নেপালে বিমান দুর্ঘটনা: পরিবার জানত না মিতু নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরেছিলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় রাজশাহীর নিহতদের মধ্যে বিলকিস বিলকিস আরা মিতু নামের নিহত নারীর বাসা রাজশাহীতে। তিনি রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া এলাকার বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়ার মেয়ে। গোলাম কিবরিয়া বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত নায়েক সুবেদার। তাঁর মেয়ে বিলকিস আরা মিতু নিউইয়র্ক প্রবাসী ছিলেন। সেখান থেকে ঢাকায় এসে তিনি নেপাল ভ্রমনে গিয়েছিলেন; কিন্তু নেপাল ভ্রমন আর করা আর হয়নি তাঁর। গত সোমবার মর্মান্তিক ওই বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ৫০ জনের মধ্যে মিতুও আছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে খবর পেয়ে গতকাল বুধবার সকালেই মেয়ের লাশের সন্ধানে ঢাকায় রওনা দেন মিতুর বাবা গোলাম কিবরিয়াসহ তাঁর মা মনোয়ারা বেগম।

জানতে চাইলে মিতুর বাবা গোলাম কিবরিয়া জানান, মিতু গতকাল বুধবার নিউয়র্ক থেকে সকাল সাতটার ফ্লাইটে ঢাকা বিমানন্দরে নামার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই গত মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় আমরা খবর পাই সে নেপালে দুর্ঘটনা কবলিত বিমানে নিহত হয়েছেন। সে কিভাবে নেপালে গেল, কবে ঢাকায় এলো-তা বুঝে উঠতে পারছি না।’

তিনি আরও জানার গেছে, মিতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউআইটিএস থেকে এমবিএ করেন। এরপর নিউইয়র্কে যান। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমার্তন অনুষ্ঠিত হবে ১৭ মার্চ। সেই সমাবর্তনে যোগ দিতে তিনি নিউইয়র্ক থেকে গতকাল সকালে দেশে ফেরার কথা ছিল।

এদিকে জানা গেছে, বিলকিস আরা মিতুর ২০০৯ সালে রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকার ইমরান হোসেন ডন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। ডনের সঙ্গে চার বছর সংসার করার পরে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় ২০১৩ সালে। এরপর মিতু ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় গিয়ে নিউইর্য়ক প্রবাসী এক বিবাহিত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন মিতু। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই মিতু নিউইয়র্কে পাড়ি জমান।

ওই সূত্রটি আরও দাবি করেছে, নিউইয়র্কে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশী আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন মিতু। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই পরিবারের কাছে তথ্য গোপন করে গত কয়েকদিন আগে ঢাকায় ফিরেন তিনি। এরপর ওই যুবকের সঙ্গে ইউএস বাংলার বিমানে সোমবার দুপুরে নেপাল ভ্রমনে যান তিনি। কিন্তু নেপাল ভ্রমন আর করা হয়নি তাঁর। মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় ৫০ জনের মধ্যে প্রাণ হারান মিতুও।

প্রসঙ্গত, সোমবারের ওই বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে মিতুসহ সবমিলিয়ে ৬ জনের বাড়ি রাজশাহীতে বলে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে। যাঁদের মধ্যে চারজনই হলেন নারী। রাজশাহীর নিহত অপর ৪ জন হলেন, নগরীর শিরোইল এলাকার বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত যুগ্নসচিব হাসান ইমাম এবং তাঁর স্ত্রী এবং নাটোরের লালপুর কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হুরুন নাহার বিলকিস বানু, নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা ও বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী এবং রাজশাহী মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আক্তার বেগম এবং নগরীর মোন্নাফের মোড় এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল হাসান। তিনি ঢাকায় একটি সফটওয়্যার কম্পানীতে কর্মরত ছিলেন।

ওই ঘটনায় আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন রাকিবুল হাসানের স্ত্রী এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ইমরানা কবির হাসি। তাঁরা দুজনেই রুয়েটের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স/আর