সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
সাইকেলে ঝোলানো ব্যাগের ভেতর রয়েছে বড় কয়েকটি বাটি। সাইকেল থামিয়ে একটা হাঁক পাড়লেই ছুটে আসে লালু-ভুলু-কালুরা।
তখন ব্যাগ থেকে বাটি বের করে তাদের নিজের হাতে খাইয়ে দেন ভারতের বর্ধমানের কেন্দ্রীয় ডাকঘরের কর্মী শেখ নাসিরুদ্দিন। খাওয়া দেখতে-দেখতে তিনি বলেন, অবলাদের দু’বেলা খাওয়ানোটাই আমার নেশা।
প্রায় এক যুগ ধরে রাস্তার কুকুরদের জন্য নিয়ম করে দু’বেলা খাবার দিয়ে বেড়ান ডাকঘরের ওই কর্মী। তার সংসারে মা-স্ত্রী-ভাইয়ের সঙ্গে ঠাঁই করে নিয়েছে রাস্তার প্রায় ৮৬টি কুকুর।
নিজে সরকারি আবাসনে থাকলেও কুকুরদের খাবার রান্নার জন্য বর্ধমানের রসিকপুরে ঘর ভাড়া নিয়েছেন। সেখানে রাখা আছে পাঁউরুটি, বিস্কুট থেকে চাল-আনাজ।
নাসিরুদ্দিন জানান, প্রতিদিন ৯ কেজি চালের ভাত ও দুই কেজি পাঁঠার মাংস রান্না করা হয়। সেই খাবার মাখিয়ে বড় বড় বাটিতে ভরে শহরের বিভিন্ন মোড়ে গিয়ে কুকুরদের খাওয়াই।
দুপুরের খাবার দেয়ার আগে সকালে তিনি পৌঁছে যান রুটি-পাঁউরুটি-বিস্কুট নিয়ে। শহরের রসিকপুর, জেলখানা মোড়, কার্জন গেট সংলগ্ন গির্জা, লক্ষ্মীপুর মাঠ ও তিনকোনিয়া-স্টেশন চত্বরে প্রতিদিন সকাল-দুপুর রাস্তার কুকুরদের সঙ্গে দেখা মেলে শেখ নাসিরুদ্দিনের।
নাসিরুদ্দিনের মা আমিনা বেগম বলেন, আমাদের বাড়িতে কুকুর ছিল। তাদের নিজের হাতে খাওয়াত নাসিরুদ্দিন। সেই সময় রাস্তার কুকুরগুলো বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকত। তাতে ছেলের মন খারাপ হয়ে যেত। তখন থেকেই কুকুরদের খাওয়ানোর ঝোঁক তৈরি হয়। আমরাও কোনো আপত্তি করিনি।
কাজে যাওয়ার আগে প্রতিদিন সকাল ৬টায় কুকুরদের ‘টিফিন’ পৌঁছে দেন নাসিরুদ্দিন। দুপুর গড়ানোর আগে আবার ‘লাঞ্চ’ নিয়ে হাজির হয়ে যান।
রসিকপুরের বাসিন্দা তনুজা বেগম, সরস্বতী বিশ্বাস বলেন, কয়েক বছর আগে কুকুরদের খাওয়ানোর জন্য স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে নাসিরুদ্দিনের গোলমালও বেধেছিল। তার পরেও তিনি পিছু হঠেননি।
শহরের বাসিন্দা অঞ্জনা ধারা, নুর মুহাম্মদের কথায়, গলায় হাত ভরে মাংসের হাড় বের করা থেকে অসুস্থ কুকুরদের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া, অনেক কিছুই করেন নাসিরুদ্দিন।
নাসিরুদ্দিন বলেন, কুকুর মারা যাওয়ার পরে ঠাঁই হয় আস্তাকুঁড়ে। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় কুকুরদের যাতে সৎকার করা যায়, সেই ব্যবস্থা করার ইচ্ছে রয়েছে।
পশুপ্রেমী তথা বিধায়ক দেবশ্রী রায় বলেন, এ রকম মানুষ বিরল। তাকে সম্মানিত করা হবে।