন্যতম উন্মুক্ত অর্থনীতি। সমস্ত বৈশ্বিক সংস্থাকে আমরা ভারতে স্বাগত জানাই। খুব অল্পসংখ্যক দেশই ভারতের মতো এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকবে। ভারতে বিভিন্ন নতুন ও দ্রুত বর্ধনশীল খাতে অনেক সম্ভাবনা এবং সুযোগ রয়েছে। কৃষিতে আমাদের বিভিন্ন সংস্কারগুলি স্টোরেজ এবং লজিস্টিক্সে বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা বিনিয়োগকারীদের জন্য আমাদের কৃষকদের কঠোর পরিশ্রমে সরাসরি বিনিয়োগের জন্য দরজা উন্মুক্ত করেছি।

বন্ধুরা, আমরা এমএসএমই খাতে সংস্কার এনেছি। এমএসএমই (Micro, Small & Medium Enterprises) একটি ক্রমবর্ধমান খাত যা বড় শিল্পগুলোর পরিপূরক হবে। প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ নীতিমালা শিথিল করার মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সেনাবাহিনী আপনাকে এর জন্য পণ্য তৈরি করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে! এখন মহাকাশ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের আরো সুযোগ রয়েছে। এর অর্থ জনগণের সুবিধার্থে মহাকাশ প্রযুক্তির বাণিজ্যিক ব্যবহারে আরো বেশি প্রবেশাধিকার থাকবে ভারতের প্রযুক্তি এবং স্টার্ট আপ সেক্টরটি খুবই সম্ভাবনাময়। লক্ষ লক্ষ ডিজিটালি ক্ষমতায়িত ও উচ্চাভিলাষী মানুষের জন্য একটি বাজার রয়েছে! আপনারা তাদের জন্য কী ধরনের পণ্য তৈরি করতে পারেন তা নিয়ে ভাবুন।

বন্ধুরা, এই মহামারি আবারও দেখিয়েছে যে ভারতের ওষুধ শিল্প কেবল ভারতের নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি সম্পদ। বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলির ওষুধের ব্যয় হ্রাসে এটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ভারতে তৈরি টিকা দিয়ে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ বাচ্চাদের টিকা দেওয়া হয়। আজও, আমাদের সংস্থাগুলি কভিড-১৯ এর টিকা আবিষ্কার ও উৎপাদনের জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাতে সক্রিয় রয়েছে। আমি নিশ্চিত যে টিকা আবিষ্কার হওয়ার পরে এটির বিকাশ এবং উৎপাদনে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।

বন্ধুগণ, ১৩০ কোটি ভারতীয়দের একটি আত্মনির্ভর ভারত গড়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একটি আত্মনির্ভর ভারত যা দেশীয় উৎপাদন এবং বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় করবে। আত্মনির্ভর মানে আত্মকেন্দ্রীক বা বিশ্বের কাছে অবরুদ্ধ হওয়া নয় বরং এর মানে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা।

সূত্র : কালের কণ্ঠ অনলাইন

স/রা