সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
কে বলেছে বাঙালি ব্যবসা করতে পারে না? কে বলেছে বাঙালি বাণিজ্য-বিমুখ? মাংস-বিশু দেখিয়ে দিল ভাগাড় থেকেও কীরকম ব্যবসা করা যায়। ওহ্। কী বিজনেস মডেল! ভাবা যায়?
আমরা সবাই কত টন পচা মাংস খেয়েছি তা ভেবে মরছি। কিন্তু বিশ্বনাথ ঘড়ুইকে দেখুন। এ যাবৎ কালের অন্যতম সেরা বাঙালি ব্যবসায়ী। শিল্পপতি বললেও কম বলা হয় না।
ভাগাড় থেকে মরা পচে যাওয়া মাংস প্রসেস করে নিয়ে এসে, তাতে কেমিক্যাল মিশিয়ে, প্যাকিং করে হয় সরাসরি তা পাচার হয়েছে বা খাঁটি তাজা মাংসের সঙ্গে পচা মাংস মিশিয়ে তা স্টোর করে রাখা হয়েছে। পরে সেই প্যাকেজড মাংস পৌঁছে গেছে নানা বিপণিতে।
একে শিল্প বলবেন না তো কাকে বলবেন! এতদিন তো কেউ বুঝতে পারেনি। কী কুক্ষণে কয়েকজনকে বজবজের ভাগাড়ে দেখে ফেলল, বেচারা বিশুর সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ল হুড়মুড়িয়ে।
১০ বছর ধরে ধীরে ধীরে কী সুন্দর নিজের সাম্রাজ্য বানিয়েছে ভাগাড়-মাংস কাণ্ডের মূল হোতা বিশ্বনাথ। কত লোকের কর্মসংস্থান করেছে। ভাগাড় থেকে শুরু করে কোল্ড স্টোরেজ হয়ে নানা দোকান। কত লোকের পেটের ভাত এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল ভাবুন একবার।
শুধু কি এই রাজ্যে। ভুটান-টুটানেও নাকি ব্যবসা করত বিশু। মানে একবারে এক্সপোর্টের ব্যবসা। আন্তর্জাতিক মানের ব্যাপার স্যাপার।
কোথায় শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না বলে লোকে। আর মাংস-বিশু তো মাছ দিয়ে পচা মাংসই ঢেকে দিল। ছিল নাকি মাছের ব্যবসা। আর আড়ালে চলত ভাগাড় কাণ্ড।
সেই টাকা দিয়েই তো চার-পাঁচটি বাড়ি। বাবার হাত ধরে মাছের ব্যবসায় এসে, সেই ব্যবসা কোথায় নিয়ে গেল ছেলে।
পাড়াপড়শি তো ছেড়েই দিন, পুলিশ প্রশাসন, নেতা মন্ত্রী, কাউকে কিচ্ছুটি বুঝতে দিল না বিশ্বনাথবাবু!
আপনিও কি বুঝতেন এত দিন ধরে? কীসের মাংস খাচ্ছেন তা নিয়ে কোনও দিন চিন্তা করেছেন? ২০ টাকার বিরিয়ানি, ১০ টাকার মাটন রোল, ১৫ টাকার মাংস-ভাত কি না খেয়েছেন। কখনও তো ১০০ টাকার মাংস-ভাতও নিশ্চিতে উদরস্থ করেছেন খাঁটি পাঁঠা ভেবে। অথবা দামি বিপণি থেকে স্টেটাস সিম্বল আঁকা ফ্রোজেন মাংস কিনেছেন বিনা দ্বিধায়।
দ্বিধা আর রাখবেন না। এতদিন যখন এই ‘পচা মাংস’ খেয়ে মরে যাননি, তাহলে এখন আর নতুন করে কী হবে বলুন। তার থেকে বরং মাংস-বিশুর সমাজ সংস্কারক অবতারকে স্বাগত জানান।
সমাজ সংস্কারই বটে! যে আপনি এতদিন বলে এসেছিলেন মুরগি বা পাঁঠার মাংস ছাড়া অন্য কোনও প্রাণীর মাংস খাননি কখনও, সেই আপনাকে মাংস-বিশু কীসের না কীসের মাংস খাইয়ে ছাড়ল!
কুকুর, বিড়াল, মরা পাখি, হয়তো বা মরা শুয়োর বা গরুও খাইয়ে ছেড়েছে সে। এই যে জাতপাত ভুলিয়ে দিয়ে সর্বধর্ম-জাতের সমন্বয়ের এত বড় দৃষ্টান্ত তৈরি করল বিশ্বনাথ, তাকেও তো বাহবা দিতেই হবে।
আবার দেখুন, ধরা পড়ে গিয়ে বিশু কতটা সচেতন করে দিয়ে গেল আমাদের। এখন তো রাস্তার বিরিয়ানি ছেড়ে দিন, মায় স্যান্ডউইচেও মাংস দিতে না করছি আমরা। ফিরে গেছি সেই পাড়ার কালিদার দোকানে। মাংস কিনতে। চোখের সামনে মুরগি বা পাঁঠা কাটিয়ে তবে কিনছি মাংস।
মাংস-বিশুর কাণ্ড জেনেই না দাবি তুলছি, আসুন, খাঁটি মাংস চাটি। সমাজ সচেতনতার কাজও তো করে দিয়ে গেল সেই বিশুই।
(প্রতিবেদনটির অন্তর্নিহিত হতাশা বুঝে সচেতন হোন। ভেজাল ছাড়ুন। খাঁটি হোন। নিজে এবং খাবারের ক্ষেত্রেও) । সূত্র: এবেলা