ভুল স্বীকার করলেন শিক্ষামন্ত্রী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

প্রথম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের বর্ণমালা পরিচিতি অংশে ‘ও’ বর্ণ চেনাতে ‘ওড়না’রব্যবহার নিয়ে বিতর্ক ওঠায় বিষয়টি নজরে আসে সরকারসহ সব মহলের। তবে এই বিষয়টি আমলেই নেননি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেছেন, পরবর্তী সময়ে জানাবেন। অথচ এই বিষয়টি ধরেই পাঠ্যপুস্তকের ভুলের তথ্য উঠে আসে মিডিয়ায়।

 

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) ভুলত্রুটি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দু’টি বড় ভুল হয়েছে উল্লেখ করে তিনটি ভুলকে প্রাধান্য দিলেও ‘ওড়না’ বিতর্ক এড়িয়ে যান শিক্ষামন্ত্রী। পুরো সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিষয়টির উল্লেখ না করায় গণমাধ্যমকর্মীরা বিষয়টির প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাতেও স্পষ্ট কোনও ব্যাখ্যায় যাননি শিক্ষামন্ত্রী।

 

সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে  শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো নিয়ে নানা মত থাকতে পারে। আমরা সব মতকেই ওয়েলকাম করি। আমরা নানাভাবে অভিমত নেই, সবকিছু বিবেচনা করে আমাদের যারা শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, দেশ, জাতি, মূল্যবোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ—সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমাদের এগুলো করতে হয়। তাতে এদিক-ওদিক হতে পারে সমালোচনা থাকতে পারে। আমার সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে নতুন কমিটি করে দিয়েছি। এ বিষয়ে আমরা পরবর্তী সময়ে জানাব।’

 

সংবাদ সম্মেলনে দু’টি বড় ভুলের কথা স্বীকার করে ভুলত্রুটি নিয়ে গণমাধ্যমে যেন এত বেশি প্রচার না হয়, তার অনুরোধ জানানো হয়।

 

যে দু’টি বড় ভুলের কথা শিক্ষামন্ত্রী স্বীকার করেছেন, সে দু’টি ভুলের মধ্যে একটি কুসুমকুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’ পদ্যের ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’-এর স্থলে ‘আমাদের দেশে কবে সেই ছেলে হবে’ মুদ্রণ, অন্যটি তৃতীয় শ্রেণির ধর্ম বইয়ের পেছনে লেখা (Do not heart anybody)। এই লেখাটিতে Hurt (আঘাত)-এর জায়গায়  heart (হৃদয়) ছাপানো হয়েছে।

 

এ দুটি ভুলের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ চোখেই প্রমানিত হলো, এ দু’টি বড় ভুল। এ দু’টি ভুল হওয়া উচিত ছিল না।’ যারা এ কাজটি করেছেন, তারা রেহায় পাওয়ার যোগ্য নন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

তবে, বর্ণমালা চেনাতে অ-তে অজ লিখে ছাগলকে গাছের গোড়ায় পা রেখে আম খাওয়ানোর বিষয়টিকে বড় ভুল বলতে নারাজ শিক্ষামন্ত্রী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথম শ্রেণির আমার বই। এই বইয়ের সাত পৃষ্ঠায় একটি একটি ভুল আছে। এখানে একটি ছাগলের আম খাওয়ার চেষ্টা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলো অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।’

 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবি ছড়ানো রয়েছে, তা দেখিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ছবি এঁকে দেখানো হচ্ছে ছাগল গাছের মধ্যে উঠে আম খাচ্ছে। অনেকে এটা ছেপেছেন। কিন্তু এই ধরনের পৃষ্ঠা এ বইয়ে নেই। যা প্রচার করা হচ্ছে।’

 

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রথম শ্রেণির ‘আমার বইয়ের’ সাত নম্বর পাতায় একটি ছবি আছে। আপনার দেখেছেন, আমাদের দেশে অনেক বড় গাছ আছে শোয়া অবস্থায় গিয়ে আবার এক জায়গায় উঠছে। সে রকম একটি গাছে একটি ছাগল পা তুলে দিয়ে আম খাওয়ার চেষ্টা করছে। ছাগল গাছে ওঠেনি। মাটি থেকে চেষ্টা করছে গাছের গোড়ায়। এখানে একটি ছাগল দুই পা তুলে আম খাওয়ার চেষ্টা করছে। এটি স্বাভাবিক। তারপরও আমরা দেখব, এটি দেওয়া ঠিক হয়েছে কিনা।’’

 

হেফাজতের দাবিতে নয়

পাঠ্যবইয়ের বেশ কিছু কনটেন্টে পরিবর্তন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল হেফাজত যে ১৭টি দাবি করেছিল তা পুরণ হয়েছে। সেই কৃতিত্ব তারা নিচ্ছে। তাহলে তাদের দাবি পূরণে কারিকুলাম সংশোধন করা হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে  শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এখানে কারও আন্দোলনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। আমরা সবার অভিমত নিয়েছি। হেফাজতও অভিমত দিতে পারে, আপনিও  দিতে পারেন। আমিও অভিমত দিতে পারি। এসব অভিমত থেকে বিষেশজ্ঞরা কারিকুলাম ও পাঠ্যবই করেন। মৌলিক বিষয়গুলো আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে রাখি। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির ভূমিকা, শহীদদের ভুমিকা ও গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক লড়াই, ধর্মীয় চেতনা—সবকিছু নিয়েই  কাজটি করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘হেফজতের কথায় পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করিনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বই করা হয়েছে।’

 

 

সূত্রঃবাংলা ট্রিবিউন