এক চিকিৎসক পরিবার নিয়েই নিখোঁজ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

শিশু চিকিৎসক খন্দকার রোকনুদ্দীন (৫০) তার স্ত্রী নাইমা আক্তার (৪৫), দুই মেয়ে রেজওয়ানা রোকন (২৩) ও রামিতা রোকন (১৫), জামাতা সাদ কায়েসকে (৩০) নিয়ে সিরিয়া হয়ে আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে পরিবারের ধারণা।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক রোকনুদ্দীন খিলগাঁও চৌধুরী পাড়ায় থাকতেন। তার স্ত্রী নাইমা ঢাকার বাইরের একটি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ছিলেন।

রামপুরা থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান  বলেন, “গত বছরের ১০ই অক্টোবর তারা দেশ ছেড়ে চলে যায়। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে আমরা ধারণা করছি, তারা সিরিয়া চলে গেছে।”

সিরিয়া ও ইরাকের একটি অংশজুড়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে কাজ করছে ইসলামিক স্টেট (আইএস), বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলায় যে সংগঠনটির নাম আসছে।

সম্প্রতি গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলাকারী হিসেবে ঘরছাড়া অন্তত পাঁচ তরুণ-যুবকের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে নিখোঁজ আরও ১০ যুবকের তথ্য জানানো হয়।

এরপর আরও নিখোঁজ আরও সাতজনের তথ্য আসে, যাদের পাঁচজনই ডা. রোকনুদ্দীনের পরিবারের সদস্য। অন্য দুজন হলেন তাওসীফ হোসেন এবং সেজাদ রউফ ওরফে অর্ক ওরফে মরক্কো।

ওই তথ্য পেয়ে চৌধুরীপাড়ায় গিয়ে জানা যায়, একটি পাঁচতলা ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকতেন রোকনুদ্দীন। বাড়িটি তার শ্বশুর খ্যাতিমান হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক প্রয়াত আলী আহমেদের।

ওই বাড়ির দেখভালকারী হেলাল উদ্দিন বলেন, চার বছর আগে মৃত্যুর আগে আলী আহমেদ তার দুই মেয়েকে বাড়িটি দিয়ে গিয়েছিলেন। তার একজন রোকনুদ্দীনের স্ত্রী নাইমা।

রোকনুদ্দীনের গাড়িচালক হিসেবে আট বছর কাজ করেছিলেন জানিয়ে হেলাল বলেন, “প্রায় এক বছর আগে থেকে তাদের (রোকনুদ্দীনের পরিবার) কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।

“প্রথমে তারা মালয়েশিয়া যাবে, এরপর অন্য কোনো মুসলিম দেশে যাওয়ার কথা বলেছিল। এরপর থেকে আর কিছু জানি না।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেওয়া তালিকায় সাদ কায়েসকে ডা. রোকনুদ্দীনের ছেলে দেখানো হলেও হেলাল জানান, সাদ রিজওয়ানার স্বামী।

পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তাফিজ বলেন, “রোকনুদ্দীনের বড় মেয়ে রেজওয়ানা ও তার স্বামী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত, তবে শেষ করেনি। ছোট মেয়ে রামিতা পড়ত ভিকারুনিসানূন স্কুল ও কলেজে।”

গুলশান ও শোলাকিয়ায় নিহত দুই হামলাকারী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তাদের মদদ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্যকে। নিখোঁজদের মধ্যেও বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী রয়েছেন।

হেলাল জানান, নাইমা পরহেজগার ছিলেন। তবে তার দুই মেয়ে কয়েক বছর আগে থেকে হিজাব পরা শুরু করেছিলেন।

পাঁচ তলা ভবনটি ভাগাভাগি করে নেন নাইমা ও তার বোন হালিমা। নিচতলার আলী আহমেদ ফার্মেসিতে রোগীও দেখেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হালিমা।

তবে হালিমা ওই এলাকায় থাকলেও পৈত্রিক সূত্রে পাওয়ার ওই বাড়িতে থাকেন না বলে হেলাল জানান। ‘অনুমতি নেই’ জানিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকতেও দিতে চাননি তিনি।

পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তাফিজ বলেন, “দেশ ছাড়ার পর পরিবারকে ফোন করে তারা (রোকনুদ্দীন) বলেছিল, আমরা একটি মুসলিম দেশে আছি, ভালো আছি। আমরা আর কোনোদিন বাংলাদেশে ফিরব না। তোমরা আমাদের যা আছে তা ভাগ-বাটোয়ারা করে বুঝে নাও।”

নাইমা সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যশোর সরকারি এম এম কলেজে শিক্ষকতা করছিলেন। ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই ফ্রাস, জার্মানি ও মালয়েশিয়া যাবেন বলে ৪৬ দিনের ছুটি নিয়েছিলেন।

ছুটি শেষে হলেও নাইমা কর্মক্ষেত্রে আর যোগ দেননি বলে জানিয়েছেন কলেজটির অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, “বিষয়টি সেসময়কার প্রন্সিপাল নমিতা রানি বিশ্বাস শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলেন।”

নিখোঁজ তরুণ-যুবকদের তথ্য কিছু দিন ধরে মিললেও পুরো পরিবার ধরে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম জানা গেল।

তবে গত বছর যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশি ১১ সদস্যের একটি পরিবার ঢাকা থেকে ফেরার পথে উধাও হয়ে যায়। তারা সিরিয়ায় আইএসের সঙ্গে ভিড়েছে বলে পরে তাদের স্বজনরা জানান।

সূত্র: বিডিনিউজ