শনিবার , ২৭ এপ্রিল ২০১৯ | ১৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

তিন দিন খাটে মৃত ছেলে, মেঝেতে পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা

Paris
এপ্রিল ২৭, ২০১৯ ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ছেলেই ছিলেন তাঁর একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু সেই ছেলের দেহ পড়ে রয়েছে বিছানার ওপরে। আর বিছানার পাশে মেঝেতে মুখ গুঁজে পড়ে আছেন মা। কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘণ্টা নয় এভাবেই তিন দিন গরমের মধ্যে ওই ভাবেই মৃত ছেলের পাশে পড়ে ছিলেন মা। তেমনটাই জানালেন তিনি। কারণ, তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত। নড়াচড়ারও ক্ষমতা নেই। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুমান, ছেলের মৃত্যুর খবর জানানোর জন্য খাট থেকে নামতে গিয়েই সম্ভবত মেঝেতে পড়ে যান ওই বৃদ্ধা।

জানা গেছে, এ ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতার বরাহনগরের শশিভূষণ নিয়োগী গার্ডেন লেনে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ওই ঘর থেকে দুর্গন্ধ পাওয়ায় শশিভূষণ নিয়োগী গার্ডেন লেনের বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ওই বাড়িতে এসে দরজা ভেঙে দেখে, খাটে পড়ে আছে মৃত ছেলে, যাঁর শরীরে পচন ধরে গিয়েছে। আর মেঝেতে মা। দুইজনের শরীরেই পিঁপড়ে, পোকামাকড় ঘুরে বেড়াচ্ছে। মৃতের নাম পার্থসারথি ঘোষ (৪৬)। তাঁর ৭১ বছরের মায়ের নাম গৌরী ঘোষ।

পরে পুলিশ পার্থসারথির দেহ উদ্ধার করে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে গৌরীদেবীকে ঘর থেকে বাইরে এনে পানি খাওয়ান বাসিন্দারা। পরে তাঁকে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নিহতের স্ত্রী রূপা ঘোষ জানান, পার্থসারথির বাবা বিভূতিনাথ ঘোষ আসানসোলে চাকরি করতেন। তিনি মারা যাওয়ার পরে গৌরীদেবী ওই চাকরি পান। নয় বছরের ছেলেকে নিয়ে কয়েক বছর ধরে অন্যত্রে থাকেন তিনি। ওই বাড়িতে থাকতেন শুধু গৌরীদেবী ও পার্থসারথি।

এলাকার বাসিন্দারা জানান, একতলা বাড়ির চার দিকের দরজাই কয়েক দিন ধরে বন্ধ ছিল। খোলা ছিল শুধু কয়েকটি জানলা। গতকাল সকাল থেকে দুর্গন্ধে ওই বাড়ির ধারেকাছে যাওয়া যাচ্ছিল না। বাসিন্দারা দরজায় বারবার ধাক্কা দিয়েছেন। জানলা থেকে ডাকাডাকিও করেছেন। কিন্তু সাড়া মেলেনি কারও। অথচ, জানলা দিয়ে পার্থসারথিকে বিছানায় পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। পুলিশ তাদের উদ্ধার করার পরে ওই বৃদ্ধা জানান, মঙ্গলবার রাতে তাঁর ছেলে মারা গিয়েছেন। তিনি প্রতিবেশীদের ডাকার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে সেই শব্দ কেউ শুনতে পাননি। গতকাল সকালেও প্রতিবেশীরা ডাকাডাকি করার সময়ে সম্ভবত উত্তর দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর কথা শোনা যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই পরিবার পাড়ায় সেভাবে মেলামেশা করত না। পার্থসারথি আগে বাড়িতেই কম্পিউটার শেখাতেন। কিন্তু পরে ছেড়ে দেন। মূলত গৌরীদেবীর পেনশনের টাকাতেই সংসার চলত।

পার্থসারথির স্ত্রী রূপা জানান, ২০০৫ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। ছেলে জন্মানোর পর থেকে দু’জনের প্রায়ই অশান্তি হত। তাই তিনি ছেলেকে নিয়ে অন্যত্রে চলে যান।

এদিকে এলাকার বাসিন্দাদের মনে একটাই প্রশ্ন: ছেলের বৃদ্ধা মা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে কে তাঁর দেখভাল করবেন?

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক