৮ বছর পর লাশ হয়ে দেশে ফিরলেন মা!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

‘আমাকে অবুঝ ফেলে রেখে মা হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজ করেও মায়ের সন্ধান পাচ্ছিলাম না। আট বছর পর লাশ হয়ে দেশে ফিরলেন মা। সীমান্তরেখা ভুলে দৌড়ে গিয়ে মায়ের কফিনের ওপর লুটিয়ে পড়ে অনেক কেঁদেছি।’

শনিবার সন্ধ্যায় আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তে মায়ের কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে এ কথা বলেন ছেলে আমিনুল ইসলাম তালুকদার (১৬)।

তিনি জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন তাজু বেগম। অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন আট বছর আগে। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় দেশে ফিরে এলেন ঠিকই, তবে জীবিত নয়; এলেন কফিনে মোড়া লাশ হয়ে! আগরতলা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩ সেপ্টেম্বর রাতে মৃত্যুবরণ করেন তাজু বেগম। তিনি মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুরের চরজাঙ্গালিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুস তালুকদারের স্ত্রী।

ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে নিহত তাজু বেগমের ছেলে আমিনুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘মায়ের হায়াত নেই। কিন্তু লাশটি ফিরে পেয়েছি, তাতেই আমরা খুশি।’

শনিবার আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দর সীমান্ত পথে তাজু বেগমের লাশ গ্রহণ করেন তার স্বজনরা।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আমিনুলদের অভাব আর অনটনের সংসার। আমিনুলের বাবা আবদুল কুদ্দুস তালুকদার একাধিক বিয়ে করেন। তার মা ছিলেন পরিবারের ছোট বউ। অভারে সংসারে টানাপড়েনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তাজু বেগম। একসময় হয়ে পড়েন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন।

২০১০ সালে ছোট্ট আমিনুলকে বাড়িতে ফেলে অজানার উদ্দেশে হারিয়ে যায় তার মা। একপর্যায়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত পথে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে চলে যায় মানসিক ভারসাম্যহীন তাজু বেগম। কিন্তু ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর রাজ্যের বিশ্রামগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক করে। সেই থেকে কারাগারে থাকাবস্থায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

কারা কর্তৃপক্ষ তাকে রাজ্যের আগরতলা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসার পর তার শারীরিক ও মানসিক স্বাভাবিকতা মোটামুটিভাবে ফিরে আসে। একসময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি তার নাম-পরিচয় জানান।

পরে চিকিৎসাধীন মানসিক হাসপাতালে ৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাজু বেগম মারা যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশ সহকারী হাইকশিনার মোহাম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেনকে অবহিত করেন। পরে হাইকমিশনের উদ্যোগে তাজু বেগমের পরিচয় উদ্ঘাটনে দুই দেশের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ শুরু করা হয়।

পরে তাজু বেগমের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হন যে, নিহত তাজু বেগম মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুরের চরজাঙ্গালিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুস তালুকদারের স্ত্রী। পরে নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে শনিবার সন্ধ্যায় আখাউড়া-আগরতলা সীমান্ত পথে পরিবারের স্বজনদের কাছে তাজু বেগমের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

মরদেহ গ্রহণ করেন নিহত তাজু বেগমের একমাত্র ছেলে আমিনুল ইসলাম।

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি মো. ইকবাল হোসেন, রাজ্যের আগরতলা বিমানবন্দর থানার এসআই অশোক বিষ্ণু, এসআই মাধবী এবং আখাউড়া থানার এসআই মো. দেলোয়ার হোসেন, আখাউড়া স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা এসআই পিয়ার হোসেন, চেকপোস্ট ক্যাম্প কমান্ডার মো. মুখলেছুর রহমান, আখাউড়া উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি মহিউদ্দিন মিশু প্রমুখ।