সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে ফের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভিড়ে ঠাসা বাসস্টেশনে বৃহস্পতিবার একটি গ্রেনেড বিস্ফোরণে এক ব্যক্তি নিহত ও বহু লোক আহত হয়েছেন।
একই সময়ে উত্তর ভারতে ফুটপাতে এক কাশ্মীরি খুচরা বিক্রেতাকে বেধড়ক মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে।
কাশ্মীরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সপ্তাহব্যাপী বৈরিতার মধ্যেই নতুন করে এই সহিংসতার খবর ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবেশী দেশ দুটি অখণ্ড কাশ্মীরকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করছে।- খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ভারতনিয়ন্ত্রীত কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় শহর জম্মুতে বৃহস্পতিবার স্টেশনে বাসের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন বহুলোক। শিক্ষার্থীসহ অপেক্ষমাণ লোকের ভিড়ে বাসস্টেশনটি ঠাসা ছিল। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে এক যুবক একটি গ্রেনেড ছুড়ে মারেন।
বিস্ফোরণে আহত সাতকুমার বলেন, বিশাল শব্দে কান স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমার সামনে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।
ব্যবসায়ী সাতকুমারকে আহত আরও ২৪ জনের সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আহতদের কারও কারও অবস্থা আশঙ্কাজনক।
গ্রেনেড ছুড়েই যুবকটি পালিয়ে গেছেন। তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু দিনের শেষভাগে ভারতীয় পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, সিসিটিভির ফুটেজের সহায়তায় তারা একজনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছেন।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, সন্দেহভাজন গ্রেনেড হামলাকারী ১৭ বছর বয়সী এক কাশ্মীরি। উপত্যকাটিতে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সদস্য তিনি।
পুলিশের ভাষ্য, জিজ্ঞাসাবাদের সময় যুবকটি হামলার কথা স্বীকার করেছেন।
গত মাসে এক বিচ্ছিন্নতাবাদী যুবক ভারতীয় সেনাভর্তি একটি বাস উড়িয়ে দিলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংকট তৈরি হয়।
পাকিস্তান বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে ভারত। তবে সে অভিযোগ অস্বীকার করছে ইসলামাবাদ।
কাশ্মীর নিয়ে গত কয়েক দশক ধরে পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত চলছে। তবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলো এ দুই চিরবৈরীকে সংঘাত এড়িয়ে চলতে আহ্বান জানিয়েছে।
তবে গুলি করে ভূপাতিত করা ভারতীয় বিমানের পাইলটকে পাকিস্তান ফেরত দিলে গত সপ্তাহে সংঘাত কিছুটা প্রশমিত হয়।
নির্বাচন সামনে রেখে এসব হামলার মাধ্যমে ভারতে দাঙ্গার উসকানি দেয়া হচ্ছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহপোষণ করেছেন কেউ কেউ। এ হামলার সঙ্গে নির্বাচনের সংযোগ খোঁজার চেষ্টা করেছেন তারা।
জম্মুতে হিন্দু সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু বিশাল জম্মু ও কাশ্মীরে মুসলমানদের সংখ্যাই বেশি। আর ধর্মীয় উত্তেজনা উসকে দেয়ার ইতিহাস রয়েছে জম্মুতে।
লোকজনকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে জম্মু অঞ্চলের পুলিশ কর্মকর্তা এমকে সিনহা বলেছেন, অপরাধীদের ছাড় দেয়া হবে না।
ভারত-পাকিস্তানের পরস্পরের প্রতি সতর্কতার সঙ্গে চোখ রাখছে। কাশ্মীরের বিতর্কিত সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত কামানের গোলা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে গোলার আঘাতে দুপক্ষের বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন।
উত্তর ভারতের সবচেয়ে বড় শহর লখনৌতে এক কাশ্মীরিকে পেটানোর দায়ে চার ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
পেটানোর সময় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, তুমি এখানে পণ্য বিক্রি করছে, আর সেখানে (কাশ্মীর) গিয়ে পাথর ছুড়ে মারছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, হামলাকারীরা ওই কাশ্মীরির মুখে থাপ্পড় মারে এবং কাঠের বড় লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটায়। এটি একেবারে বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়।
পুলওয়ামায় হামলার পর ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
রাজধানীর নয়াদিল্লিতে বহু কাশ্মীরিকে কোনো ধরনের অপরাধ ছাড়াই ভাড়া বাসা থেকে বের করে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।